উজ্জ্বল ধর, ওসমানীনগর
অক্টোবর ২৩, ২০২১
১২:১৭ পূর্বাহ্ন
আপডেট : অক্টোবর ২৩, ২০২১
১২:১৭ পূর্বাহ্ন
গায়েবি মসজিদ। নামটার মধ্যে একটা রহস্যের ছোঁয়া রয়েছে। এলাকার প্রবীণ অনেকের ধারণাটাও তেমন ধোঁয়াচ্ছন্ন। সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার তাজপুর-বালাগঞ্জ সড়কের পাশে হাজার বছরের ইতিহাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে উছমানপুর জামে (গায়েবি) মসজিদ।
মসজিদটি কত শতকে নির্মাণ করা হয়েছিল সে নিয়ে রয়েছে নানা মত। এ বিষয়ে সঠিক প্রমাণাদি পাওয়া যায়নি। তবে ধারণ করা হচ্ছে শাহজালাল (র.) এর সিলেট আগমনেরও আগে মুসলিম বসতির নিদর্শন এই মসজিদটি প্রায় ৮শ’ থেকে হাজার বছর আগের স্থাপনা।
কেউ কেউ ধারণা করছেন, শাহজালাল (র.) এর সফর সঙ্গী উছমান বোগদাদী, সৈয়দ মাহবুব খন্দকার ও সৈয়দ তাহির খন্দকারের সাধনার স্থান হিসেবে অলৌকিকভাবে স্থাপিত হয়েছিল মসজিদটি।
ঐতিহাসিকদের মতে, হযরত শাহজালালের (রঃ) গৌড় বিজয়ের আরও পূর্বে আরবিয় বণিক বা ধর্ম প্রচারক দল বুড়ি বরাক (বরবক্র) নদীপথে এসে (তৎকালিন ভগবানপুর) উছমানপুরে আস্তানা স্থাপন করেন। সে সময় এলাকায় বাস ছিল বৌদ্ধ বা সনাতন হিন্দু ধর্ম্বাবলম্বীদের। তখন আরবীয় বণিক বা ধর্ম প্রচারকরা মসজিদটি নির্মাণ করান। পরবর্তীতে এলাকায় বিভিন্ন রোগ বালাই, ভয়াবহ বন্যা-খরাজনিত দুর্ভিক্ষসহ বিভিন্ন কারণে মুসলমানরা ওই স্থান ত্যাগ করেন। এরপর সম্পুর্ণ মসজিদটিই ঘন জঙ্গল ও উঁইঢিবিতে ঢাকা পড়ে।
পরবর্তীতে হজরত শাহ্জালাল (র.)-এর তিন সফর সঙ্গী (১৩০০-১৩৫০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে) উছমান বোগদাদী, সৈয়দ মাহবুব খন্দকার ও সৈয়দ তাহির খন্দকার তৎকালিন ভগবানপুর এসে বসতি গড়ার জন্য স্থান খুঁজতে থাকেন। উঁচু একটি টিলা পেয়ে সেখানে বসতি স্থাপনের জন্য মাটি কাটতে শুরু করেন। একপর্যায়ে মাটির নিচ থেকে পাকা স্থাপনার একটি অংশ বেরিয়ে আসে।
এসময় এটি মসজিদ নাকি হিন্দু বা বৌদ্ধদের উপাসনালয় তা নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। পরবর্তীতে কাঠামো, সুলতান খানা ও পূর্বমুখী দরজা দেখে স্থাপনাটি মসজিদ বলেই প্রতিয়মাণ হয়। এরপর থেকে এটি গায়েবি মসজিদ নামে সবার কাছে পরিচিতি লাভ করে। অতঃপর এলাকার নাম ভগবানপুর পরিবর্তন করে উছমান বোগদাদীর নামানুসারে ওই এলাকার নামকরণ করা হয় ‘উছমানপুর’।
স্থানীয় প্রবীণরা জানান, মসজিদটি কীভাবে স্থাপিত হয়েছিল তা তাদের পূর্ববর্তীরাও জানেন না। তবে তারা এটিকে গায়েবি মসজিদ নামেই জেনে আসছেন। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে মসজিদটি দেখার জন্য অসংখ্য মানুষ ছুটে আসেন। মসজিদটির ঐতিহ্য ধরে রাখতে সচেষ্ট রয়েছে পুরো গ্রামবাসী।
মসজিদ কমিটির কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শাহজাহান জানান, সবার সহযোগিতায় মসজিদটিকে ব্যবহারের উপযোগী করে নামাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিদিন মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায় করা হয়।
‘বালাগঞ্জের ইতিবৃত্ত’ বইয়ের লেখক আব্দুল হাই মোশাহিদ বলেন, উছমানপুর গায়েবি মসজিদ কবে বা কারা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সে ব্যাপারে তেমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এই মসজিদটি হযরত শাহজালালের (র.) আগমনের অনেক পূর্ব থেকে এ অঞ্চলে মুসলিম বসতির সাক্ষ্য বহন করে। তিনি হাজার বছরের পুরনো এই মসজিদ সংরক্ষণে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
আরসি-১১