মেয়ে হারানোর বিচার চান নবীগঞ্জের আনোয়ারা

আনোয়ার হোসেন মিঠু, নবীগঞ্জ


জুলাই ১৪, ২০২১
০৬:১৩ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ১৪, ২০২১
০৬:১৩ অপরাহ্ন



মেয়ে হারানোর বিচার চান নবীগঞ্জের আনোয়ারা
নারায়ণগঞ্জে কারখানায় আগুন

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা এলাকায় সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় দুর্ঘটনায় নিহত হবিগঞ্জের নবীগঞ্জের অমৃতা বেগমের মা আনোয়ারা বেগমের বিলাপ যেন থামছে না। তার কান্না ও আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। 'ও অমৃতা রে, এখন কই তুই মা? ও আল্লাহ, তুই ছাড়া এখন আমরার কেউ নাই। আমাদেরকে আর কে দেখবে মা? আমার বুকে ফিরে আয় মা।' মায়ের এমন সব আহাজারি চলছিল নিহত অমৃতার বাড়িতে। তিনি শুধু বলছিলেন, আমি লাশ চাই, বিচার চাই।

গত সোমবার এ প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপকালে নবীগঞ্জের বড় ভাকৈর (পূর্ব) ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের নিজ বাড়িতে এমন আহাজারি করছিলেন মোতালিব মিয়ার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম। ওই কারখানায় কাজ করতেন তার মেয়ে অমৃতা বেগম (৩০)। অমৃতা স্বামী রিকশা চালান নারায়ণগঞ্জ শহরে। গত বুধবার রাতে মায়ের সঙ্গে শেষবারের মতো মোবাইল ফোনে কথা হয়েছিল অমৃতার। অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে আর তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এখন মা আনোয়ারা বেগমের একটাই দাবি- আমি আর কিছু চাই না, আমি শুধু আমার মেয়ের লাশ চাই। আর এর বিচার চাই।

আনোয়ার বেগমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার বড় ভাকৈর (পূর্ব) ইউনিয়নের রামপুর গ্রামে। তার স্বামী পঙ্গু। তিন মেয়ে ও এক ছেলের সংসার চলত অমৃতার দেওয়া টাকায়। প্রায়ই টাকা দিয়ে পরিবারকে সহযোগিতা করতেন অমৃতা। কারখানায় কাজ করার সুবাদে স্বামী ও মেয়েকে নিয়ে অমৃতা নারায়ণগঞ্জের ভুলতা গাউছিয়ার ভোলাকান্দা নতুন বাজারে (দক্ষিণ পাড়া) হাবিব মিয়ার বাড়িতে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন।

আনোয়ার বেগম জানান, তিন বোন ও এক ভাইয়ের পরিবারে বোনদের মধ্যে বড় অমৃতা। বড়ভাই বিয়ে করে আলাদা থাকেন। অল্প বয়স থেকে অমৃতাই বাবা-মাকে দেখছেন। শত বাধার মধ্যেও স্বামীর সংসারের পাশাপাশি দেখে রেখেছেন বাবা-মায়ের সংসার। ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে সংসারের হাল ধরেছিলেন অমৃতা। সংসারের হাল ধরতে গত জুন মাসে ৫ হাজার ৭০০ টাকা বেতনে চাকরি নেন হাসেম ফুড লিমিটেডে। সুমা নামে ৭ বছরের এক মেয়ে আছে তার। নাতনির ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন শঙ্কিত আনোয়ারা বেগম।

কথাগুলো শেষ না হতেই ডুকরে কেঁদে ওঠেন অমৃতার মা আনোয়ার বেগম। স্মৃতি হাতড়ে কেঁদে কেঁদে বলেন, দুর্ঘটনার আগের দিন তাকে ফোন দিয়েছিলেন অমৃতা। আসন্ন কোরবানির ঈদে বাড়ি আসার কথা বলেছিলেন। বলেছিলেন সবার জন্য নতুন কাপড় নিয়ে আসবেন। এবার সবাইকে নিয়ে বাড়িতে ঈদ করবেন। কিন্তু ফেরা হলো না। আনোয়ারা বেগম বিলাপ করে ওঠেন, 'আমার কিছু লাগব না মা। তুই আমার বুকে ফিরে আয়। তুই ছাড়া আমাদের আর কে দেখবে?'

প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা এলাকায় সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নিখোঁজ শ্রমিকদের মধ্যে আছেন আনোয়ারা বেগমের মেয়ে অমৃতা বেগম। এখনও অমৃতার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। অমৃতার স্বামীসহ পরিবারের লোকজন ছুটে গেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। সেখানে লাশ শনাক্তের জন্য অমৃতার মেয়ে সুমা, বোন মুমিনাসহ পরিবারের লোকজন নমুনা দিয়েছেন। ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট আসার পর অমৃতার মৃতদেহ শনাক্ত করা হবে বলে কর্তৃপক্ষ তাদের জানিয়েছেন।


এএম/আরআর-০২