দোয়ারাবাজারে সুরমার ভাঙনে হুমকিতে ইউপি ভবন ও বাজার

মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী, দোয়ারাবাজার


আগস্ট ৩০, ২০২১
০৬:২০ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ৩০, ২০২১
০৬:২০ অপরাহ্ন



দোয়ারাবাজারে সুরমার ভাঙনে হুমকিতে ইউপি ভবন ও বাজার

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে সুরমা নদীর ভাঙনে এবার হুমকির মুখে রয়েছে উপজেলার মান্নারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের ভবন, শতবর্ষী আমবাড়ি বাজার ও এর আশপাশের এলাকার বসতবাড়ি। পাল্টে যাচ্ছে এই এলাকার ভৌগলিক মানচিত্র। ভাঙনের মুখে বাকি যেটুকু জায়গা অবশিষ্ট আছে, সেটুকু আর কিছুদিন পর দৃশ্যমান থাকবে কি না তা নিয়ে সন্দিহান স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা। নদীভাঙনরোধে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সুরমা নদীর পাড় ঘেঁষে ব্রিটিশ শাসনামলে গোড়াপত্তন হয় প্রাচীনতম আমবাড়ি বাজারের। সেই সময় থেকে সরকারি রাজস্ব যোগানে অত্যন্ত সহায়ক এই বাজার। উপজেলার মধ্যে এটি একটি অন্যতম ব্যবসাকেন্দ্র। এ বাজারেই গড়ে উঠেছে মান্নারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স। এখানে রয়েছে ব্যাংক, ডাকঘর, আমবাড়ি উচ্চবিদ্যালয়, মসজিদ, মন্দির, খেলার মাঠ, গবাদি পশু বিক্রয়ের হাট, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সহস্রাধিক দোকানপাট ও ব্যবসায়িক স্থাপনা। বাজারের অনেক প্রাচীন স্থাপনা নদীভাঙনে হুমকির মুখে পড়ায় স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা এখন ভাঙন আতঙ্কে রয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, নদীভাঙন এখন ইউনিয়ন পরিষদ ভবনকে ছুঁয়ে ফেলেছে। যে কোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে ভবনটি। বাজারের শেষ প্রান্তে অবস্থিত আমবাড়ি-আদারবাজার খেয়াঘাটটিও ভাঙনের মুখে পড়েছে। কয়েকবছর আগে খেয়াঘাটে স্থানীয় সরকারের অর্থায়নে তৈরি হয়েছিল সিঁড়ি ও যাত্রী ছাউনি, যার কোনো অস্তিত্ব এখন আর নেই। নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে এটি। 

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, এ বাজারে গড়ে উঠেছে কয়েকটি অত্যাধুনিক মিনি সুপার মার্কেট। সবসময়ই জমজমাট কেনাকাটা চলে বাজারে। প্রতি অর্থবছরে বিপুল পরিমাণ অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে বাজার ইজারা নিতে হয়। অথচ সরকারিভাবে ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি আজোবধি।

বাজারের ব্যবসায়ী আসাদুর রহমান ইজাজ বলেন, সুরমা নদীর ভাঙন আমাদের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভাঙন নিয়ে একাধিকবার বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। প্রশাসনকেও অবগত করা হয়েছে। কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। 

আমবাড়ির বাসিন্দা আব্দুস সালাম মাহবুব বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য শতবর্ষী এই বাজারটি এখন নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। বাজারটি রক্ষায় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সুদৃষ্টি কামনা করছি। ভিটেমাটি, দোকানপাট হারিয়ে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে গেছেন।

মান্নারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হেনা আজিজ বলেন, মান্নারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ও আমবাড়ি বাজারসহ আশপাশের তিন কিলোমিটার এলাকায় ২০ বছরে প্রায় ২০০ পরিবার তাদের বসতবাড়ি, জমি ও দোকানের ভিটা নদীভাঙনে হারিয়েছে। ভাঙনরোধে দ্রুত কার্যকরী ও দীর্ঘস্থায়ী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। সম্প্রতি বাজারের ভাঙনপ্রবণ অংশে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু সায়েম শফিউল ইসলাম বলেন, আমবাড়ি এলাকায় নদীভাঙন প্রতিরোধে প্রায় ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দে দুটি প্যাকেজে কাজ শুরু হয়েছে। ভাঙনকবলিত অংশে জিও ব্যাগ ফেলা হবে। কাজ সম্পন্ন হতে একটু সময় লাগবে।


এইচএইচ/আরআর-০১