নবীগঞ্জের বিবিয়ানা-৩ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

আনোয়ার হোসেন মিঠু, নবীগঞ্জ


সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১
১০:৫৬ পূর্বাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১
১০:৫৬ পূর্বাহ্ন



নবীগঞ্জের বিবিয়ানা-৩ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ বিবিয়ানা-৩ ৪০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ মোট ৫টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ভবনে বিদ্যুৎ বিভাগ আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর শুভ উদ্বোধন করেন তিনি। এ সময় সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সংশ্লিষ্টরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন। 

এ সময় প্রধানমন্ত্রী জনগণকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, উৎপাদনের চেয়ে অনেক কম মূল্য সরকার বিদ্যুৎ গ্রাহকদের কাছ থেকে নিচ্ছে। কাজেই ব্যবহারে সাশ্রয়ী হলে আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় আনা সম্ভব হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বিদ্যুৎ খাত সম্পূর্ণ বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করেছি। সেই সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগও এনেছি। আমার হাতে প্রথম বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র মেঘনা ঘাটে ৪৫০ মেগাওয়াট এবং হরিপুরে ৩৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। এগুলো আমেরিকার ইএস কোম্পানি উৎপাদন করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বিশেষ আইনও আমরা করেছি। যদিও এসব কারণে অনেক সমালোচনা শুনতে হয়েছে। শুধু সমালোচনা নয়, ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলাও দিয়েছিল। যে কয়টা ভালো কাজ করেছি, তার সব কয়টার জন্য মামলা খেয়েছি। আবার ২০০৭ সালেও মামলা খেয়েছি। আমাদের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টাও আমার সঙ্গে আসামি ছিলেন। আমরা কাজও করেছি। আবার এই ধরনের হয়রানির শিকারও হয়েছি। কিন্তু থেমে থাকিনি।

বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে আলো জ্বালানো সরকারের লক্ষ্য জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সরকারি বা বেসরকারি কিংবা যৌথভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি। শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদন করলেই হবে না, এর জন্য সঞ্চালন লাইন প্রয়োজন। সেটাও আমরা নির্মাণ করে যাচ্ছি। পল্লী বিদ্যুৎ আগে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারত না। তাদের সরকারি বিদ্যুৎ থেকে কিনে নিতে হতো। এখন আমরা তাদের সেই সুযোগটা দিয়ে দিয়েছি। তারা নিজেরা বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সঞ্চালন করতে পারবে।

বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারের বহুমুখী পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের একটাই লক্ষ্য- দেশের গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছানো। কারণ একমাত্র বিদ্যুৎ দিলেই মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তাদের উন্নতির বিষয়টি আমরা সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বিদ্যুৎ পেলে মানুষ নিজের কর্মসংস্থান করতে পারে। বিদ্যুৎ যদি সারা বাংলাদেশে না পৌঁছাতে পারি, তাহলে ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা করতে পারব না। মানুষ তার সুফল পাবে না।

বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিএনপি-জামায়াত সরকারের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে মানুষ বিদ্যুতের জন্য আন্দোলন করেছিল বলে তাদের গুলি করে হত্যা করা হলো। এটা অবশ্য বিএনপির চরিত্র। কারণ কৃষকরা যখন সারের দাবিতে আন্দোলন করল, তখন ১৮ জন কৃষককে হত্যা করেছিল তারা।

উদ্বোধন হওয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো হলো- হবিগঞ্জের বিবিয়ানা-৩, ৪০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, চট্টগ্রাম ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইউনিট-২, নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাট ১০৪ মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্ট, বাগেরহাটে মধুমতি ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং সিলেটের ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ১৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উত্তরণ। 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ ভবনের বিজয় হল থেকে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ওয়াসেকা আয়েশা খান, জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিসুর রহমান, বিদ্যুৎ সচিব মো. হাবিবুর রহমান ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড’র (বিপিডিবি) চেয়ারম্যান এবং গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস যুক্ত ছিলেন। 

নবীগঞ্জ বিবিয়ানা-৩, ৪০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র শুভ উদ্বোধনকালে নবীগঞ্জে উপস্থিত ছিলেন, হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনের সংসদ সদস্য শাহনওয়াজ মিলাদ গাজী, জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান, পুলিশ সুপার এস.এম মুরাদ আলী, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ড. মুশফিক হুসেন চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিন্টু চৌধুরী, উপ-পরিচালক (এনএসআই) মো. আজমুল হোসেন, হবিগঞ্জ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোক্তার হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলমগীর চৌধুরী, নবীগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মহি উদ্দিন, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার শৈলেন দাশ, উপজেলার নারী ভাইস চেয়ারম্যান নাজমা বেগম, নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ডালিম আহমেদ প্রমুখ। 

বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে কাজ শুরুর পর সরকার সফলভাবে ২০ হাজার ২৯৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম ১১৯টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সরকার ২০২১ সাল নাগাদ ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করেছিল। তবে এরই মধ্যে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে, যা ২০০৯ সালে ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। বর্তমানে শতকরা ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ জনগণকে বিদ্যুতের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে।


এএম/আরআর-০৩