৩০ বছরেও হয়নি তাহিরপুরের ৮ কিলোমিটার সড়ক

আবির হাসান-মানিক, তাহিরপুর


আগস্ট ০২, ২০২১
০৬:৩৭ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ০৩, ২০২১
০৫:১৩ অপরাহ্ন



৩০ বছরেও হয়নি তাহিরপুরের ৮ কিলোমিটার সড়ক

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়কটির দূরত্ব মাত্র ৮ কিলোমিটার। প্রায় ৩০ বছর আগে সড়কটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। কিন্তু উপজেলার অভ্যন্তরীণ যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি আজও চলাচলের উপযোগী হয়ে ওঠেনি। ফলে সড়কটি ঘিরে চলাচলকারীদের দুর্ভোগ শেষ হচ্ছে না। যান চলাচলের উপযোগী না হওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যেও। সড়কটি নির্মাণের জন্য স্থানীয়দের দাবি দীর্ঘদিনের। তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কেবল মিলেছে বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি।

এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, উপজেলার জনগুরুত্বপূর্ণ তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯৯৩ সালে। এ সড়ক দিয়েই উপজেলার বাদাঘাট, বড়দল ও শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের অন্তত লক্ষাধিক বাসিন্দা হেমন্ত-বর্ষা এ দুই মৌসুমেই উপজেলা সদরে যাতায়াত করে থাকেন। তাছাড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী ৩টি শুল্ক স্টেশন (বড়ছড়া, চারাগাঁও ও বাগলী) কেন্দ্রিক ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা উপজেলা সদরে চলাচলের জন্য এই সড়কটি ব্যবহার করেন। উপজেলার খনিজ বালু ও পাথর সমৃদ্ধ যাদুকাটা নদীতে যাতায়াতে এ সড়ক ব্যবহার করতে হয়। তাছাড়া গত ১ দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশের নানা প্রান্তের পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা উপজেলার জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগান, বড়গোপ টিলা (বারেক টিলা), শহীদ সিরাজ লেক (নীলাদ্রী) ও লাকমাছড়া ঝর্ণায় উপজেলা সদর থেকে যাতায়াতেরও একমাত্র সড়ক এটি। কিন্তু গত ৩০ বছরেও সড়কটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় সড়কটি দিয়ে চলাচলে এলাকাবাসী ও পর্যটকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়কের বাদাঘাট ইউনিয়নের হোসনার ঘাট থেকে পাতারগাঁও পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার স্থান কাঁচা ও বেহাল। বর্ষায় এর ১ কিলোমিটার সড়ক পাড় হতে হয় ছোট নৌকায় করে, যা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। বাকি ১ কিলোমিটার দূরত্ব পায়ে হেঁটে চলাও কঠিন হয়ে পড়ে। তাছাড়া এ সড়কের দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের টাকাটুকিয়া সেতুর উত্তর অংশের মাটি প্রতি বর্ষায় সরে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। হোসনার ঘাট থেকে জামালগড় রাস্তার সম্মুখ পর্যন্ত এবং সড়কটির বাদাঘাট ইউনিয়নের পাতারগাঁও থেকে বাদাঘাট বাজার পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার এলাকা সংস্কারের অভাবে বেহাল।

বেহাল এ সড়কটি দিয়েই উপজেলা সদরে অবস্থিত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নারী, শিশু, বৃদ্ধ রোগী ও গর্ভবতীরা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। অনেকে আবার ঝুঁকি নিয়েই মোটরসাইকেলে করে বিভিন্ন মালামাল ও যাত্রী পরিবহন করছেন। এ কারণে ছোটখাটো দুর্ঘটনা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। সড়কটি দিয়ে চলাচলে দুর্ভোগে নাকাল হওয়া ভুক্তভোগীদের চোখে-মুখে এখন কেবল চাপা ক্ষোভ আর অসহায়ত্বের ছাপ।

উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, করোনার এই সময়ে স্কুল বন্ধ রয়েছে। কিন্তু অফিস ও ব্যাংকের কাজে প্রায়ই উপজেলা সদরে যেতে হয়। যাতায়াতের সড়ক কেবল এটিই। কিন্তু সড়কটি বেহাল হওয়ার কারণে চলতে গিয়ে প্রতিবার দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বর্ষাকালে এ দুর্ভোগ বেড়ে দ্বিগুণ হয়।

ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলচালক জাকির হোসেন বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও এ সড়কটি দিয়ে যাত্রী বা মালামাল পরিবহন করি। একটু বৃষ্টি হলেই এ সড়কটি চেনা দায় হয়ে যায়। তখন কাঁচা সড়কটি কর্দমাক্ত ও পিচ্ছিল হয়ে ওঠে, যা খুব ঝুঁকিপূর্ণ। তখন চাইলেও চলাচল করা সম্ভব হয় না।

বাদাঘাট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি তাবারক হোসেন বলেন, প্রায় ১৭ বছর আগে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিতে তাহিরপুর সদরে গিয়েছিলাম। তখন দেখলাম এ রাস্তায় কাজ চলছে। এত বছর পরও কাজ আর শেষ হলো না!

বাদাঘাট উনিয়নের কামড়াবন্দ গ্রামের বাসিন্দা জজ মিয়া বলেন, গত ১ যুগ ধরে আমি শীতকালীন শাক-সবজি চাষাবাদ করছি। কিন্তু রাস্তাটি যানবাহন চলাচলের উপযোগী না হওয়ায় পরিবহন খরচ বেশি পড়ে। যে কারণে ইচ্ছা থাকলেও সবজি বিক্রি করতে উপজেলা সদরে যাই না।

উপজেলা প্রকৌশলী ইকবাল কবীর বলেন, তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়কটি সংস্কারের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। নৌকা পারাপারের অংশে ৭০০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণ করা হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবীর বলেন, উপজেলার জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটিকে যান চলাচলের উপযোগী করে তুলতে বড় ধরনের অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন। এজন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব দেওয়া আছে।


এএইচ/আরআর-০৫