নিজস্ব প্রতিবেদক
অক্টোবর ১৩, ২০২১
০৪:৪৭ পূর্বাহ্ন
আপডেট : অক্টোবর ১৩, ২০২১
০৪:৪৭ পূর্বাহ্ন
সিলেটে করোনা সংক্রমণ অনেকটা স্বস্তির পর্যায়ে। দৈনিক শনাক্তের হার এখন ১ শতাংশের ঘরে। কমেছে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও। এই অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে মানুষের চরম গাফিলতি দেখা যাচ্ছে। বাজার-অফিস-সভা-সমাবেশ সব জায়গায় কমেছে মাস্কের ব্যবহার।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ কমলেও করোনা একেবারে চলে যায়নি। তাই জনসমাগম হয় এমন জায়গায় মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে।
গত কয়েকদিন নগরের বিভিন্ন এলাকা, সরকারি-বেসরকারি অফিস, বাজার, শপিং মল ঘুরে দেখা যায়, সব জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি উধাও। বেশিরভাগ মানুষের মুখে নেই মাস্ক। যারাও মাস্ক পরেছেন তাদের তা রয়েছে থুতনিতে। এছাড়া গত আগস্টে সরকারি বিধি-নিষেধ উঠার পর নগরে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান বেড়েছে। এ সব অনুষ্ঠানে শারিরীক দুরত্বের কোনো বালাই নেই। মাস্ক ব্যবহারেও রয়েছে যথেষ্ট অবহেলা। শুধু সভা-সমাবেশই নয়। মার্কেটে-বাজার যানবাহনে যেন মানুষ ভুলতে বসেছে স্বাস্থ্যবিধির কথা। দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি ছুটিতে গেছে।
এদিকে গত সেপ্টেম্বর থেকে খুলে দেওয়া হয়েছে স্কুল-কলেজ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধি মানলেও বাইরে অভিভাবকদের জটলা দেখা যায়। এ জটলায় বেশিরভাগ অভিভাবক থাকছেন মাস্কহীন। অফিস-আদালত-ব্যাংকসহ সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি অফিসে ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ এখন শুধু ঘোষণাতেই রয়েছে। বাস্তবে এ সব প্রতিষ্ঠানে সেবাদাতা ও গ্রহীতা উভয়কে সঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে না।
নগরের আম্বরখানায় বাজার করতে আসা ৫০ উর্ধ্ব রফিক আলী বলেন, ‘টিকা নিয়েছি একডোজ। এছাড়া করোনাও কমে গেছে তাই মাস্ক ব্যবহার করতে ভালো লাগে না।’
একই কথা বলেন সিলেট সিটি করপোরেশনে সেবা নিতে আসা রুহেল চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সিলেটে এখন প্রচন্ড গরম ফলে মাস্ক ব্যবহার করা অসম্ভব। এছাড়া আমার দুই ডোজ টিকা নেওয়া আছে।’
তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। তবে সংক্রমণ শেষ নয়। তাই অবশ্যই মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। টিকা নেওয়া থাকলেও মাস্ক পড়তে হবে।
গত বছরের ৫ এপ্রিল সিলেটে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ঐ বছরের মে থেকে জুনে শনাক্ত ও মৃত্যু বাড়তে থাকে। তবে, আগস্টের পর থেকে তা ছিল নি¤œমুখী। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও মার্চের শেষ দিকে আবারও বাড়তে থাকে। এপ্রিলের পর সরকারি বিধি-নিষেধে সংক্রমণের হার কিছুটা কমলেও গত ঈদুল ফিতরের পর আবারও সংক্রমণ বাড়তে শুরু হয়। জুলাইয়ে তা বাড়ে আশঙ্কাজনক হারে।
এদিকে, জুলাইয়ে সংক্রমণের হার চ‚ড়ায় থাকায় সিলেটের সব আইসিইউ ও সাধারণ শয্যা রোগীতে পূর্ণ হয়ে যায়। বিশেষ করে সিলেট মহানগরের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে শয্যা পাওয়া দুরূহ হয়ে উঠে। রোগীর চাপে হাসপাতালগুলো শয্যা ও আইসিইউ বাড়িয়েও রোগী জায়গা দিতে পারছিল না। শয্যা না পেয়ে হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরেও রোগী মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে। তবে মধ্য আগস্ট থেকে সিলেট কমতে শুরু করে করোনা সংক্রমণ।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. শুক দেব পাল সিলেট মিররকে বলেন, ‘করোনা শনাক্তের হার অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। তবে একেবারে কমে গেছে তা বলা যাবে না। তাই ঘরের বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। টিকা নেওয়ার পরও অনেকে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে তাদের মৃত্যু ঝুঁকি কম থাকে। তাই টিকা নিলেও করোনা আক্রান্ত না হতে চাইলে মাস্ক পরিধান করতে হবে।’
আর সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্ত বলেন, ‘সিলেটে রোগী শনাক্তের হার বা মৃত্যু দুটোই এখন কম। তবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত বা মাস্ক ব্যবহারে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। হাট-বাজার বা জনসমাগম হয় এমন জায়গায় গেলে অবশ্যই মাস্ক নিশ্চিত করতে হবে।’
তবে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিতে জেলা প্রশাসনের কোনো অভিযান আছে কি না তা জানতে সিলেটে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এ এইচ এম মাহফুজুর রহমানকে ফোন দিলে তা ধরেননি।
এনএইচ/আরসি-০২