নিজস্ব প্রতিবেদক
সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২১
০৩:৫৫ পূর্বাহ্ন
আপডেট : সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২১
০৩:৫৫ পূর্বাহ্ন
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাইডলাইনে সেন্টার ফর এনআরবি’র হাইব্রিড কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকার শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত নতুন আশায় ‘নতুন পৃথিবী : জাতিসংঘ এবং বাংলাদেশ’ শীর্ষক কনফারেন্সে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করে কনফারেন্স এর উদ্বোধন করেন।
এসময় তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জলবায়ু ইস্যুর পাশাপাশি দুটি বিষয়কে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা এবং রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান ও আফগানিস্তাান পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে আশাব্যঞ্জক আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়গুলো দক্ষিণ এশিয়ার শান্তির জন্য প্রয়োজন।’
বক্তব্যে তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের আরও ব্যাপকভাবে দেশের কার্যক্রমে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।
উদ্বোধনী বক্তব্য দেন জাতিসংঘের বাংলাদেশ প্রধান মিয়া সেপ্পো এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর মিলার। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মশিউর রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে মূল আলোচনা উপস্থাপন করেন ওয়ার্ল্ড ব্যাংক গ্রুপের উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ডক্টর জাহিদ হোসেন। নির্ধারিত আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি জসিম উদ্দিন এবং বাংলাদেশ গার্মেন্টস এন্ড manufacturers অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফারুক হাসান। অনুষ্ঠানে সহযোগী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বক্তব্য দেন, এনওয়াই পিডি কর্মকর্তা ওয়ালটনসং। আলোচনা পর্বে বক্তব্য দেন, ভিয়েতনামে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজ, ইউএনডিপি কান্ট্রি ইকোনমিক নাজনীন আহমেদ, ইউএসএআইডি প্রোগ্রাম ইকোনমিস্ট ডেভিড কাওপার, বাংলাদেশের এনআইডি কার্ড প্রজেক্ট-এর প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল কাসেম ফজলুল কাদের। করোনা বিষয়ক সহযোগিতা কার্যক্রম বিষয়ে বক্তব্য দেন, আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশি ডক্টর জিয়াউদ্দিন আহমেদ, ব্রনাই হালাল ফুড অথোরিটি প্রধান কর্মকর্তা নূর রহমান, সেন্টার ফর এনআরবি'র বোর্ড সদস্য ইশতিয়াক আহমেদ চৌধুরী।
সেন্টার ফর এনআরবি চেয়ারপারসন এম এস সেকিল চৌধুরীর সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি মশিউর রহমান প্রবাসীদের অর্জিত আয় দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করেন। করোনাকালে প্রবাসীরা জীবিকা সংকটে পড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাদের (প্রবাসী) উপর নির্ভরশীল পরিবারগুলো আজ ক্ষতির সম্মুখীন। তাই, অভিবাসী কর্মীদের সুরক্ষার স্বার্থে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।’
অনুষ্ঠানের মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদেশি বিনিয়োগকারী দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে ২০১৯ সালে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৯০০ কোটি ডলারের বেশি। বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আগ্রহ ক্রমশ বাড়ছে।’
বাংলাদেশের তৈরি পিপিই যুক্তরাষ্ট্রকে উপহার হিসেবে প্রদান করায় তিনি বাংলাদেশের প্রতি কৃৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
জাতিসংঘের আবাসিক প্রধান তার বক্তৃতায় সেন্টার ফর এনআরবি’র কার্যক্রমে তিনি খুবই উৎসাহিত বোধ করছেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘অতীতেও আমি এই কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭৬ তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যে পুরস্কার পেয়েছেন তা বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের স্বীকৃতির স্মারক।’
তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের কাছে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেগুলো মোকাবেলায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।’
অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী উন্নত এবং অনুন্নত দেশের করোনাকালীন সহায়তার একটি সমন্বয় জরুরি।’
নাজনীন আহমেদ তার বক্তৃতায় বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং জাতিসংঘ একই সুঁতোয় কাজ করা অনেক জরুরি।’ তিনি সেন্টার ফর এনআরবি’র উদ্যোগটিকে একটি আন্তর্জাতিক প্রয়াস হিসেবে উল্লেখ করেন।
বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান তার বক্তৃতায় বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবদান, তাদের কার্যক্রম এবং এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা কামনা করেন।
স্বাগত বক্তব্যে সেন্টার ফর এনআরবি’র চেয়ারপারসন ও কনফারেন্স এর সভাপতি এম এস সেকিল চৌধুরী বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমরা আজ ইউএনজিএ সাইডলাইন কনফারেন্সে উপস্থিত হয়েছি। এটি আমাদের জন্য একটি ভাগ্যের বিষয়।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের নানান রীতি পরিবর্তিত হয়েছে। কাজের পরিস্থিতি, বাচ্চাদের স্কুল যাওয়া-আসা এবং ব্যবসার নীতিমালায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এ পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই আমাদের নীতি গ্রহণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। নতুন পৃথিবীর আলোকে আমাদের পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি দেশকে একে অন্যের সহায়তায় এগিয়ে আসতে হবে। করোনা বিশ্বকে একটি সত্যিকারের গেøাবাল ভিলেজে পরিণত করেছে। এক দেশের বিপর্যয় অন্য দেশের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং, কাউকে ফেলে রেখে নিজেকে নিরাপদ করা সম্ভব নয়।’
তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের উচিত হবে আরও বলিষ্ঠভাবে বিশ্বব্যাপী দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসা।’
তিনি বাংলাদেশে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করে এর গতি আরও বাড়ানোর আহ্বান জানান।
প্রবাসী বাংলাদেশীদের ব্যাপারে সেকিল চৌধুরী বলেন, ‘বিশ্বের ১৬২ দেশে ১৪ মিলিয়ন বাংলাদেশি কর্মীবাহিনী রয়েছেন, যারা বিশ্বের অর্থনীতিতে ভ‚মিকা রাখছেন। এখন প্রয়োজন নতুন পৃথিবী এবং নতুন পরিবেশের আলোকে তাদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা এবং তাদের জন্য উপযুক্ত কর্মক্ষেত্র নিশ্চয়তা প্রদান করা।’
তিনি আশা করেন এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দেশসমূহ এবং জাতিসংঘের সংস্থাগুলো কার্যকর ভ‚মিকা পালন করবে।
বাংলাদেশের প্রস্তুতি এবং কার্যক্রম সম্পর্কে সেকিল চৌধুরী বলেন, ‘কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনীতি এবং বিজ্ঞান নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। যাতে ১৬০ মিলিয়ন মানুষের অন্ন-বস্ত্রের ব্যবস্থা এবং তাদের জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিত করা যায়। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতাও প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘এক মিলিয়নের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বসবাস করছে। এটি বাংলাদেশের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ।’
তিনি বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশ নয়; বিশ্বব্যাপী যেসব জায়গায় মানুষ ঘরছাড়া হচ্ছে অথবা নানা কারণে মানুষ বিতাড়িত হচ্ছে তাদের ব্যাপারে জাতিসংঘের সংস্থাসমূহের নেতৃত্বে বলিষ্ঠ ভ‚মিকা গ্রহণ করা দরকার।’
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশ থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, প্রবাসী বাংলাদেশি এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ অংশ নেন এবং বিভিন্ন দেশ থেকে আগত ডিপ্লোমেটিক প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন।