নবীগঞ্জে তিন দশকেও শেষ হয়নি মসজিদ নিয়ে দ্বন্দ্ব

আনোয়ার হোসেন মিঠু, নবীগঞ্জ


আগস্ট ০১, ২০২১
১০:৪০ পূর্বাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ০১, ২০২১
১০:৪০ পূর্বাহ্ন



নবীগঞ্জে তিন দশকেও শেষ হয়নি মসজিদ নিয়ে দ্বন্দ্ব

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জে একটি মসজিদ নিয়ে পরিচালনা কমিটির সঙ্গে ভূমিদাতা পরিবারের দ্বন্দ্ব চলছে দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর ধরে। এ নিয়ে অসংখ্যবার সালিশ বৈঠক হলেও আজও হয়নি কোনো সমাধান। সবগুলো সালিশেই বিরোধ নিষ্পত্তি হলেও কিছু কুচক্রীমহলের কারণে আলোর মুখ দেখছে না নিষ্পত্তি। 

মসজিদের খতিব আব্দুর নুরের কারণে বিরোধটি সমাধান হচ্ছে না বলেও মনে করছেন অনেক সচেতন লোকজন। বিচার-সালিশের রায় বাস্তবায়নে বার বার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে একটি সিন্ডিকেট চক্র। বর্তমানে বিষয়টি নিয়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নে। যে কোনো সময় ঘটতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা।

স্থানীয়রা জানান, নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের মুনসুরপুর গ্রামের বাসিন্দা মরহুম ওয়াহাব উল্লাহ এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ঐহিত্যবাহী ইনাতগঞ্জ বাজার জামে মসজিদ নামে নিজের ৬ শতক ভূমি এবং খাস খতিয়ানের দখলকৃত ভূমির ওপর মসজিদের মূল ভবনটি প্রতিষ্ঠা করেন। ওয়াহাব উল্লার উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত মসজিদে পূর্বে কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় সুন্দরভাবে পরিচালিত হচ্ছিল মসজিদটি। 

প্রায় ৩০ বছর পূর্বে স্থানীয় বাসিন্দা যুক্তরাজ্য প্রবাসী সালেহা বেগম নামের এক নারীর কাছ থেকে মসজিদের ভবন নির্মাণ দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা নেন তৎকালীন মসজিদ কমিটি ও খতিব আব্দুর নুর। ওই টাকা দিয়ে ইনাতগঞ্জ বাজার জামে মসজিদের সংস্কার করে ইনাতগঞ্জ বাজার জামে মসজিদের নাম বাদ দিয়ে নামফলকে লিখে দেওয়া হয় 'সালেহা জামে মসজিদ' নামটি। পরে আব্দুর নুর গংরা মিলে অর্থদাতাকে খুশি রাখতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য প্রবাসী সালেহা বেগমের স্বামী আরজান আলীকে আজীবন মসজিদ কমিটির সভাপতি বলে ঘোষণাও দেন।

১৯৯০ সালে হওয়া ওই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপত্বি করেন সমালোচিত খতিব আব্দুর নুর। তার নেতৃত্বে যুক্তরাজ্য প্রবাসী ছালেহা বেগমের স্বামীকে আজীবন সভাপতি পদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিষয়টি জানানো হয়নি মসজিদের ভূমিদাতা পরিবারের কাউকে। এ সময় নামফলক দেখে প্রতিবাদ করেন ইনাৎগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদ আহমেদ জিহাদী। তার প্রতিবাদের মুখে তৎকালীন মসজিদ কমিটি ও এলাকাবাসী মসজিদ নিয়ে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত দূর করতে ১৯৯৩ সালে মসজিদের খতিব আব্দুর নুরকে আহ্বায়ক করে সমস্যা সমাধানের জন্য কমিটি গঠন করে দেন।

কিন্তু বিগত ২৭ বছরেও এই সমস্যা সমাধানে কাজ করেনি ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটি। পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালে সালেহা বেগমকে খুশি করতে জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের নাম পরিবর্তন করে ভুয়া কাগজ দিয়ে ৪ নম্বর মোস্তফাপুর ইউনিয়নের নাম অন্তর্ভুক্ত করে আরজান আলীকে আজীবন মসজিদের মোতওয়াল্লী করতে ওয়াকফ অফিসে আবেদন করেন। ওয়াকফ এস্টেট প্রচলিত আইনের বিধান অনুসারে উল্লেখিত ব্যক্তিকে মোতওয়াল্লী নিযুক্ত করে পাবলিক ওয়াকফ গণ্যে বার্ষিক ১১ হাজার টাকা মোট আয় ও ১০ হাজার টাকা নিট আয় ধার্য করে নথিতে ওয়াকফ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নবীগঞ্জ উপজেলায় ৪ নম্বর মোস্তফাপুর নামে কোনো ইউনিয়ন নেই। জাল-জালিয়াতি করে মসজিদ নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করায় খতিব আব্দুর নুরসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি সুদৃষ্টি কামনা করেছেন সচেতন মহল। কাগজে-কলমে ইনাতগঞ্জ বাজার জামে মসজিদ নামটি থাকলেও খতিবের পৃষ্টপোষকতায় নামফলকে ও তাদের রেজুলেশনে নামটি 'সালেহা জামে মসজিদ' দেখানো হয়। অভিযোগ রয়েছে, মসজিদের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ৩০ বছর ধরে হিসাব নেই মসজিদের আয়-ব্যয়ের। বিষয়টি মীমাংসার জন্য একাধিকবার সালিশ বৈঠক হলেও রায় বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।

গত কয়েকদিন ধরে মসজিদ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যপক লেখালেখি হচ্ছে। উত্তেজনাকর পোস্ট ও মন্তব্য করতে দেখা যাচ্ছে অনেককে। যে কোনো সময় মসজিদ নিয়ে ঘটতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা। তাই জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।

প্রুঙ্গত, ওই একটি মসজিদে নামফলক লাগানো আছে দু'টি। একটিতে লেখা আছে সালেহা জামে মসজিদ। তার উপরে আরেকটি নামফলক লাগানো আছে। তাতে লেখা আছে সাবেক ইনাতগঞ্জ জামে মসজিদ। একটি মসজিদের দুটি নাম হয় কী করে আর এটি সাবেক মসজিদ হয় কী করে- এসব নিয়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে ওই এলাকায়।


এএম/আরআর-০২