এ.জে লাভলু, বড়লেখা
ডিসেম্বর ১৯, ২০২১
০৩:১০ অপরাহ্ন
আপডেট : ডিসেম্বর ১৯, ২০২১
০৩:১০ অপরাহ্ন
করোনা ভাইরাসের প্রভাবে মৌলভীবাজারের বড়লেখায় আগর-আতর ব্যবসায় স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। বিদেশে চাহিদা কমায় কমেছে রপ্তানি। ব্যবসায়ীদের কাছে পড়ে আছে কোটি কোটি টাকার আগর-আতর। অধিকাংশ আগর-আতর কারখানা বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন শ্রমিকরাও।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনার প্রভাবে বেচাকেনা কমে গেলেও আগর-আতর একটি সম্ভাবনাময় পণ্য। এটির ভবিষ্যৎ আছে। বিদেশে আবারও আগর-আতরের চাহিদা বাড়লে রপ্তানিও বাড়বে। হয়তো কিছুটা সময় লাগবে।
জানা গেছে, প্রায় তিনশ বছর ধরে বড়লেখা উপজেলার সুজানগর ইউনিয়নে আগর-আতর উৎপাদন হচ্ছে। ওই ইউনিয়নকে আগর-আতরের রাজধানী বলা হয়। বর্তমানে এই শিল্পের সঙ্গে ওই ইউনিয়নের প্রায় ৩০০ পরিবার জড়িত। এখানে ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় ৩০০ আগর-আতর কারখানা রয়েছে। এসব কারখনায় প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। সুজানগর ইউনিয়নের উৎপাদিত আগর-আতর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, বাহরাইন, মালয়েশিয়া, ওমান, ইয়েমেনসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে আগর-আতর রপ্তানি হয়ে থাকে। বড়লেখা থেকে প্রতিমাসে প্রায় ১ হাজার লিটার আতর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। পাশাপাশি আগরের কাঠও রপ্তানি হয়। প্রতি লিটার আতরের বাজার মূল্য বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৮ লাখ টাকা। কিন্তু করোনার কারণে গত দুই বছর থেকে আগর-আতর ব্যবসায় স্থবিরতা নেমেছে।
সরেজমিনে সুজানগর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ আগর-আতর কারখানা বন্ধ। কয়েকটি কারখানা খোলা রয়েছে। এসব কারখানায় শ্রমিকরা কাজ করছেন। আগর-আতর ব্যবসায়ীরা জানান, ২০২০ সালে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে বন্ধ করে দেওয়া হয় বিমানের ফ্লাইট। এতে বন্ধ হয়ে পড়ে আগর-আতর রপ্তানি কার্যক্রম। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আগর-আতরের চাহিদা কমেছে। যার কারণে তারা আগর-আতর বিক্রি করতে পারছেন না। এই অবস্থায় অধিকাংশ আগর-আতর কারখানা বন্ধ রয়েছে। অনেক ব্যবসায়ীর ঘরে কোটি কোটি টাকার আগর-আতর পড়ে রয়েছে। বিক্রি করতে না পেরে বিপাকে তারা। অন্যদিকে কাজ না থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন শ্রমিকরা।
আগর-আতর শ্রমিক রুহুল আমিন বলেন, ‘করোনার আগে আগর-আতর ভালোই বেচাকেনা হয়েছে। আমাদের কাজ ছিল। করোনা শুরু থেকেই আগর-আতর বিকিকিনি নেই। অনেক কারখানাও বন্ধ। আমরাও বেকার। অনেক ব্যবসায়ীরা রীতিমতো গ্যাস বিলও দিতে পারছেন না।’
অপর শ্রমিক রুবেল আহমদ বলেন, ‘বিদেশে আগর-আতরের চাহিদা কমায় রপ্তানি কমেছে। যার কারণে ব্যবসায়ীরা বিপাকে। অনেকে কারখানা বন্ধ রেখেছেন। আমরা শ্রমিকরা বেকার। এতে আমরা অনেক কষ্টে আছি। সরকারের উচিত আমাদের পাশে দাঁড়ানো।’
আগর-আতর ব্যবসায়ী আব্দুল বাতিন বলেন, ‘প্রায় ১২-১৩ বছর থেকে আমি আগর-আতর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আমার কারখানায় প্রায় ১৫ জন শ্রমিক কাজ করেন। করোনার শুরু হওয়ার পর থেকে ফ্লাইট বন্ধ থাকায় আগর-আতর রপ্তানি কমতে শুরু করে। করোনার কারণে বিদেশেও এর চাহিদা কমেছে। আমার কাছে এখনও ১৫ লাখ টাকার আগর-আতর রয়েছে। বিক্রি করতে পারছি না।’ সুজানগরের অধিকাংশ আগর-আতর ব্যবসায়ীর অবস্থা এখন এরকমই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কেউ আগর-আতর বিক্রি করতে পারছেন না। তাদের সবার ঘরে আগর-আতর পড়ে রয়েছে। যার কারণে অধিকাংশ আগর-আতর কারখানা বন্ধ রয়েছে। বিদেশে এর চাহিদা বাড়লে রপ্তানি আবার বাড়বে বলে জানান তিনি।’
বাংলাদেশ আগর অ্যান্ড আতর ম্যানুফ্যাকচারার্স এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনছারুল হক বলেন, ‘করোনার প্রভাবে আগর-আতর ব্যবসা মন্দা চলছে। সব ব্যবসায়ীর কাছে প্রচুর আগর-আতর জমা আছে। বিক্রি করতে পারছেন না। তবে এই অবস্থা থাকবে না। এটি একটি সম্ভাবনাময় পণ্য। এটার ভবিষ্যৎ আছে। করোনার প্রকোপ কমলে আবারও এই ব্যবসা জমে উঠবে। সরকারও আগর-আতরকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ বিসিক শিল্পনগরী তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছে। প্রণোদনা দিচ্ছে।’
আরসি-২২