সৈয়দ হাবিবুর রহমান ডিউক, শায়েস্তাগঞ্জ
আগস্ট ২৩, ২০২১
১০:৪৪ পূর্বাহ্ন
আপডেট : আগস্ট ২৩, ২০২১
১০:৪৪ পূর্বাহ্ন
হবিগঞ্জের শায়েস্তাঞ্জে প্রস্তাবিত ৫০ শয্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গত ৩ বছরেও চালু করা হয়নি। একজন চিকিৎসক দিয়েই নতুন এই উপজেলার দেড় লক্ষাধিক মানুষকে 'নিয়ম রক্ষার' চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে উপজেলা উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে।
দেশের ৪৯২তম উপজেলা শায়েস্তাগঞ্জ প্রায় সাড়ে ৩৯ বর্গকিলোমিটার আয়তন নিয়ে অবস্থিত, যার মাঝে রয়েছে একটি পৌরসভা ও ৩টি ইউনিয়ন। এছাড়া জেলার শিল্পাঞ্চল হওয়ায় ব্যস্ততম স্থান হিসেবে দেশের নানা প্রান্তের লোকজনের পদচারণা রয়েছে শায়েস্তাগঞ্জে। অথচ উপজেলার দেড় লক্ষাধিক মানুষের জন্য সরকারিভাবে মাত্র ১ জন চিকিৎসক নিয়োজিত রয়েছেন।
এই করোনাকালেও শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার সার্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা খুবই নাজুক। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স না থাকায় সাধারণ মানুষকে চিকিৎসা নিয়ে মারাত্মক বেগ পেতে হচ্ছে। উপজেলা থেকে জেলায় গিয়ে নমুনা দিতে হয় বলে এখানকার অনেকেই করোনা পরীক্ষা করেননি। এই মহামারীর সময়ে ও লকডাউন থাকাকালীন উপজেলার গর্ভবতী মায়েরা সঠিক চিকিৎসা পাননি। এতে করে ঝুঁকির মুখে রয়েছে শিশু ও মায়ের স্বাস্থ্য। এছাড়া চিকিৎসক সংকট একটি বড় সমস্যা। লকডাউন চলাকালীন সময়ে ঢাকা ও সিলেট থেকে প্রাইভেট চিকিৎসকরা এখানে আসেননি। ফলে এ উপজেলার বেশিরভাগ প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতেও করোনাকালে চিকিৎসাসেবা বিঘ্নিত হয়েছে। সব মিলিয়ে বিপাকে আছেন শায়েস্তাগঞ্জের চিকিৎসাগ্রহীতারা। কেউ অসুস্থ হলে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত প্রাথমিক সেবা পেয়ে থাকেন উপজেলা উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। কিন্তু গুরুতর হলে যেতে হয় জেলা সদর হাসপাতালে। এতে পদে পদে নানা দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে সেবাগ্রহীতাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাবিত ৫০ শয্যা শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফ মিলিয়ে মোট ৪৭টি পদের প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু এত কম সংখ্যক লোকবল দিয়ে ৫০ শয্যার একটি হাসপাতাল পরিচালনা সম্ভব নয়। তাই ইতোমধ্যে হবিগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিস থেকে ১১১টি পদ সৃষ্টি করার জন্য লিখিতভাবে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আর জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভবন নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে লোকবল নিয়োগ দেওয়ার কার্যক্রমও থেমে আছে।
এ অবস্থায় শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভায় ১ একর জমির উপর অবস্থিত শায়েস্তাগঞ্জ উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের একটি কক্ষ মেরামত করে সেখানে চলছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রম। দেড় লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা গত ৩ বছর ধরে চলছে মাত্র ১ জন মেডিকেল অফিসার দিয়ে। তাকে সহায়তা করছেন একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, একজন অফিস সহকারী ও একজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার।
এখানে সেবা নিতে আসা আল মাহমুদ বলেন, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা হয়েছে, তাহলে এখানে হাসপাতাল কেন হবে না? দ্রুত প্রস্তাবিত ৫০ শয্যা হাসপাতাল চালু করা হোক।
একই দাবি জানালেন সেবা নিতে আসা ফেরদৌসি আক্তারও। তাদের মতো অন্য রোগীদেরও একটাই দাবি, দ্রুত হাসপাতাল চালু হোক।
উপজেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি মো. জালাল উদ্দিন রুমি বলেন, এ সরকার ক্ষমতায় এসে পর্যায়ক্রমে শায়েস্তাগঞ্জকে উপজেলা করে দিয়েছে। এটা এলাকার মানুষের অনেক বড় প্রাপ্তি। কিন্তু আমি নিজেই করোনায় আক্রান্ত হলেও শায়েস্তাগঞ্জে চিকিৎসা নিতে পারিনি। নানা প্রতিকূলতার মাঝেই হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি। যদি আমাদের শায়েস্তাগঞ্জে হাসপাতাল থাকত, তাহলে আমাকে এত দূরে যেতে হতো না।
শায়েস্তাগঞ্জ উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার শেখর কুমার চন্দ্র বলেন, এ কেন্দ্রটি সরকারি নিয়ম অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে। শায়েস্তাগঞ্জসহ এর আশপাশের এলাকার রোগীরা এসে বিনামূল্যে সরকারি ওষুধ ও সেবা পাচ্ছেন। তিন বছর ধরে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পাশাপাশি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রমও চলে আসছে এখানে। জমি অধিগ্রহণের পর ভবন নির্মাণ হলে হাসপাতালের পুরোপুরি কার্যক্রম চালু হবে।
উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বসে নতুন উপজেলার দেড় লক্ষাধিক বাসিন্দার চিকিৎসা সামাল দিচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, করোনার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও আমি প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০০ জনের মতো রোগী দেখেছি। এত রোগী সামাল দেওয়া আমাদের পক্ষে কঠিন ছিল। তবুও সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি।
শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ গাজীউর রহমান ইমরান বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে উপজেলার জন্য যেখানে কমপক্ষে ১০ জন চিকিৎসক প্রয়োজন, সেখানে ডা. মো. সাদ্দাম হোসেন একাই সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আমি জরুরিভাবে আরও কয়েকজন চিকিৎসক উপজেলায় নিয়োগের দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ তালুকদার ইকবাল বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে। আমি আশা করছি, জমি অধিগ্রহণ শেষ হলে শিগগির সরকারি বরাদ্দ সাপেক্ষে উপজেলা ভবন ও ৫০ শয্যা শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চালু হয়ে গেলে উপজেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থারও উন্নতি হবে।
এসডি/আরআর-০২