ওলিদ মিয়া, মাধবপুর
নভেম্বর ১৯, ২০২১
১২:৩০ অপরাহ্ন
আপডেট : নভেম্বর ১৯, ২০২১
১২:৩০ অপরাহ্ন
ইতিহাসের অমানবিক এক প্রথার সাক্ষী হবিগঞ্জের মাধবপুরের সতীদাহ মন্দির। উপজেলার আন্দিউড়া গ্রামের মধ্যভাগে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এ মন্দির।
খ্রিষ্টপূর্ব চার হাজার বছর আগে গুপ্ত সাম্রাজ্যের পূর্ব থেকে সতীদাহ প্রথার প্রচলন ছিল। কালক্রমে প্রাচীন হিন্দু সমাজের নয়শ বছরের এ প্রথা ইংরেজ শাসনামলেও চালু ছিল। কথিত আছে, রমানাথ বিশারদের পূর্ব পুরুষগণ আনুমানিক ৫০০ বছর আগে ত্রিপুরায় হিন্দু রাজার অধীন শ্রীহট্টের বেজুড়া গ্রামে বসতি স্থাপন করেন।
রমানাথ বিশারদের বাবা ছিলেন রতিদেব তর্কপঞ্চানন এবং মা সুনীতি দেবী। সর্বশাস্ত্রে ব্যুৎপত্তির কারণে তৎকালীন নবদ্বীপের সংস্কৃত শিক্ষার অধ্যাপকমণ্ডলী রমানাথকে সর্বভৌম বিশারদ উপাধিতে ভূষিত করেন।
রমানাথের নামের সঙ্গে বিশারদ উপাধি যোগ হয়ে পরে বিশারদ বংশে পরিচিতি লাভ করে। সেই রমানাথ বিশারদের মৃত্যুর পর স্ত্রী বিষ্ণুপ্রিয়াকেও একই চিতায় দাহ করা হয়। রমানাথ বিশারদের ছেলে রূপেশ্বর ও পুত্রবধূ ভাগীরতি এবং নাতি রতিনাথ ও নাতবৌ অপূর্বা দেবীকে সহমৃতা হিসেবে এখানেই শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়।
রমানাথ বিশারদের আদেশে পৌত্র শিবরাম ন্যামপঞ্চানন একাদশ বঙ্গাব্দের শুরুর দিকে এই শ্মশ্মানভূমিতে মন্দির নির্মাণ করে বাবার নামানুসারে রূপেশ্বর শিবলিঙ্গ ও সতীদাহ মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন; যা কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে।
কালের আবর্তে ওই এলাকায় বসবাসরত সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারের অধিকাংশ লোক দেশত্যাগ করেন। মন্দির নির্মাণকারীদের উত্তসূরি ও ভিটেমাটি নিশ্চিহ্ন হলেও টিকে আছে সতীদাহ মন্দিরটি। প্রাচীনতম মন্দিরটিকে আচ্ছাধন করে রেখেছে পরগাছা। প্রবেশপথ ছাড়া পুরো মন্দিরই বটগাছে আচ্ছাদিত। বটগাছটি বিরাট আকার ধারণ করে শীতল ছায়ায় আঁকড়ে রেখেছে মন্দিরসহ আশপাশের কয়েকশ ফুট জায়গাকে।
চৈত্রের খরতাপে পথিক বটবৃক্ষের ছায়ায় বসে ঝিরঝির বাতাসে ক্লান্তদেহ শান্ত করেন। পাখীরা খুঁজে নিয়েছে গাছে আপন নিবাস। মন্দিরের আরাধনায় কোনো সেবায়েত কিংবা পুরোহিত না থাকলেও আশপাশে বসবাসরত সনাতন ধর্মালম্বীরা নিয়মিত পূজা দিয়ে থাকেন।
সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে রাজা রাম মোহন রায় সামাজিক আন্দোলন করলে ১৮২৯ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে তৎকালীন বাংলার গভর্নর লর্ড উইলিয়াম বেন্টিং আনুষ্ঠানিকভাবে সতীদাহ প্রথা অবৈধ ও অমানবিক ঘোষণা করেছিলেন। সতীদাহ বা সহমরণ প্রথা অবৈধ ঘোষণার প্রতিবাদ করে বড় লাটের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ প্রথা পুনঃপ্রচলনের জন্য সম্ভ্রান্ত হিন্দু বংশীয় লোকজন দাবি জানিয়েছিলেন।
১৯০ বছর আগে অবৈধ ঘোষিত সতীদাহ প্রথার মন্দিরটি বর্তমান প্রজন্মকে ধর্মীয় রীতির সেকাল একাল অনুধাবন করার সুযোগ করে দেয় বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
সতীদাহ মন্দির রক্ষণাবেক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক শিক্ষক গঙ্গেশ চন্দ্র দাস সুবল বলেন, ‘মন্দিরটি সনাতন ধর্মীয় রীতি নীতির ঐতিহাসিক নিদর্শন। হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্ট, বর্তমান সরকারের অনুদান এবং স্থানীয় সনাতনী ধর্মালম্বী লোকজনের সহযোগিতায় ও পৃষ্ঠপোষকতায় শ্রী শ্রী শিব মন্দির ও সতীদাহ মন্দিরটিকে আধুনিক রূপে সুসজ্জিত করার প্রচেষ্টা চলছে। প্রতিদিনই পূজা দেওয়া ছাড়াও প্রতি বছরের অগ্রহায়ণের শুক্লা ত্রয়োদশীতে বৃহদাকারে পূজা আয়োজন করা হয়।’
আরসি-১৪