কবির আহমদ, কোম্পানীগঞ্জ
অক্টোবর ১৮, ২০২১
০৪:৩২ পূর্বাহ্ন
আপডেট : অক্টোবর ১৮, ২০২১
০৪:৩২ পূর্বাহ্ন
জাল দলিল সম্পাদন কিংবা রক্ষিত দলিলের পাতা বদল অথবা জাল স্বাক্ষরে একজনের জমি অন্যজনের নামে সম্পাদন- এসবই যেন সম্ভব কোম্পানীগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে। দলিল লেখক, স্ট্যাম্প ভেন্ডার ও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী মিলে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী সিন্ডিকেট। আর সেই সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন সেবা প্রত্যাশীরা। নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে জন গুরুত্বপূর্ণ উপজেলার এ সাব-রেজিস্ট্রি অফিস।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে জাল দলিল সম্পাদন, রক্ষিত দলিলের পাতা পরিবর্তন ও জাল স্বাক্ষর দিয়ে একজনের জমি অন্যজনের নামে সম্পাদনের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। সম্প্রতি এ বিষয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই সুজিত চক্রবর্তী আদালতে অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।
উপজেলার কালাইরাগের আব্দুল মালিক ২০১৮ সালে সাব-রেজিস্ট্রার, দলিল লেখক, অফিস সহায়ক ছাড়াও একই উপজেলার দলইগ্রামের তোতা মিয়া, শাহজাহান, আমির উদ্দিন, জালাল উদ্দিনসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি দেওয়ানি মামলা করেন।
ওই মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বরে কোম্পানীগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে বিবাদীরা সরকারি খাস খতিয়ানের ৯৬ শতক জায়গা ১৯৫৪ সালের সেটেলমেন্ট জরিপে রেকর্ড দেখিয়ে সাবকবলা দলিল সম্পাদন করেন। সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের লোকদের সহায়তায় তারা রক্ষিত দলিলের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর পৃষ্ঠা বদলে ফেলেন। এমনকি দলিলের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর পৃষ্ঠায় জাল স্বাক্ষরও করেন।
মামলাটি প্রথমে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। পিবিআই তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করলে ওই প্রতিবেদনে নারাজি দেন বাদী। বাদীর নারাজির প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ চলতি বছরের শুরুর দিকে অধিকতর তদন্ত শুরু করে।
তদন্ত শেষে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সিলেটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এতে তিনি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের মোহরার আব্দুল মালিক, নুরুল ইসলাম, অফিস সহায়ক মফিজ মিয়াসহ ১১ জন জড়িত থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেন। জাল জালিয়াতির বিষয়টি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদেনে উল্লেখ করায় এলাকায় চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
সাব রেজিস্ট্রার অফিসের দুর্নীতির একাধিক ভুক্তভোগী দৈনিক সিলেট মিরর-কে জানিয়েছেন- ওই অফিসে ঘুষ ছাড়া সাধারণ কোন কাজ করতে পারে না। এমনকি ঘুষের টাকা না দিলে ১ মাসের একটি কাজ এক বছরেও হয় না। এমন পরিস্থিতিতে মানুষের কষ্টের শেষ নেই।
মামলার বাদী আব্দুল মালিক মিয়া বলেন, আমার ক্রয়কৃত দখলীয় জমিতে প্রচুর পরিমাণ মূল্যবান খনিজ পাথর রয়েছে। সেই পাথরের লোভে আমির উদ্দিন ও জালাল উদ্দিন আমার জমি দখল নিতে জাল দলিল তৈরী করেছে। আদালতের হুকুমে জেলা গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে দলিলের পৃষ্টা পালটানো, জাল দলিল ও জাল স্বাক্ষরের বিষয়ে ফরেনসিক রিপোর্টে প্রমাণ পাওয়া গেছে। যারা এই জালজালিয়াতির সঙ্গে জড়িত আমি প্রত্যেকের শাস্তি দাবি করছি।।
উপজেলার দক্ষিণ রাজনগর নতুন বস্তি গ্রামের মখলিছুর রহমানের ছেলে মো. শামীম উজ্জামান বলেন, ভূমিখেকোদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাব- রেজিস্ট্রার আমার ক্রয়কৃত জমির মূল দলিলের পাতা বদল করে খরিদ্দারের জায়গায় আমার সঙ্গে একাধিক ব্যক্তির নাম সংযোজন করে নিয়েছেন। আমি গত বছরের ৭ই অক্টোবর কোম্পানীগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের ৮৬৯ ও ৮৭০ নম্বর সাফ কবলা দলিলমূলে কোম্পানীগঞ্জ ডাকবাংলো রোড এলাকার মৃত রাজ্জাক আলীর ছেলে মো. নিজাম উদ্দিনের কাছ থেকে সাড়ে ৬৮ লাখ টাকায় ২.২৫ একর জমি ক্রয় করি ও দখলপ্রাপ্ত হই। আমি সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে সাব-রেজিস্ট্রার ও জড়িত অন্য কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
আরসি-০১