জিয়াউল হক জিয়া, কুলাউড়া
ডিসেম্বর ১৩, ২০২১
১১:২৬ পূর্বাহ্ন
আপডেট : ডিসেম্বর ১৩, ২০২১
১১:২৬ পূর্বাহ্ন
সিংরাই এক ধরনের জলজ ফল, যা জলাভ‚মির বিল-ঝিলে জন্মে থাকে। স্থানীয় লোকজন এটাকে ‘সিংরা বা হিঙ্গাই’ বলে ডাকেন। শীত মৌসুমের শুরু থেকে মাঝামাঝি সময়ে দেশের বিভিন্ন হাওর, ডোবা ও পুকুরে দেখা মিলত সিংরার। শুধু সিংরা নয় আরও অসংখ্য জলজ ফল ও শাক-সবজি পাওয়া যেত হাওরগুলোতে। যেগুলো এখন বিলুপ্তপ্রায়।
নভেম্বর-ডিসেম্বরে হাকালুকি হাওরে নানা জাতের জলজ ফল সংগ্রহ করতে সিলেটের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে লোকজন আসতেন। সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য। অনেকে সিংরাসহ নানা জলজ ফল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
একসময় হাওরগুলোতে নানা জাতের জলজ ফল, শাকসবজি, শাপলা-শালুক, পানিফল, ওকল, মাখনা, ড্যাপ, কলমিশাক, সেঞ্চি, হেলেঞ্চা, মালঞ্চ পাওয়া যেত। এসব শাকসবজি ও ফলমূল একদিকে যেমন সুস্বাদু, তেমনি পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ। বাজার থেকে চড়া দামে ফলমূল কেনার সামর্থ না থাকলেও এসব অপ্রচলিত ফলমূল খেয়ে তাদের পুষ্টি চাহিদা মিটত অনেকটাই। যা এখন আর চোখে পড়ে না আগের মতো। অতিমাত্রায় হাওরে জাল টানা ও বিল সেচে মাছ ধরার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে এসব জলজ ফল।
সরেজমিন হাকালুকি হাওরে দেখা যায়, পাত্র নিয়ে কিছু বালক সিংরা সংগ্রহ করছে। প্রথম দেখায় যে কেউ হয়ত ভাববেন ওরা মাছ ধরতে এসেছে। দেখতে অনেকটাই সিঙাড়ার মতো। তবে তিন কোণায় তিনটি শক্ত কাঁটা থাকে। পড়ন্ত দুপুর বেলা বিলের ধারে বসে সিংরাই ফলের শাঁস খেয়ে ওরা পেটের ক্ষুধা নিবারণ করার চেষ্টা করছে।
তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা প্রায়ই সিংরাই কুঁড়াতে আসে সুদূর সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর থেকে হাকালুকি হাওরের জল্লা বিলে।
হাকালুকি হাওর পাড়ের প্রবীণ লোকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একসময় নানা প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ ও গুল্মলতায় ভরাট থাকত প্রতিটি বিল। শীতকালে প্রতিটি বিলে সিংরা, (স্থানীয়ভাবে যাকে ‘হিংগাই’ বলা হয়), পানি ফল (উফল)সহ নানা প্রজাতির গুল্মলতায় ভরপুর থাকত।
হাওরের মূল সম্পদ বলতে বিলে মাছ আর ভ‚মিতে ফসলের চাষ। এর বাইরেও বহু অপ্রধান সম্পদ রয়েছে, যার ওপর নির্ভর করে গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠী বেঁচে থাকে। প্রকৃত বাস্তবতা হলো এসব জলজ সম্পদগুলো দিন দিন নিঃশেষ হতে চলেছে। ইজারাদাররা বিল শুকিয়ে মাছ ধরছে। বর্ষাকালে উপর্যুপরি কারেন্টজাল ও বেড়জাল টানার কারণে এসব জলজ উদ্ভিদ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে হতদরিদ্র্য শ্রেণীর লোকগুলো এসব প্রাকৃতিক সম্পদের অধিকার থেকে ক্রমেই বঞ্চিত হচ্ছে।
হাকালুকি হাওরে কর্মরত পরিবেশ অধিদপ্তরের জাহাঙ্গির হোসেন জানান, ‘শুধু তাই নয় এসব জলজ জংলাকে আশ্রয় করে বসবাস করে নানা রকম পোকামাকড়, সাপ, ব্যাঙ, কচ্ছপ, মাছ ইত্যাদি। কিন্তু আবাসস্থল কমে যাওয়ার কারণে এসব জীববৈচিত্র্য দিন দিন লোপ পেতে চলেছে। এতে বিনষ্ট হচ্ছে জলাভ‚মির স্বাভাবিক প্রতিবেশগত ব্যবস্থা। তাই এসব প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার্র্থে সচেতন মহলকে সোচ্চার হতে হবে।’
আরসি-১২