দক্ষিণ সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
জুলাই ১৫, ২০২১
০৭:৫৯ অপরাহ্ন
আপডেট : জুলাই ১৫, ২০২১
০৮:১৮ অপরাহ্ন
ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে অঝোরে কাঁদছেন বাবা আনছার মিয়া ও শয্যাশায়ী মা রানা বেগম। তাঁরা কান্নায় বার বার মুর্ছা যাচ্ছিলেন, আর বলছিলেন, আমার ছেলে নাজিমুল ইসলাম মেধাবী ছিল। সে জাউয়া বাজার ডিগ্রী কলেজের বিএ প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল। আমার ছেলে সোনার টুকরো ছেলে। খুনিরা প্রকাশ্যে দিবালোকে আমার বাড়ীতে এসে আমার সামনে ছেলেকে খুন করে পালিয়েছে। আমরা খুঁনিদের ফাঁসি ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
আমার ছেলেকে আর কোনো দিন ফিরে পাবো না। তবে হত্যার বিচার পেলে কিছুটা হলেও শান্তি পাবে ছেলের আত্মা।
বুধবার (১৫ জুলাই) সকালে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার বড়মোহা গ্রামে নিজ বাড়ীতে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে ছেলের শোকে কাতর বাবা আনছার মিয়া ও শয্যাশায়ী মা রানা বেগম সহ আত্মীয় স্বজনরা কথাগুলো বলছিলেন।
তারা নিহত নাজিমুল ইসলাম জায়গীরদার হত্যাকারী খুঁনিদের বিচার চেয়ে পুলিশ প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন।
মামলার সূত্র জানা যায়, গত ২৭ জুন (রবিবার) বিকাল সাড়ে ৫ টায় উপজেলার বড়মোহা গ্রামের ঈদগাহের মাঠে ক্রিকেট খেলা নিয়া আনছার মিয়ার ছেলে নাজিমুল ইসলাম জায়গীরদার ও একই গ্রামের মৃত খলিল খানের ছেলে এরশাদ খাঁন ও তার ভাই আমিন খাঁনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়।
একপর্যায়ে বড়মোহা গ্রামের শাহী আলম খাঁন সহ গোষ্ঠীর লোকজন উত্তেজিত হয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নাজিমুল ইসলামের বাড়ীতে এসে আক্রমণ চালায়।
এসময় খাঁ গোষ্ঠির লোকজন নাজিমুল ইসলাম জায়গীরদারকে তাঁর বসত বাড়িতে উঠানে আক্রমণ চালিয়ে দেশীয় অস্ত্র সুলফি দিয়ে তার বুকে আঘাত করে ও জনৈক খালিছ মিয়ার পেটে ঘা দেয়।
গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁদেরকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে নাজিমুল ইসলাম জায়গীরদার রাস্তায় মারা যায়।
এ ঘটনায় নিহতের পিতা আনছার মিয়া বাদী হয়ে সোমবার(২৮ জুন) দুপুরে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানায় ৫১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার বাদী আনছার মিয়া বলেন, ‘আমার এক ছেলে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আমার ছোট ছেলে নিহত নাজিমও মেধাবী ছিল, খেলাধুলাও ভাল ছিল। তাকে বিসিএস ক্যাডার বানানোর স্বপ্ন দেখছিলাম। কিন্তু প্রতিবেশী প্রতিপক্ষ আমার ছেলেকে হত্যা করে সে স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। বড়মোহা গ্রামের শাহী আলম খাঁন, ফয়সল খাঁন, জুবেদ খাঁন, দিলদার খাঁন, তফজ্জুল খাঁন, সুন্দর খাঁন ও তাদের গোষ্ঠির লোকেরা আমার বসত বাড়ীর উঠানে আমার ছেলে নাজিমুল ইসলাম জায়গীরদারকে প্রকাশ্যে সুলফি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেছে। ’ নিহতের শয্যাশায়ী মা রানা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ছেলেকে খাঁ গোষ্ঠির লোকজন আমার বাড়ীর উঠানে আমার সামনে হত্যা করেছে। আমার বুকের ধন কেড়ে নিয়েছে। আমি ছেলের হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবী করছি। অনতিবিলম্বে প্রধান আসামী শাহী আলম খাঁন সহ সকল আসামীদেরকে গ্রেফতার করে থানা পুলিশ আইনের আওতায় নিয়া আসেন। তাহলে আমার ছেলের আত্মা শান্তি পাবে।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ পরিদর্শক(এসআই) জহিরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘মামলাটি তদন্তাধীন। তদন্তকার্যক্রম অব্যাহত আছে। ইতিমধ্যে ২নং আসামী দিলোয়ার খাঁন দিলদার সহ ৭ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছি। অন্যান্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) কাজী মোক্তাদির হোসেন বলেন, ‘মামলাটি একটি হত্যা মামলা। মামলার হওয়ার পরেই একাধিক অভিযান চালিয়ে ২ নং আসামী সহ ৭ আসামীকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। প্রধান আসামী সহ অন্যান্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। নাজিম হত্যাকারী সকল আসামীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।’
এস টি/বি এন-০৪