দোয়ারাবাজার প্রতিনিধি
জুন ০২, ২০২১
১০:০১ অপরাহ্ন
আপডেট : জুন ০৩, ২০২১
০৩:১৮ পূর্বাহ্ন
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে যৌতুকের তাড়নায় স্বামীর অত্যাচারে এখন ঘরছাড়া শারমিন নামের এক নারী। এক বছরের শিশুকন্যাকে নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও সংসারে ফিরতে পারছেন না তিনি।
জানা গেছে, শারমিন উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের পেকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সিরাজ মিয়ার কনিষ্ঠ কন্যা। স্বামীর দাবিকৃত যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় শিশুকন্যাকে নিয়ে ঘর ছাড়তে হয়েছে তাকে। অবশেষে সংসার ফিরে পেতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন শারমিন আক্তার।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে পারিবারিক সিদ্ধান্তে শারমিনের বিয়ে হয় একই উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলীর ছেলে আল আমিনের সঙ্গে। তাদের প্রায় তিন বছরের দাম্পত্য জীবনে ফুটফুটে এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। শিশুটির বয়স বর্তমানে ১ বছর। দাম্পত্য জীবনের শুরুতে আল আমিনের সংসারে অভাব-অনটন থাকায় শারমিন ব্যবসার জন্য তার বাবার বাড়ি থেকে ৫০ হাজার টাকা এনে স্বামীকে দেন। বিয়ের পর প্রথম বছর দাম্পত্য জীবন ভালো চললেও পরের দুই বছর যৌতুকের দাবিতে স্বামীর অত্যাচার ও নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন শারমিন।
এরপর দিন যত যেতে থাকে যৌতুকের দাবিতে শারমিনের ওপর বাড়তে থাকে অত্যাচারের মাত্রা। একপর্যায়ে স্বামী স্থানীয় মহব্বতপুর বাজারে তার ব্যবসাকে আরও সম্প্রসারণ করার জন্য শ্বশুরবাড়ি থেকে আরও তিন লাখ টাকা এনে দেওয়ার জন্য স্ত্রীর ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। এই টাকা দিতে অক্ষমতা প্রকাশ করায় শারমিনের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন আরও বেড়ে যায়। সম্প্রতি স্বামী প্রকাশ্যে হুমকি দেন, তিন লাখ টাকা এনে না দিলে শারমিনকে আর সংসারে রাখবেন না তিনি। শুধু তাই নয়, শারমিনকে বেধড়ক মারধর করতে থাকেন স্বামী আল আমিন।
স্বামীর অত্যাচার সইতে না পেরে একসময় প্রতিবেশীর বাড়িতে আশ্রয় নেন শারমিন। যৌতুকের দাবিতে স্বামীর অত্যাচার-নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেতে পাড়া-প্রতিবেশীর দ্বারস্থ হলে স্বামী আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। সামাজিক বিচার-সালিশে যৌতুক ছাড়া শারমিনকে আবারও স্বামীর সংসারে নিয়ে যেতে চাপ দেওয়া হলেও স্বামী ও তার পরিবারের লোকজন শারমিনকে সংসারে ফিরিয়ে নিতে অস্বীকৃতি জানায়।
এরপর থেকে গত প্রায় এক মাস যাবৎ বাবার বাড়িতে অবস্থান করছেন শারমিন আক্তার। অন্যদিকে তার যৌতুকলোভী স্বামী মিজান মিয়া নামের জনৈক ব্যবসায়িক অংশীদারকে দিয়ে শারমিনের বৃদ্ধ পিতা সিরাজ মিয়াসহ আত্মীয়-স্বজনকে জড়িয়ে আদালতে একটি হয়রানিমূলক লুটপাটের মামলা দায়ের করেছেন। বর্তমানে বাবার বাড়িতে একমাত্র শিশুকন্যাকে নিয়ে কেঁদে কেঁদে শারমিনের দিনরাত কাটছে।
কথা বলতে চাইলে শারমিন আক্তার কান্নায় ভেঙে পড়ে সিলেট মিররকে বলেন, আমার একটি কন্যাশিশু আছে। আমি বিয়ের পর থেকেই স্বামীর সংসার করতে চেয়েছি। কিন্তু যৌতুকলোভী স্বামী ও তার পরিবারের লোকজনের অত্যাচারে সংসার ছেড়ে বাবার বাড়িতে আসতে বাধ্য হয়েছি। স্বামী তার ব্যবসায়িক পার্টনারকে দিয়ে আমার বাবা, ভগ্নীপতি ও তার ছোট ভাইকে জড়িয়ে লুটপাটের সাজানো মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। আমি স্বামীর সংসারে ফিরতে চাই এবং অত্যাচার-নির্যাতন থেকে বাঁচতে চাই।
এইচএইচ/আরআর-০৩