বিয়ানীবাজার প্রতিনিধি
জুলাই ২৯, ২০২১
১১:৩০ অপরাহ্ন
আপডেট : জুলাই ২৯, ২০২১
১১:৩০ অপরাহ্ন
সিলেটের বিয়ানীবাজারে করোনার সংক্রমণ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। করোনা রোগী শনাক্তের দিক থেকে এবার নতুন রেকর্ড গড়েছে প্রবাসী অধ্যুষিত বিয়ানীবাজার উপজেলা। প্রথমবারের মতো এই উপজেলায় এক সঙ্গে সর্বাধিক ৪৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। বিয়ানীবাজারে করোনার সংক্রমণ শনাক্তের হার ৬৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা উদ্বেগজনকহারে বাড়ছে। এর বাইরেও বিভিন্ন গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু।
বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, উপজেলায় করোনার আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৭৯৯ জন আর মারা গেছেন ৪৩ জন। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, বিয়ানীবাজারে বর্তমানে ১২৫ জন করোনা পজিটিভ রোগীর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। তারা যত্রতত্র ঘুরছেন, বাজার-সদাই করছেন। এ বাড়ি ও বাড়ি যাচ্ছেন। এই ১২৫টি পরিবারের সদস্য সংখ্যা হবে কমপক্ষে ৭০০ জন। তাদের অবাধ বিচরণে উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
গত ১৯ জুলাই স্থানীয় গ্যাসফিল্ডে কর্মরত জনৈক ব্যক্তি করোনা পজিটিভ হওয়ার পরেও নিজে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপস্থিত হয়ে নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট নিতে যান। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তোলপাড় শুরু হয়।
সূত্র জানায়, উপজেলা প্রশাসন গত কয়েকমাস পূর্বে করোনায় আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তিদের নাম-ঠিকানা প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর থেকে পজিটিভ ব্যক্তি কিংবা তার পরিবার নিয়ে সবার ধারণা অজ্ঞাত থেকে যায়। এ সুযোগে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি ও তার পরিবারের সদস্যরা সর্বত্র চলাফেরা করছেন।
এ থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হলো ঘরে থাকা, বিনা প্রয়োজনে বাইরে না যাওয়া- এমনটি জানান বিয়ানীবাজার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আবু ইসহাক আজাদ। তিনি আরও বলেন, মাস্ক পরিধান এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে করোনা পজিটিভ রোগীদের নাম-ঠিকানা প্রকাশ করার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার দাবি জানিয়েছেন অনেকে। উপজেলার গ্রামে গ্রামে বিভিন্ন বাড়িতে কেউ না কেউ সর্দি, জ্বর, কাশি ও গলাব্যথায় আক্রান্ত। এদের বেশিরভাগই নমুনা পরীক্ষা করাতে আগ্রহী নন। ঘরে বসেই প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ সেবন করছেন তারা। যাদের শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো, তারা হয়তো কিছুদিন পর সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রেই তা হচ্ছে না। সর্দি, কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট নিয়ে অনেকে মারা যাচ্ছেন বাড়িতেই। কেউ কেউ শেষ মুহূর্তে হাসপাতালে যাওয়ায় তাদের বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না। গত কয়েকদিন থেকে উপজেলায় কিছুক্ষণ পর পর মৃত্যুর সংবাদ শোনা যাচ্ছে।
জানা যায়, বিয়ানীবাজারে অনেকে করোনার উপসর্গ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এমন শত শত মানুষের শনাক্ত ও মৃত্যু সরকারি হিসাবে আসছে না। তবে সরকারি পরিসংখ্যানও বলছে, গ্রামে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে।
বিয়ানীবাজার উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোয়াজ্জেম আলী খান বলেন, গ্রামের অধিকাংশ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। এক শতাংশেরও কম মানুষ নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার করছেন। হাট-বাজারে ভিড়ের মধ্যে চলছে কেনাকাটা। শারীরিক দূরত্ব একেবারেই মানা হয় না। এতে সূস্থ ব্যক্তিও তাদের সংস্পর্শে চলে যাচ্ছেন।
এসএ/আরআর-০৭