অসংখ্য আঘাতে আধাঘন্টার মধ্যেই মারা যান অনন্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক


অক্টোবর ১৩, ২০২১
০৫:৫৫ পূর্বাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ১৩, ২০২১
০৫:৫৫ পূর্বাহ্ন



অসংখ্য আঘাতে আধাঘন্টার মধ্যেই মারা যান অনন্ত
# ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের সাক্ষ্য

বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশকে হত্যার উদ্দেশ্যে অসংখ্য আঘাত করা হয়। এ সব আঘাতের কারণেই আধাঘন্টার ভিতরে তার মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় এ কথা বলেছেন মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান শামসুল ইসলাম। তিনি অনন্তের লাশের ময়নাতদন্তকারী ও ফরেনসিক আলামত সংগ্রহকারী। 

আদালত সূত্রে জানা গেছে, শামসুল ইসলাম ছাড়াও মামলার আরেক সাক্ষী পুলিশ কনস্টেবল রাসেল আহমদ মঙ্গলবার আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। রাসেল আহমদ ঘটনাস্থল থেকে অনন্তের লাশ মেডিকেল কলেজর মর্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আগামী ২৬ অক্টোবর পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য করেছেন সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল আমিন বিপ্লব। 

আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ফরেনসিক আলামত ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুতের বিভিন্ন বর্ণনা দিয়ে শামসুল ইসলাম আদালতকে বলেন, অনন্তকে হত্যার উদ্দেশ্যেই তার শরীরে অসংখ্য আঘাত করা হয়। একের পর এক আঘাতের কারণে আধঘণ্টার মধ্যেই অনন্ত মারা যান। শরীরের কোন অংশে কী ধরণের আঘাতে মৃত্যু নিশ্চিত হয়, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে আদালতে এসব বিস্তারিত বর্ণনা দেন তিনি। 

বাদীপক্ষের আইনজীবী প্যানেলের প্রধান এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম শাহিন এ সব তথ্য নিশ্চিত করে সিলেট মিররকে বলেন, ‘আজ এ মামলায় দুজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। এর মধ্যে অনন্ত বিজয়ের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকও ছিলেন। এ সময় তিনি আদালতে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের আলোকে বিস্তারিত বর্ণনা দেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগামী ২৬ অক্টোবর আদালত পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য করেছেন। এখন পর্যন্ত ৮ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেওয়ার বাকি আছেন। তবে সবাইকে পাওয়াও এখন সম্ভব না। তাই গুরুত্বপূর্ণ তিন জনের সাক্ষ্য নিতে পারলে এ মামলা যুক্তিতর্কের ধাপে চলে যাবে।’

এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম শাহিন বলেন, ‘দুইজন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও একজন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞের সাক্ষ্যগ্রহণকে আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। আগামী তারিখে সাক্ষ্য দিতে তাদের সমন পাঠানো হবে।’

প্রসঙ্গত, গত ২০১৫ সালের ১২ মে সিলেট নগরের সুবিদবাজারের কলাপাড়া এলাকার নিজ বাসার সামনে খুন হন অনন্ত বিজয় দাশ। বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখির পাশাপাশি তিনি ‘যুক্তি’ নামে বিজ্ঞানবিষয়ক একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। এছাড়া বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন অনন্ত। 

হত্যাকাণ্ডের এক দিন পর অনন্তের বড় ভাই রত্নেশ্বর দাশ বাদী হয়ে সিলেট বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাত চারজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। এতে বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখির কারণে অনন্তকে ‘উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী’ পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে বলে অভিযোগ করা হয়। 

মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিদের মধ্যে কানাইঘাটের আবুল হোসেন (২৫), খালপার তালবাড়ির ফয়সাল আহমদ (২৭) ও সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বিরেন্দ্রনগরের (বাগলী) মামুনুর রশীদ (২৫) পলাতক। কানাইঘাটের পূর্ব ফালজুর গ্রামের মান্নান ইয়াইয়া ওরফে মান্নান রাহী ওরফে এ বি মান্নান ইয়াইয়া ওরফে ইবনে মঈন (২৪) কারাগারে মৃত্যুবরণ করেছেন। এছাড়া সিলেট নগরের রিকাবীবাজার এলাকায় বসবাসকারী সাফিউর রহমান ফারাবী ওরফে ফারাবী সাফিউর রহমান (৩০) ও কানাইঘাটের ফালজুর গ্রামের আবুল খায়ের রশীদ আহমদ (২৫) কারাগারে আছেন। ফারাবী ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলারও আসামি। 

মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবীরা জানান, গত ১৯ সালের ৭ মে সিলেটের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। কিন্তু সাক্ষীদের অনুপস্থিতির কারণে বারবার পেছানো হয় সাক্ষ্য গ্রহণ। দীর্ঘদিন সিলেটের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ চলার পর গেল বছর মামলাটি সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।

এনএইচ/আরসি-০৩