গৃহবন্দি পরিবারের মানবেতর জীবন

দোয়ারাবাজার প্রতিনিধি


জুলাই ১৪, ২০২১
১০:০৯ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ১৪, ২০২১
১০:০৯ অপরাহ্ন



গৃহবন্দি পরিবারের মানবেতর জীবন

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে খাস জমি দখলের প্রতিবাদ করায় হত্যা মামলার এক আসামির পুরো পরিবারকে একঘরে করে রেখেছে গ্রাম পঞ্চায়েতের মাতব্বররা। ঘটনাটি ঘটেছে দোয়ারাবাজার উপজেলা সদরের পূর্ব মাছিমপুর গ্রামে। গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর গ্রামের লোকজন মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে ওই পরিবারকে একঘরে করেন।

একঘরে করে রাখায় করোনাকালে কঠিন লকডাউনের মধ্যে ওই পরিবারের লোকজন এখন গৃহবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করার খবর পাওয়া গেছে। তাদেরকে মসজিদে নামাজ পড়তে এবং হাট-বাজারে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি তাদের দোকান থেকে গ্রামের কোনো লোককে কিছু কিনতে দেওয়া হচ্ছে না। তাদের সঙ্গে ওঠা-বসা করার কোনো প্রমাণ পাওয়া গেল ৫ হাজার টাকা জরিমানা করার হুমকি দেওয়া হয়েছে। 

জানা গেছে, উপজেলার সদর ইউনিয়নের পূর্ব মাছিমপুর গ্রামের ইমান আলীর পুত্র আলী হোসেন ও একই গ্রামের মজর আলীর পুত্র আবদুর রহিমের মধ্যে দেড় বছর পূর্বে পাওনা টাকা নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে বাজারের গলিতে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে দুইজনের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪ দিন পরে মারা যান আহত রহিম উদ্দিন। পরে এ ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করা হলে ঘটনার সঙ্গে জড়িত মূল আসামি আলী হোসেন গ্রেপ্তার হন। তিনি বর্তমানে জামিনে মুক্ত রয়েছেন। 

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ওই ঘটনার পর থেকে আসামির পরিবারের লোকদের নানাভাবে অত্যাচার ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। এ ঘটনা বাদীপক্ষের সঙ্গে আপসে মীমাংসাও করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি গ্রাম পঞ্চায়েতের কিছু মাতব্বর তাদের বিরুদ্ধে আবারও উঠে-পড়ে লেগেছেন। গ্রামের মসজিদের সামনের মার্কেটের সামনের খাস জমিতে দোকানঘর বানিয়ে আলী হোসেনের পিতা ইমান আলী দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছিলেন। এই জমি থেকে তাদেরকে সরে যেতে গ্রাম পঞ্চায়েতের লোকজন চাপ সৃষ্টি করলে নিরীহ পরিবারটি সরে যেত চায়নি। এরই সূত্র ধরে পঞ্চায়েতের লোকজন মাইকে ঘোষণা দিয়ে তাদের একঘরে করে রাখে।

ভুক্তভোগী ওই পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, গত শুক্রবার থেকে পরিবারটিকে অন্যায়ভাবে প্রতিবেশীদের সঙ্গে মেলামেশা, যাতায়াত এবং বাড়ি থেকে বের হতে বাধা দিয়ে সমাজ থেকে বিচ্যুত করে রাখা হয়েছে।

দোয়ারাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেবদুলাল ধর বলেন, এমন একটি অভিযোগ পেয়েছি। পুলিশ গ্রামে গিয়ে এ বিষয়ে তদন্ত করে এসেছে। মঙ্গলবার (গতকাল) সন্ধ্যায় দুইপক্ষকে থানায় ডাকা হয়েছে। অন্যায় কিছু হয়ে থাকলে বিষয়টি তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এইচএইচ/আরআর-০১