সিলেট মিরর ডেস্ক
মার্চ ২৩, ২০২২
০৬:৪০ পূর্বাহ্ন
আপডেট : মার্চ ২৩, ২০২২
০৬:৪০ পূর্বাহ্ন
রাজধানীবাসীর বহুল প্রত্যাশিত মেট্রোরেল লাইন-৬ এর ভাড়া হতে পারে সর্বনিম্ন ৮ থেকে সর্বোচ্চ ৪৮ টাকা। প্রতি কিলোমিটারে ২ টাকা ৪০ পয়সা হিসাবে এ প্রস্তাব করা হয়েছে। মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটি এমন সুপারিশ করেছে। তবে ভাড়া চূড়ান্ত করতে আরও যাচাই-বাছাই করা হবে।
এ সংক্রান্ত কমিটি গত ১৬ মার্চ পুনর্গঠন করা হয়েছে। পুনর্গঠিত কমিটিতে বেসরকারি খাতের কাউকেই রাখা হয়নি। এমনকি টেকনিক্যাল বিষয়ক কাউকেও রাখা হয়নি। এই কমিটিতে যে সাতজনকে রাখা হয়েছে তারা সরকারের কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। কমিটিতে বিআরটিএ, বিআরটিসি, ডিটিসিএ, ডিএমটিসিএল, বাংলাদেশ রেলওয়ে, সড়ক বিভাগের প্রতিনিধিদের রাখা হয়েছে।
এ কমিটি একপেশে হয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সেখানে এ বিষয়ে অপেক্ষাকৃত অভিজ্ঞদের স্থান দেওয়া উচিত বলে মনে করেন এই কমিটির অনেকেই।
এর আগে এই কমিটি মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণের যে সুপারিশ করেছিল তা এখনো আমলে নেয়নি সরকার। এ জন্য পুনর্গঠিত কমিটি আরও বৈঠক করে পুনরায় সুপারিশ করবে। তারপর যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত করা হবে।
কমিটির প্রস্তাবিত ভাড়া অনুসারে দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যেতে ভাড়া সর্বোচ্চ দিতে হবে ৪৮ টাকা। দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত যাত্রীপ্রতি ভাড়া সর্বোচ্চ ২৮ টাকা। আগারগাঁও থেকে কারওয়ান বাজার ভাড়া সর্বোচ্চ ৮ টাকা। কারওয়ান বাজার থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ভাড়া ১২ টাকা। তবে এটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সময় ও পরিস্থিতি বিবেচনায় কমবেশি যে কোনোটাই হতে পারে।
জানা গেছে, ভাড়ার হার প্রস্তাবনার ক্ষেত্রে মেট্রোরেল নির্মাণে সরকারি খাত ও বৈদেশিক ঋণের মাসিক ও দৈনিক খরচ, মেট্রোরেল পরিচালন ব্যয়, কর্মীদের বেতন, বিদ্যুৎ বিলসহ বিভিন্ন খাত পর্যালোচনা করেছে কমিটি। সঙ্গে যাত্রী পরিবহনের হিসাবও নিরীক্ষা করে কমিটি।
সূত্র জানায়, ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে মেট্রোরেলে স্টেশন আছে ১৬টি। কোথাও কোথাও এক স্টেশন থেকে অন্য স্টেশনের দূরত্ব ১ কিলোমিটারেরও কম। ফার্মগেট থেকে কারওয়ান বাজার স্টেশনের দূরত্ব পৌনে ১ কিলোমিটারের মতো। এত স্বল্প দূরত্বে কিলোমিটার হিসাবে নয়, বরং পৃথক সর্বনিম্ন ভাড়া থাকা উচিত বলেও মনে করে এ সংক্রান্ত কমিটি। সেক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকাও নির্ধারণ হতে পারে বলে জানা গেছে।
মেট্রোরেল আইন, ২০১৫-এর ধারা ১৮(২) অনুযায়ী এই ভাড়ার হার প্রস্তাব করা হয়। সর্বশেষ এ প্রস্তাবের আলোকে মেট্রো রেলপথ নির্মাণ তদারকি ও পরিচালনাকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডও (ডিএমটিসিএল) একটি ভাড়া প্রস্তাব তৈরি করেছিল। দুটি প্রস্তাবই মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে।
ডিএমটিসিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক এ প্রসঙ্গে বলেন, মেট্রোরেলে ভাড়া নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। আগের কমিটিও একটি প্রস্তাব করেছে। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ ‘ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)’ ভাড়া নির্ধারণ কমিটির সভায় যে হিসাব দিয়েছে তাতে প্রতি মাসে পরিচালন ব্যয় হবে ৬৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা। দৈনিক ব্যয় হবে ২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২ কোটি টাকার বেশি যাবে শুধু জাইকার ঋণ ও সরকারের ব্যয় পরিশোধে। দৈনিক বৈদেশিক ঋণ বাবদ যাবে ১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। সরকারের ব্যয় জোগাতে ৪৯ লাখ টাকা লাগবে দিনে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ওয়েবসাইটে উল্লিখিত ফেব্রুয়ারি-২০২২-এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মেট্রোরেল লাইন-৬-এর কাজের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ৭৬ দশমিক ৭২ শতাংশ। আর উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি হচ্ছে ৯০ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
অপরদিকে, আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি হচ্ছে ৭৫ দশমিক ৮০ শতাংশ। একই সঙ্গে ইলেকট্রিক ও মেকানিক্যাল সিস্টেম এবং রেলকোচ ও ডিপো অংশের যন্ত্রপাতির কাজ ৭৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। বর্ধিত অংশের (মতিঝিল থেকে কমলাপুর) কাজও এগিয়ে চলেছে।
জানা গেছে, সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতি বছরের জুনে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের একাংশ জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে। ২০৩০ সালের মাধ্যে ঢাকায় ছয়টি মেট্রোরেল লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে রাজধানীর গণপরিবহন ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এতে অসহনীয় যানজট থেকেও মুক্ত হবে নগরবাসী। তাই মেট্রোরেলের প্রতি রয়েছে ঢাকাবাসীর আলাদা এক আকর্ষণ।
আরসি-০৪