নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই ৩০, ২০২১
০৫:১১ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জুলাই ৩০, ২০২১
১১:০৮ অপরাহ্ন
সিলেট সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সরকারি অর্থায়নে ফুড প্রিপারেশন অ্যান্ড কুকিং কোর্সে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। জানুয়ারিতে শুরু হওয়া ছয় মাসের কোর্স গত জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। অথচ, এখনও শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনই হয়নি।
জানা গেছে, দক্ষ জনবল গড়ার লক্ষ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রজেক্ট (সেইপ)’ এর অর্থায়নে লন্ডনের সিটি অ্যান্ড গিল্ডস’র অধীনে আন্তর্জাতিক মানের এই প্রশিক্ষণ ও সনদ দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের; যা বিশ্বের অধিকাংশ দেশে গ্রহণযোগ্য। প্রকল্পের আওতায় কুকিং (রান্না) বিষয়ে দেশের মধ্যে কেবল সিলেটে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। চারটি ব্যাচের প্রশিক্ষণ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। এদের কেউ কেউ দেশের ফাইভ স্টার মানের হোটেল-রেস্টুরেন্টে চাকরি করছেন। কেউ হয়েছেন উদ্যোক্তা, আবার অনেকে বিদেশে পাড়ি দিয়ে চাকরি নিয়েছেন। এ কারণে এখানে ভর্তির প্রতিযোগিতাও বেশি। কিন্তু, চলতি বছর প্রবল আগ্রহ নিয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মাঝে চরম হতাশা বিরাজ করছে।
বিএমইটি কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনা সংক্রমণ বাড়ায় সরকার ঘোষিত লকডাউনের কারণে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না। আর সিটি অ্যান্ড গিল্ডস কর্তৃপক্ষ বলছে, লকডাউনের কারণে পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় ৩১ জুলাই পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বিএমইটি কর্তৃপক্ষ রেজিস্ট্রেশনে আগ্রহী হলে তবেই রেজিস্ট্রেশন হবে।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তারা এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত নিয়মিত ক্লাস করেছেন। কোর্সের সিলেবাস প্রায় শেষ করেছেন। ব্যবহারিক (প্র্যাকটিক্যাল) ক্লাসও অনেকটা শেষ। প্রশিক্ষণে অর্জিত দক্ষতা নিয়ে অনেকে এই পেশায় যুক্ত হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আবার অনেকে ইউরোপসহ উন্নত দেশগুলোতে পাড়ি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে, এখনও রেজিস্ট্রেশন না হওয়ায় তারা হতাশ। ভুলতে বসেছেন প্রশিক্ষণে অর্জিত জ্ঞান।
এই কোর্সে প্রশিক্ষণরত শিক্ষার্থী শামীম আহমদ জানান, কোর্স নিয়ে আমাদের আগ্রহ প্রবল। ৫ থেকে ৬শ আবেদনকারীর মধ্যে আমরা ৩০জন সুযোগ পেয়েছি। সিলেট জেলা ছাড়াও মৌলভীবাজার, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ থেকে এসে অনেকে কোর্সে ভর্তি হয়েছেন। গ্রাম থেকেও এসেছেন কেউ কেউ। কোর্সের যাবতীয় প্রশিক্ষণ নিয়েও শেষ সময়ে এসে হতাশ তারা। আদৌ সার্টিফিকেট পাবেন কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।
একই কোর্সের শিক্ষার্থী ফৌজিয়া আক্তার বলেন, ‘আমার একজন সহপাঠী ৩০ কিলোমিটার দূর থেকে প্রতিদিন আসত। তার আগ্রহ ও চেষ্টা আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। অনেক কষ্ট করেছি, সকাল সাড়ে ৮টায় ক্লাস শুরু হতো। তবুও, আমরা একটি ক্লাসও মিস করিনি। এখন দেখছি সবকিছুই অনিশ্চিত।’
প্রশিক্ষণার্থী সজল সরকার জানান, তারা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সুরাহার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু আশ্বাসের পর দুই মাস চলে গেলেও এখনও অগ্রগতি নেই।
এদিকে, সিলেট কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের শিক্ষকরা বলছেন, অনেক যাচাই বাছাইয়ের পর গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভর্তি করেন তারা। এটি পঞ্চম ব্যাচ। প্রশিক্ষণার্থীরা মেধাবী হওয়ায় মার্চের মধ্যে তাদের পাঠ্যসূচি অনেকটা শেষ হয়েছে। তবে, রেজিস্ট্রেশনের বিষয়টি বিএমইটি’র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হাতে। তারা এ বিষয়ে ঢাকায় যোগাযোগ করছেন। রেজিস্ট্রেশনের বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হয়ে তারা কিছু বলতে পারছেন না।
সিলেট সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) প্রকৌশলী ওয়ালিউল্লা মোল্লা জানিয়েছেন, বিএমইটি’তে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেছেন। তাকে আশ্বস্ত করা হয়েছে, এখন যেহেতু লকডাউন চলছে এবং সীমিত পরিসরে অফিস চলছে। তাই, লকডাউন উঠে গেলে রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা হবে।
এ বিষয়ে জানতে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর প্রশিক্ষণ শাখার পরিচালক ড. প্রকৌশলী মো. সাখাওয়াৎ আলী বলেন, ‘বিষয়টি আমি দেখছি। এ বিষয়ে সিটি অ্যান্ড গিল্ডস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।’
মার্চের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও এখনও কেন হয়নি- এমন প্রশ্নে সেইপ এর কর্মকর্তা ড. মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার থেকে সিদ্ধান্ত না পেলে আমরা রেজিস্ট্রেশন করতে পারি না। তাই, মার্চে হয়নি। পরবর্তীতে লকডাউন শুরু হওয়ায় এটি আটকে গেছে। অনুমতি পেলে রেজিস্ট্রেশন করা হবে।’
তবে, বিএমইটির প্রশিক্ষণ শাখার উপপরিচালক দেওয়ান মো. নজমুল হক বলেন, ‘গত ডিসেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় এ বছর নতুন করে তা সম্প্রসারণ করতে হয়েছে। এ কারণে বছরের শুরুর দিকে কাগজপত্র প্রক্রিয়ায় সময় লেগেছে। পরবর্তীতে লকডাউন শুরু হওয়ায় রেজিস্ট্রেশন সম্ভব হয়নি। সিটি অ্যান্ড গিল্ডস কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার সময়সীমা পিছিয়েছে এবং রেজিস্ট্রেশনের জন্য নতুন করে সময় দিয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি, লকডাউন প্রত্যাহারের পর দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের।’
সিটি অ্যান্ড গিল্ডস’র বাংলাদেশ সমন্বয়ক সাঈদ মো. আলী বলেন, ‘সেইপ ছাড়া সবাই এরই মধ্যে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছে। জুনের মধ্যে পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে সরকার লকডাউন ঘোষণা করায় লন্ডন অফিসকে অনুরোধ করেছি যেনো পরীক্ষার সময় পেছানো হয়। এরই আলোকে পরীক্ষা স্থগিত করে নভেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এই সুযোগে সেইপ-এর শিক্ষার্থীদের জন্য রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ জুলাই পর্যন্ত রাখা হয়েছে। তারা চাইলে এই সময়ের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। সম্প্রতি এ বিষয়ে বিএমইটির কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগও হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন- লকডাউন শেষে তারা রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন।’
এসএইচ/আরসি-০৩