মাধবপুরে লাল সাইবোর্ডে বেকায়দায় পরিবারের সদস্যরা

মোহা. অলিদ মিয়া, মাধবপুর


নভেম্বর ২০, ২০২১
০১:১৪ অপরাহ্ন


আপডেট : নভেম্বর ২০, ২০২১
০১:১৪ অপরাহ্ন



মাধবপুরে লাল সাইবোর্ডে বেকায়দায় পরিবারের সদস্যরা

‘এই লাল সাইনবোর্ড এখন আমাদের পরিবারের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এভাবে সাইনবোর্ড টানিয়ে বেইজ্জতি করার চেয়ে পরিবারের সবাইকে বিষ খাওয়াইয়া সবাইকে মাইরা যান। কেউ কিছু বলবে না।’ 

এভাবেই আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলেন কৃষ্ণপুর গ্রামের ষাঠোর্ধ্ব বাবুল মিয়া। তিনি বলেন, ‘১০-১২ দিন আগে  প্রতিবেশি বলু মিয়াকে গাঁজার মামলা দিয়ে জেলে দিয়েছে রাজেন্দ্রপুর ক্যাম্পের বিজিবি। জেলে দেওয়ার কয়েক দিন পরই এভাবে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়েছে। একদিকে লজ্জায় মুখ দেখানো যাচ্ছে না, অন্যদিকে বলু মিয়ার পরিবারের লোকজন অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। স্থানীয় স্কুলের ২য় শ্রেণির ছাত্রী বলু মিয়ার শিশু কন্যা মারুফা এখন তার সহপাঠী ও খেলার সঙ্গীদের সঙ্গে মিশতে পারছে না। অপমান সইতে হচ্ছে সাইনবোর্ড লাগানো বাড়ির বাসিন্দা হিসেবে।’

শুধু কৃষ্ণপুর গ্রামের বলু মিয়ার বাড়িই নয়, পার্শ্ববর্তী রাজেন্দ্রপুর গ্রামের কারাবাসকারী আহাদ মিয়ার বাড়িতেও অনুরুপ দৃশ্য দেখা গেছে। একই হতাশা তাদের কণ্ঠেও।

শুক্রবার (২০ নভেম্বর) রাজেন্দ্রপুর গ্রামের আহাদ মিয়ার পরিবারের কলেজ পড়ুয়া ছেলে ইমন মিয়া বলেন, ‘মাদক সেবনে বাধা দেওয়ায় আজ আমার আব্বাকে জেলে যেতে হয়েছে।’ 

আহাদ মিয়ার স্ত্রী তিন সন্তানের জননী নাজমা বেগম, ওই গ্রামের মুরুব্বী ফুল মিয়া ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী টুক্কু মিয়া বলেন, ‘সাদা পোশাকে বিজিবি গত ২১ অক্টোবর আহাদ মিয়াকে পুকুর পাড় থেকে ধরে নিয়ে যায়। পরে তার কাছ থেকে ইয়াবা ট্যাবলেট পাওয়ার আপরাধে থানায় মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়।’

আহাদ মিয়ার স্ত্রী নাজমা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেগুলো এখন আর স্কুল-কলেজে ঠিকমতো যায় না। সাইনবোর্ড লাগানোর ফলে পাশের বাড়ির লোকজনসহ ছেলেদের বন্ধুরা লজ্জা দেয়।’

একইভাবে আক্ষেপ করেন চৌমুহনী ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের মাদক ব্যবসায়ীর বাড়ি হিসেবে চিহ্নিত করা কাওছার মিয়ার ছোট বোন কমলপুর দাখিল মাদরাসার পরীক্ষার্থী শারমীন আক্তার।

তিনি বলেন, ‘লাল সাইনবোর্ড কাল হয়েছে। এখানে আমাদের বাপ চাচাদের ২০টি ঘর আছে। আমাদের বাড়ির সামনে মাদক ব্যবসায়ীর বাড়ি লিখা সাইনবোর্ড কাল হয়ে গেছে। এখন আমাদের গোষ্ঠীর কারো সঙ্গে অন্যরা আত্মীয়তা করতেও অনাগ্রহ প্রকাশ করবে।’

লোকলজ্জা ও সামাজিকভাবে বিপাকে পড়ার করুণ সুর কমলপুর গ্রামের স্বপন মিয়া, খালেক মিয়া, জানু মিয়া, রামনগর গ্রামের জয়নাল মিয়া, সফু মিয়াসহ অনেকের পরিবারের সদস্যদেরও। 

রামনগর গ্রামের ধনু মিয়া (৫০) জানান, তাকে ষড়যন্ত্র করে অতীতে মাদক মামলায় জেলে পাঠানো হয়েছে। গত বছর ধনু মিয়াসহ সীমান্ত এলাকার ৭৫ জন ৫৫ বিজিবি’র কোম্পানি কমান্ডারের কাছে গিয়ে মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকবে না মর্মে অঙ্গীকার করে আসে। কিন্তু গত ১৭ নভেম্বর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তার বাড়িসহ বিভিন্ন বাড়িতে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়।

ধনু মিয়াসহ সাইনবোর্ড টানানো বিভিন্ন বাড়ির লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সীমান্ত এলাকায় যারা মাদকের গডফাদার, যাদের বিরুদ্ধে ১০-১২ টা মামলা আছে তাদের বাড়িতে সাইনবোর্ড টানানো হয়নি। আর ষড়যন্ত্রমূলক ২-১টা মামলায় কিংবা দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ায় আসামিদের বাড়িকে মাদক ব্যবসায়ীর বাড়ি হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় আমরা সামাজিকভাবে হেয় হচ্ছি।’

এ বিষয়ে ৫৫ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল এস এন এম সামীউন্নবী বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কর্তৃক ধৃত মাদক ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করতে এ কর্যক্রম চালানো হচ্ছে। এ উদ্যোগ মাদক নির্মূলে সহায়তা করবে। 

উল্লেখ্য, গত ১৭ নভেম্বর হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলাধীন সীমান্তবর্তী বহরা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর, রাজেন্দ্রপুর, শ্রীধরপুর, চৌমুহনী ইউনিয়নের রামনগর, কমলপুর গ্রামের ১০ জনের বাড়িকে মাদক ব্যবসায়ীর বাড়ি হিসেবে চিহ্নিত করে লালা সাইনবোর্ড টানায় বিজিবি।

আরসি-১২