নবীগঞ্জে নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা

নবীগঞ্জ প্রতিনিধি


জুলাই ০৫, ২০২১
০৯:২৮ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ০৫, ২০২১
০৯:২৮ অপরাহ্ন



নবীগঞ্জে নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ পৌর এলাকার কেলী কানাইপুর গ্রামে এক নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছেন একই এলাকার নিপু গোপ নামের এক যুবক। ওই নারীর চিৎকারে স্থানীয় লোকজন তাকে হাতেনাতে আটক করেন। এ সময় এলাকার কতিপয় লোকজনের সহযোগিতায় বিচার-শালিসের কথা বলে কৌশলে নিপুকে ছাড়িয়ে নেন তার কাকা দিগেন্দ্র গোপ।

ঘটনাটি স্থানীয় যুবকরা মোবাইল ফোনে ভিডিও করেছেন। তারা অভিযুক্ত ওই যুবকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করলেও গ্রাম্য মাতব্বরগণ ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ওঈ নারী ও তার স্বামীকে গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

এ ব্যাপারে ওই নারী নিরুপায় হয়ে সোমবার (৫ জুলাই) নবীগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নবীগঞ্জ উপজেলার করগাঁও ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের মৃত ধীরেন্দ্র গোপের ছেলে নিপু গোপ দীর্ঘদিন ধরে তার কাকা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীর বাড়ি পৌর এলাকার কেলী কানাইপুর গ্রামে বসবাস করে আসছেন। ওই বাড়িতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভাড়া থাকেন একই ইউনিয়নের তারনগাঁও গ্রামের মৃত শৈলেন্দ্র দাশের ছেলে বনমালী দাশ। বনমালী দাশ পেশায় একজন কীর্তন শিল্পী। প্রায়ই তিনি বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যান। বাড়ির মালিকের ভাতিজা অটোরিকশাচালক নিপু গোপের কুদৃষ্টি পড়ে বনমালী দাশের স্ত্রীর ওপর। প্রায়ই ওই নারীকে বাসায় একা পেয়ে নানাভাবে উত্যক্ত করতেন নিপু গোপ। বিষয়টি ওই নারী তার স্বামীকে বলার পর নিপু গোপের স্বজনদের কাছে বিচারপ্রার্থী হন বনমালী দাশ। কিন্তু ওই গ্রামে গোপ সম্প্রদায়ের লোকজন বেশি থাকায় ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হন তিনি। একপর্যায়ে নিপু গোপের অত্যাচার, নির্যাতনে বাসা ছেড়ে পার্শ্ববর্তী কালীপদ গোপের বাসা ভাড়া নেন বনমানী দাশ। তবুও নিপু গোপের অত্যাচার থেমে থাকেনি। প্রায়ই ওই নারীর ফোনে কল দিয়ে বা রাস্তায় একা পেয়ে উত্যক্ত করাসহ কুপ্রস্তাব দিতেন নিপু। তার কুপ্রস্তাবে রাজি না হলে নারীর স্বামী ও শিশুসন্তানকে হত্যার হুমকি দিতেন তিনি।

গত শনিবার (৩ জুলাই) সকালে স্বামী বনমালী দাশ ধর্মীয় অনুষ্ঠান কীর্তনে চলে যান বানিয়াচং উপজেলার চমকপুর গ্রামে। এ খবর জানতে পারেন নিপু গোপ। ওইদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে ওই নারী প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘরের বাইরে গেলে লুকিয়ে থাকা নিপু গোপ ঘরের ভেতরে প্রবেশ করেন। ঘরে ফিরে নারী নিপু গোপকে ঘরের ভেতরে দেখে চিৎকার দেওয়ার চেষ্টা করলে নিপু তার মুখ চেপে ধরে শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন। একপর্যায়ে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন নিপু। তাদের ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে নারীর মুখ থেকে নিপুর হাত সরে গেলে নারী চিৎকার দেন। তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে ওই ঘরে গভীর রাতে নিপু গোপকে দেখেন এবং নারীর কথা শুনে তাকে আটক করে রাখেন। একপর্যায়ে স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় নিপুর কাকা দিগেন্দ্র গোপ তাকে কৌশলে ঘটনাস্থল থেকে নিয়ে চলে যান। খবর পেয়ে নারীর স্বামী বনমালী দাশ বাড়িতে এসে ঘটনার বিস্তারিত শুনে স্থানীয় সমাজপতিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ন্যায়বিচার পাননি। তারা ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা করছেন।

এলাকার সুমন গোপ, প্রিয়তোষ কুড়ি, মিন্টু দেব ও তপন গোপ জানান, প্রতিদিনের ন্যায় শনিবার রাতে তারা রাস্তায়  হাঁটছিলেন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে এক নারীর চিৎকার শুনে দৌড়ে ওই বাসায় যান। গিয়ে নিপু গোপকে এলোমেলো অবস্থায় দেখতে পান। গভীর রাতে ওই বাসায় আসার কারণ জানতে চাইলে সন্তোষজনক কোন জবাব দিতে না পারায় তারা নিপুকে উত্তম-মধ্যম দেন। নিপুকে আটকের খবর জানাজানি হলে লোকজনের ভিড় জমে ওই বাসায়। একপর্যায়ে স্থানীয় মাতব্বরদের সহযোগিতায় উক্ত ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচারের আশ্বাস দিয়ে নিপু গোপের কাকা দিগেন্দ্র গোপ তাকে ঘটনাস্থল থেকে নিয়ে যান। 

নির্যাতিত নারী জানান, দীর্ঘদিন ধরে নিপু গোপ তার সঙ্গে কথা না বললে তাকে নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে এমনকি তার স্বামী-সন্তানকে খুন করবেন বলে হুমকি দিয়ে আসছিলেন। তার অত্যাচারে বাসা বদল করেও শেষ রক্ষা হলো না। গ্রাম্য মাতব্বররা নিপু গোপের পক্ষে কথা বলছেন। তারা একই সম্প্রদায়ের লোক। আর নির্যাতিতরা নিরীহ মানুষ। তিনি এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত নিপু গোপ বলেন, কাউন্সিলর যুবরাজ গোপ বাড়িতে এলে বিষয়টি দেখে দেবেন বলেছেন।


এএম/আরআর-১১