ধর্মপাশা প্রতিনিধি
জুন ২৭, ২০২১
১২:৫৫ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জুন ২৭, ২০২১
১২:৫৫ পূর্বাহ্ন
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সদর ইউনিয়নের কান্দাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বিদ্যুৎ গ্রাহক সিরাজ তালুকদারকে (৫৫) ৬ মাসের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে বলায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ধর্মপাশা অভিযোগ কেন্দ্রের লাইনম্যান বোরহান উদ্দিনকে (২৬) কিল-ঘুষি মেরে আহত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া আহত ওই ব্যক্তিসহ লাইনম্যান ছাবির মিয়াকে (২৫) উপজেলার কান্দাপাড়া পশ্চিম বাজারের একটি ওষুধের দোকানে ১ ঘণ্টাব্যাপী অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের কান্দাপাড়া গ্রামের সিরাজ তালুকদার (৫৫) নামের এক বিদ্যুৎ গ্রাহক শনিবার (২৬ জুন) বেলা পৌনে ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। খবর পেয়ে বেলা পৌনে ৪টার দিকে অবরুদ্ধ থাকা পল্লী বিদ্যুতের ওই দুই লাইনম্যানকে উদ্ধার করেছে ধর্মপাশা থানার পুলিশ।
নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অধীনে থাকা ধর্মপাশা অভিযোগ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, ধর্মপাশা উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অধীনে রয়েছে। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ধর্মপাশা অভিযোগ কেন্দ্রের লাইনম্যান বোরহান উদ্দিন ও ছাবির মিয়া বিদ্যুতের বকেয়া বিল আদায়ের জন্য উপজেলার কান্দাপাড়া পূর্ববাজারে যান। খবর পেয়ে গ্রাহকরা সেখানে এসে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে থাকেন। বেলা আড়াইটার দিকে সেখানে আসেন বিদ্যুৎ গ্রাহক উপজেলার কান্দাপাড়া গ্রামের সিরাজ তালুকদার। তার কাছে বিদ্যুৎ বিভাগের ৬ মাসের বকেয়া বিল পাওনা রয়েছে। এ সময় বকেয়া বিল পরিশোধ করার জন্য তার সঙ্গে কথা বলেন লাইনম্যান বোরহান। কিন্তু বকেয়া বিল পরিশোধ করতে তিনি অপারাগতা প্রকাশ করেন।
বকেয়া টাকা পরিশোধ না করা হলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে বলে তাকে জানানো হয়। পরে সিরাজ তালুকদারের উপস্থিতিতে বেলা পৌনে ৩টার দিকে তার ঘরের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলে ক্ষিপ্ত হয়ে বোরহান উদ্দিনকে কিল-ঘুষি মারতে শুরু করেন তিনি। এ সময় সহকর্মী ছাবির মিয়া বাধা দিলে রক্ষা পান বোরহান। পরে সিরাজ তাদের দুজনকে তাড়া করলে ওই দুইজন কান্দাপাড়া বাজারের একটি ওষুধের দোকানে গিয়ে আশ্রয় নেন। সিরাজ তালুকদার ও তার ৭/৮ জন সঙ্গী ওই ওষুধের দোকানের চারদিকে অবস্থান নেন এবং বের হলেই ওই দুই লাইনম্যানকে মারধর করা হবে বলে হুমকি দেন।
দুই লাইনম্যানের অবরুদ্ধ থাকা ও মারধরের শিকার হওয়ার খবরটি মুঠোফোনে জানতে পেরে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ধর্মপাশা অভিযোগ কেন্দ্রের ইনচার্জ ঘটনাটি ধর্মপাশা থানার ওসি মো. খালেদ চৌধুরীকে জানান। ওসির নির্দেশে থানার এসআই মাসুদুর রহমান একদল পুলিশ নিয়ে কান্দাপাড়া বাজারের ওই ওষুধের দোকান থেকে দুই লাইনম্যানকে উদ্ধার করে ধর্মপাশায় নিয়ে আসেন। পুলিশ আসছে এমন খবর পেয়ে ওষুধের দোকানের আশপাশে সিরাজ তালুকদার ও তার লোকজন দ্রুত সটকে পড়েন।
আহত লাইনম্যান বোরহান উদ্দিন বলেন, ৬ মাসের বকেয়া বিলের পরিশোধের কথা বলায় সিরাজ তালকুদার আমাকে কিল-ঘুষি মেরেছেন। আমাকে ও লাইনম্যান ছাবির মিয়াকেকে একটি ওষুধের দোকানের ভেতরে তিনি ও তার লোকজন এক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন। হুমকি-ধমকি দিয়ে ভয়ভীতিও দেখিয়েছেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে আমাদের দুজনকে উদ্ধার করেছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি।
তবে সিরাজ তালুকদার তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন, আমার অনুমতি না নিয়ে আমার ঘরের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করাসহ আমার ঘরের মিটার খুলে নেওয়া হয়েছে। আমি ৬ মাসের বিদ্যুৎ বিল আগামীকাল (রবিবার) পরিশোধ করে দেওয়ার কথা বললেও তারা আমার কথা শোনেনি। আমি ও আমার লোকজন পল্লী বিদ্যুতের লাইনম্যানকে মারধর ও অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগটি সঠিক নয়।
নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অধীনে থাকা ধর্মপাশা অভিযোগ কেন্দ্রের এজিএম হাফিজুর রহমান বলেন, ঘটনাটি আমি আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ধর্মপাশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালেদ চৌধুরী বলেন, পল্লী বিদ্যুতের দুইজন লাইনম্যান অবরুদ্ধ রয়েছেন এবং একজন মারধরের শিকার হয়েছেন এমন খবর পেয়ে আমরা সেখানে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। তবে ওই দুই লাইনম্যানকে অবরুদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়নি। তারা একটি ওষুধের দোকানের ভেতরে বসা ছিলেন। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসএ/আরআর-০৯