জিয়াউল হক জিয়া, কুলাউড়া
ডিসেম্বর ২১, ২০২১
০৬:০২ পূর্বাহ্ন
আপডেট : ডিসেম্বর ২১, ২০২১
০৬:০৩ পূর্বাহ্ন
হাকালুকি হাওরের দেড় হাজার একর আয়তনের বদ্ধ জলমহাল গোটাউরা হাওরখাল অর্ধেক মূল্যে ইজারা দেওয়া হয়েছে। ইজারাদার হিসেবে বদরুল মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিকে খাস কালেকশন অনুমতি দিয়েছে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন।
অভিযোগ রয়েছে, উচ্চ আদালতে মামলা থাকা সত্তে¡ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে হাওরের মৎস্য সম্পদ লুটেরা বাহিনী সরকারের প্রায় অর্ধকোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে।
জানা গেছে, হাকালুকি হাওরের গোটাউরা হাওরখাল গ্রæপ (বদ্ধ) জলমহালের ইজারা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে পৃথক দুইটি মামলা রয়েছে। একটি মামলায় ইজারা সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রমের ওপর স্থিতাবস্থা বহাল রয়েছে। এরই মধ্যে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন অন্যান্য জলমহালের সঙ্গে উক্ত জলমহালের খাস কালেকশনের ইজারা বিজ্ঞপ্তি জারি করে। আগ্রহী একাধিক মৎস্যজীবী সমিতি খাস কালেকশনের দরপত্র জমা দিতে জেলা প্রশাসনে যোগাযোগ করলে হাওরখাল জলমহাল ইজারা হবে না মর্মে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্ত প্রভাবশালী মৎস্য লুটেরা বাহিনী প্রশাসনকে ম্যানেজ করে গোপনে সরকারি মূল্যের অর্ধেক দামে জলমহালটি খাস কালেকশন দিয়েছে। এতে সরকারের প্রায় ৪২ লাখ টাকার রাজস্ব ক্ষতি হবে।
জেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের সভাপতিত্বে গত ২১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্তে উল্লেখ করা হয়, ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী জারিকৃত বিজ্ঞপ্তি প্রথম পর্যায়ে ১০ নভেম্বর জলমহালটি বরুদল মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিকে খাস আদায়ের অনুমতি দেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, সরকারি ইজারা মূল্য ৮২ লাখ ৬৮ হাজার ৭৫০ টাকা। হাকালুকির শ্রীরাম মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি ক্ষেত্রমোহন বিশ্বাস ২০ লাখ টাকায় খাস কালেশনে নেয়ার জন্য দরপত্র দাখিল করেন। ইসলামপুরের বরুদল মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোর্শেদ আলম ৪১ লাখ ৫০ হাজার টাকার দরপত্র দাখিল করেন। সরকারি ইজারা মূল্যের চেয়ে প্রায় ৪২ লাখ টাকা কম মূল্যে বরুদল মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিকে খাস কালেকশনের জন্য ইজারা প্রদান করা হয়। এটা বাস্তবায়নে দায়িত্ব দেয়া হয় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারি কমিশনার (ভ‚মি) কে। নেপথ্যে হাওরের লর্ড খ্যাত ফেঞ্চুগঞ্জের নুরুল চেয়ারম্যানের কারসাজিতে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছে। গত ৬ বছর ধরে বিভিন্ন টালবাহানায় হাওরখাল বিলের কোটি কোটি টাকার মাছ লুট করেছেন এই হাওর লর্ড খ্যাত নুরুল চেয়ারম্যান।
বড়লেখার উত্তর শাহবাজপুরের শাপলা শালুক মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি ছাদিকুর
রহমান, খুটাউরা রূপসী বাংলা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপিত মুহিবুর রহমান প্রমুখ অভিযোগ করেন, গোটাউরা হাওর খাল জলমহালের দরপত্র আহŸানের বিজ্ঞপ্তি দেখে সিডিউল ক্রয়ের জন্য জেলা প্রশাসকের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করা হলে মামলাধীন থাকায় টেন্ডার হবে না বলে জানানো হয়।
বড়লেখা সোনার বাংলা মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাহাব উদ্দিন জানান, আমাদের সমিতি বাদী হয়ে গোটাউরা হাওরখাল গ্রæপ (বদ্ধ) জলমহাল নিয়ে হাইকোর্টে রীট পিটিশন নং-১৫৬১/১৮, সরকার বাদী হয়ে সুপীমকোর্টে সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল নং-১৯/২০২০ মামলায় স্থিতাবস্থা চলমান ও বিচারাধীন এবং মাধবকুÐ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি বাদী হয়ে রিভিউ পিটিশন নং-২৩৩/২০২১ চলমান রয়েছে।
উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি লুকিয়ে ফেঞ্চুগঞ্জের নুরুল চেয়ারম্যান মৎস্যজীবী সমিতিকে সামনে এনে পক্ষান্তরে জলমহালটি লুটপাটের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এতে সরকার প্রায় ৪২ লাখ টাকা রাজস্ব ক্ষতির সম্মুখিন।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জানান, ‘বিষয়টা আমার এই মুহূর্তে মনে নাই। এডিসি রেভিনিউ বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন।’
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মেহেদী হাসানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ‘খাস কালেকশনের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ইজারা দেওয়ার বিধান আছে। ইজারা মূল্য থেকে অর্ধেক মূল্যের চেয়ে কমে খাস কালেকশানে দেয়ায় সরকার কি রাজস্ব হারালো না?- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনি অফিসে আসেন, আমি কাগজপত্র দেখে বলব।’
আরসি-০৪