‘সাম্প্রদায়িক হামলায় জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক


অক্টোবর ১৭, ২০২১
০৭:১৯ পূর্বাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ১৭, ২০২১
০৭:১৯ পূর্বাহ্ন



‘সাম্প্রদায়িক হামলায় জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে’

দুর্গাপূজা চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘সাম্প্রদায়িক হামলা’, হিন্দুদের পূজামণ্ডপ ও বাড়িঘরে হামলা-লুটপাটের প্রতিবাদে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে। শনিবার (১৬ অক্টোবর) সিলেটের নানা ধর্মের, শ্রেণি-পেশার মানুষ বিক্ষোভ অংশ নেন। 

বিক্ষোভে বক্তারা বলেন, ‘দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রধান উৎসবে পরিকল্পিতভাবে আক্রমণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় আমরা লজ্জিত ও ক্ষুব্ধ। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত এই দেশে সবার সমান অধিকার রয়েছে। রাষ্ট্রকে সেই অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। কারণ রাষ্ট্র তৎপর হলে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীরা এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর দুঃসাহস পেত না।’

সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন : দুর্গাপূজা চালাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস, পূজামণ্ডপ ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরে হামলা-লুটপাটের প্রতিবাদে সিলেটে বিক্ষোভ করেছে সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন। ব্যানারে লেখা ছিল ‘দুর্গাপূজা উদযাপনকালে সংঘঠিত ঘটনায় আমরা ব্যথিত, লজ্জ্বিত ও ক্ষুব্ধ’। শনিবার বিকেল চারটায় নগরের রিকাবীবাজার পয়েন্টে প্রথমে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে রিকাবীবাজার থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে চৌহাট্টা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। 

সাংবাদিক আলিম শাহের সঞ্চালনায় নাগরিক প্রতিবাদে মূল বক্তব্য দেন, সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল করিম কিম। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সভাপতি মিশফাক আহমদ মিশু, তথ্যচিত্র নির্মাতা নিরঞ্জন দে যাদু, লেখক-গবেষক শাহরিয়ার বিপ্লব, বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেট জেলা সমন্বয়ক উজ্জ্বল রায়, ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বাপ্পা ঘোষ চৌধুরী, সহ-সভাপতি মইন উদ্দিন মন্জু, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছামির মাহমুদ, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট গোলাম সোবহান চৌধুরী, দুষ্কাল প্রতিরোধ আন্দোলনের সংগঠক দেবাশীষ দেবু, শিক্ষক ও সংগঠক প্রণবকান্তি দেব, লেখক সাংবাদিক শামস শামীম, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক মো. নাবিল এইচ,  সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট সিলেট নগরের সভাপতি সঞ্জয় কান্ত দাস প্রমুখ। 

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘দুর্গাপূজা হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। কিংন্তু এবার তারা আনন্দের সঙ্গে উৎসব করতে পারেননি। তারা ভয়ে ছিলেন। অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন। মÐপ ভাঙচুর হয়েছে। দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য আমরা একটি ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছি। তাদের ধর্মচর্চার অধিকারকেও আমরা হরণ করছি। এই দায় রাষ্ট্রের, এই দায় আমারও।’

বক্তারা আরও বলেন, ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের উপর যেভাবে হামলা চালানো হয়েছে তা এক কথায় বর্বরোচিত। কোনো সভ্য দেশে, কোনো বিবেকমান মানুষ এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে না। ন্যাক্কাজনক এই ঘটনার শক্ত প্রতিবাদ হওয়া উচিত। একই সঙ্গে যারা এসব তান্ডবের সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে দ্রæত বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। যাতে আগামীতে আর কেউ এমন ঘটনা ঘটাতে না পারে। আমাদের সম্প্রীতিতে আঘাত করতে না পারে।’

সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সমাজকর্মী ফকির জাকির হোসেন সোহেল, হজরত শাহজালাল (র.) দরাগার খাদেম মুজাহিদ হোসেন মুনিম, মদন মোহন কলেজের শিক্ষক উজ্জ্বল দাস, সংগঠক মাহবুব রাসেল, শিক্ষক সুমন রায়, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী ওয়াজিহ আহমেদ ও রুবেল মিয়া, নাট্যকর্মী রুবেল আহমদ কুয়াশা, তন্বী দেব প্রমুখ। 

পূজা উদযাপন পরিষদ সিলেট জেলা ও মহানগর শাখা: শারদীয় দুর্গাপূজায় দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দিরে ও পূজামণ্ডপে অগ্নিসংযোগ, প্রতিমা ভাঙচুর, লুটপাট এবং বাসাবাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে পূজা উদযাপন পরিষদ সিলেট জেলা ও মহানগর শাখার যৌথ উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার বিকেলে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। 

সিলেট মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুব্রত দেবের সভাপতিত্বে ও জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রঞ্জন ঘোষের পরিচালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য দেন, সিলেট মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত। 

বক্তব্য দেন, পূজা পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃত্যুঞ্জয় ধর ভোলা, জেলা ঐক্য পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট প্রদীপ কুমার ভট্টাচার্য্য, সিলেট জেলা পূজা পরিষদের সভাপতি গোপিকা শ্যাম পুরকায়স্থ চয়ন, ইসকন সিলেটের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ ভক্ত অদ্বৈত নবদ্বীপ স্বামী, পূজা পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা ডা. হিমাদ্রী শেখর রায়, জেলা ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কৃপেশ পাল, পূজা পরিষদ কেন্দ্রীয় সদস্য অধ্যাপক রজত কান্তি ভট্টাচার্য্য, মহানগর ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ দেব, জেলা মহিলা ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট বনানী দাস ইভা, মহানগর আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক তপন মিত্র, ইস্কন সিলেট যুব গোষ্ঠী পরিচালক দেবশ্রী শ্রীবাস দাস বহ্মচারী প্রমুখ। 

এ সময় বক্তারা বলেন, ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের পরিকল্পিতভাবে আক্রমণ করে হত্যা ও ধর্ষণের মাধ্যমে দেশে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে; যা মোটেই কাম্য নয়। মন্দির ও বাসাবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। রাষ্ট্র তৎপর হলে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীরা এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তির দুঃসাহস পেত না।’ অবিলম্বে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান তারা।

এনএইচ/আরসি-০৭