যাদুকাটায় ফিরেছে প্রাণ, ফের কর্মমুখর শ্রমিকরা

আবির হাসান মানিক, তাহিরপুর


জুন ১৭, ২০২১
০২:৫৫ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুন ১৭, ২০২১
০২:৫৯ পূর্বাহ্ন



যাদুকাটায় ফিরেছে প্রাণ, ফের কর্মমুখর শ্রমিকরা

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী যাদুকাটাকে বলা হয়ে থাকে সম্পদ ও সমৃদ্ধের নদী। যুগ যুগ ধরে এ যাদুকাটাকে ঘিরে হাজারও শ্রমজীবী পরিবার খোঁজে নিয়েছে নিজেদের একমাত্র কর্মসংস্থান। গত এক বছরেরও অধিক সময় ধরে বালু-পাথর উত্তোলন করা নিয়ে আইনি জটিলতা ও উচ্চ আদালতে মামলাজনিত কারণে ইজারা বন্দোবস্ত না হওয়ায় কাজ হারিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়ে হাজারও শ্রমজীবী পরিবার। পাশাপাশি বিপাকে পড়েন এ অঞ্চলের বালু-পাথর ব্যবসায়ীরা।

গত ৮ জুন সুপ্রিমকোর্ট যাদুকাটা নদীর বালিমহালের ইজারা বৈধ ঘোষণা করেন। রায় শুনে যাদুকাটার শ্রমজীবী মানুষ, ব্যবসায়ীসহ এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি নেমে আসে। সম্প্রতি সুনাগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. জসিম উদ্দিন ও তাহিরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবির সরেজমিনে গিয়ে যাদুকাটা নদী থেকে বালু উত্তোলনের সীমানা নির্ধারণ করে তা ইজারাদারদের বুঝিয়ে দেন।

শ্রমিকদের সর্দার উপজেলার ঘাগড়া গ্রামের হাকিকুল মিয়া বলেন, দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে নদীতে কাজ বন্ধ থাকায় হাজারও শ্রমজীবী পরিবার, ব্যবসায়ীরা ধার-দেনা করে সংসার চালাতে হচ্ছে। নদীতে কাজ শুরু হবে এ খবর শুনে এখানকার প্রতিটি ঘরে যেন স্বস্তি নেমে এসেছে।

শ্রমিক জসিম উদ্দিন বলেন, এতদিন সংসার চালাতে হয়েছে ঋণ আর সুদে টাকা নিয়ে। এখন নদীতে কাজ করতে পারব এটা ভেবে নতুন করে বেঁচে থাকার সাহস পাচ্ছি।

লাউড়েরগড় এলাকার বালু-পাথর ব্যবসায়ী রহিছ মিয়া বলেন, গত এক বছর নদীতে কাজ বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীদের পথে বসার উপক্রম হয়েছিল। কেউ কেউ লোকসান গুনতে গুনতে আজ অনেকটাই সর্বশান্ত। নদীতে কাজ শুরু হওয়ায় ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পেয়েছেন।

জানা গেছে, চলতি বছরের ২৩ মার্চ সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক ইজারা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে মেসার্স নিলম এন্টারপ্রাইজ ও আজাদ হোসেন এন্টারপ্রাইজ প্রায় দশ কোটি (ভ্যাট ও ট্যাক্সসহ) টাকায় ইজারাপ্রাপ্ত হয়। ইজারাপ্রাপ্ত হওয়ার পর নিয়ম অনুসারে সরকারি কোষাগারে ইজারামূল্য পরিশোধ করলেও অপর একটি পক্ষ হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করলে শুনানি শেষে জেলা প্রশাসনের দেওয়া ইজারা বন্দোবস্ত এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়। পরে ইজারাদারগণ স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করে এ অঞ্চলের হাজারও শ্রমজীবী পরিবারের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার দাবি জানান। এর প্রেক্ষিতে সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত পাঁচ সদস্যের একটি পুর্নাঙ্গ বেঞ্চ আবেদন শুনানির দিন ধার্য করেন গত ৮ জুন। সেদিন উভয়পক্ষের যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের পর শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের দেওয়া ইজারা বন্দোবস্ত বৈধ বলে ঘোষণা করেন।

এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সপ্তাহখানেক আগে ইজারাদারদের যাদুকাটা নদীতে বালু উত্তোলনের সীমানা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। আজ আমি সরেজমিনে যাদুকাটা নদীতে এসে দেখলাম এখানকার হাজারও শ্রমিক নদী থেকে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছেন। এসব শ্রমিক দীর্ঘদিন বেকার ছিলেন। শ্রমিকদের কর্মচাঞ্চল্য দেখে খুবই ভালো লাগছে।


এএইচ/আরআর-১১