চালু হয়নি ৫০ শয্যার হাসপাতাল, চিকিৎসা সংকটে হাওরবাসী

আবির হাসান-মানিক, তাহিরপুর


সেপ্টেম্বর ০১, ২০২১
০৯:৫৫ অপরাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ০১, ২০২১
০৯:৫৫ অপরাহ্ন



চালু হয়নি ৫০ শয্যার হাসপাতাল, চিকিৎসা সংকটে হাওরবাসী
তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

তিন বছর আগে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এ লক্ষ্যে ২০১৯ সালের ২৫ জানুয়ারি নতুন একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। তবে প্রশাসনিক অনুমোদন না পাওয়ায় আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও চালু হয়নি ৫০ শয্যার কার্যক্রম। ফলে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এ উপজেলার সাধারণ মানুষ।

১৯৭৮ সালে নির্মিত ৩১ শয্যাবিশিষ্ট পুরাতন ভবনেই চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। সেখানেও রয়েছে চিকিৎসক, নার্সসহ প্রয়োজনীয় জনবল সংকট। মেডিকেল অফিসারের সংকট থাকায় প্রায়ই উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার দিয়ে চালাতে হচ্ছে জরুরি বিভাগ। তাছাড়া গাইনি চিকিৎসক না থাকায় বিঘ্নিত হচ্ছে নারীদের চিকিৎসাসেবা। রয়েছে আধুনিক চিকিৎসার যন্ত্রপাতি ও প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের অভাব। ফলে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা, বাড়ছে ভোগান্তি।

স্থানীয়রা বলছেন, তাহিরপুরে চিকিৎসক পদায়ন করা হলেও অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ও উপজেলাটি হাওরবেষ্টিত হওয়ায় এখানে আসা চিকিৎসকদের মধ্যে দ্রুত বদলি হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালটিতে মোট ১২৪টি পদের মধ্যে ৬৮টি পদই শূন্য। প্রধান কর্মকর্তা ছাড়া আবাসিক চিকিৎসক, মেডিসিন, গাইনি, সার্জারি ও অ্যানেসথেসিয়া পদগুলো খালি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে। ১৩ জন চিকিৎসকের বিপরীতে রয়েছেন ৬ জন। এর মধ্যে প্রেষণে রয়েছেন দুইজন মেডিকেল অফিসার। তাছাড়া ২০ জন নার্সের মধ্যে কর্মরত আছেন ৯ জন। তৃতীয় শ্রেণির ৭১ জন কর্মচারীর বিপরীতে রয়েছেন ৩৬ জন। অপরদিকে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সংকট মোকাবেলা করা হচ্ছে আউটসোর্সিংয়ের ১৮ জন কর্মচারীর মাধ্যমে।

জানা গেছে, তিন বছর আগে হাসপাতালটির জন্য একটি জেনারেটর ও আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় টেকনিশিয়ানের অভাবে এগুলো এখনও চালু করা যায়নি। নেই ডেন্টাল ল্যাব ও রেডিওটেকনোলজিস্ট। এক্স-রে মেশিনটিও বিকল এক যুগেরও বেশি সময় ধরে। ফলে চাইলেও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। রোগ নির্ণয়ের জন্য রক্ত পরীক্ষারও ব্যবস্থা নেই এখানে। ফলে লোকজন বাধ্য হয়ে স্থানীয় বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বাড়তি টাকা খরচ করে রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষা করছেন। একমাত্র নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটিও বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে।

উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের জয়পুর গ্রামের বুরহান মিয়া বলে, এখানে নারীদের জন্য কোনো গাইনি ডাক্তার নেই। যে কারণে জরুরি হলেও নারীরা চিকিৎসা নিতে পারছেন না। 

তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের মধ্য তাহিরপুর গ্রামের শাহিদ মিয়া বলেন, এই হাসপাতালে কোনো রোগের চিকিৎসা নিতে এলেও পরীক্ষা করাতে হয় হাসপাতালের বাইরে গিয়ে। ফলে নিরুপায় হয়ে বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে হচ্ছে। আর এজন্য গুনতে হয় বাড়তি টাকা।

স্থানীয় সমাজকর্মী আবুল হোসেন বলেন, এটি উপজেলার একমাত্র সরকারি হাসপাতাল। অথচ এখানে রক্ত পরীক্ষারও কোনো ব্যবস্থা নেই। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে?

এ ব্যাপারে তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আহমদ শাফি বলেন, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও প্রশাসনিক অনুমোদন না পাওয়ায় এর কার্যক্রম শুরু হয়নি। তবে কার্যক্রম চালু করার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রয়োজনীয় চাহিদা দেওয়া আছে। তাছাড়া বর্তমান চিকিৎসক ও অন্যান্য জনবল সংকট এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির জন্য প্রতিমাসেই চাহিদা পাঠানো হয়ে থাকে।


এইচএইচ/আরআর-১০