নাবিল হোসেন
এপ্রিল ০৮, ২০২২
০৪:৩৪ পূর্বাহ্ন
আপডেট : এপ্রিল ০৯, ২০২২
১২:৪৪ পূর্বাহ্ন
নগরের যানজট নিরসন, ফুটপাত দখলমুক্তকরণ ও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতে হকারদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছিল সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) ও সিলেট মহানগর পুলিশ (এসএমপি)। বেশ সাড়াও পড়েছিল তাতে।
ঢাকঢোল পিটিয়ে হকারদের নেওয়া হয় সিসিক ভবনের পেছনে লালদিঘির পাড়ের খালি জায়গায়। সেখানে জমে উঠেছিল পুনর্বাসিত হকারদের বাজার। কিন্তু এক বছরের ব্যবধানে সেই স্থান এখন অনেকটাই ফাঁকা। বরাদ্ধকৃত হকারদের দুই তৃতীয়াংশই এখন বসেন না সেখানে। তারা আবারও চলে এসেছেন নগরের বিভিন্ন সড়ক ফুটপাতে।
নগরের সবচেয়ে ব্যস্ততম সড়ক বন্দরবাজার-চৌহাট্টা। প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কের পুরো ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করেন ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা। সড়কের প্রায় অর্ধেকটাই চলে যায় তাদের দখলে। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রী ও পথচারীদের।
বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে সড়ক ও ফুটপাত দখলমুক্ত করা হয়। তাতেও সাফল্য মেলেনি। কারণ অভিযান শেষে ফের সড়ক ও ফুটপাত দখল করে বসেন হকাররা। এ কারণে দুর্ভোগ ছিল নগরবাসীর নিত্যসঙ্গী।
এ অবস্থায় ২০২০ সালের ডিসেম্বরে হকারদের স্থায়ী পুনর্বাসনের জন্য সিসিক ও এসএমপি যৌথভাবে কাজ শুরু করে। ১৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় পুনর্বাসন কার্যক্রম। প্রথমে কিনব্রিজ থেকে চৌহাট্টা পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কের প্রায় ১ হাজার ১০০ ভাসমান ব্যবসায়ীর তালিকা করা হয়। এরপর লালদিঘিরপাড়ের খালি জায়গায় অস্থায়ী দোকানকোটা নির্মাণ করা হয়। ২২ ডিসেম্বর থেকে তালিকা অনুযায়ী সেই জায়গায় হকারদের পুনর্বাসনের কাজ শুরু হয়। হকারদের নাম তালিকাভুক্ত করে বাঁশ দিয়ে দোকান বানিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া ইট সিলিং দিয়ে রাস্তা ও বিদ্যুতের ব্যবস্থাও করে দেওয়া হয়।
প্রথম দিকে লোকজন সেখানে কম যান। ধীরে ধীরে জমে ওঠে ব্যবসা। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে বাজারটি পরিচিতি পেতে শুরু করে।
গতকাল বুধবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, অনেকটাই ফাঁকা পড়ে আছে জায়গাটি। প্রথম সাড়িতে শাক-সবজি ও মাছ তরকারির দোকান রয়েছে। পরের সারিগুলোতে রয়েছে কাপড়সহ অন্যান্য দোকান। শাক-সবজির দোকানে কিছুটা ভিড় থাকলেও বাকি পুরো মাঠই খালি। প্রথম দুই সারির পরই দেখা যায় অধিকাংশ দোকানের জায়গা খালি। কোনোটার বাঁশ পোঁতা থাকলেও তাতে প্রতিষ্ঠানের বা হকারদের কোনো অস্তিত্বই নেই।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সহস্রাধিক হকারকে এখানে বসার অনুমতি দিয়ে কার্ড দিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু বর্তমানে ২০০ থেকে ২৫০ হকার বসেন সেখানে। বাকিরা আবার রাস্তায় ফিরে গেছেন। যার ফলে প্রথম দিকে বাজার যেভাবে জমজমাট ছিল এখন তা অনেকটাই নীরব।
প্রথম থেকেই সেখানে কাপড়ের ব্যবসা করে আসছেন ফরহাদ মিয়া। বুধবার দুপুরে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘প্রথমে অনেক ব্যবসায়ী ছিল। তাই বাজার ছিল জমজমাট। বেঁচাবিক্রি ভালো হত। কিন্তু এখন কাস্টমার আসে না। কারণ বেশিরভাগ হকার আবার রাস্তায় চলে গেছে। এখানে এখন প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ জন বসে। এদের মধ্যে শাক-সবজি-মাছ বিক্রেতাই বেশি।’
আরেক হকার কামরুল হাসান বলেন, ‘প্রথমদিকে মানুষ কম আসত। তবে কিছুদিন পর বাজারটা জমে উঠে। এ সময় দিনে ১ থেকে ২ হাজার টাকার জিনিষপত্র বিক্রি করতে পারতাম। কিন্তু এখন বেশিরভাগ হকার আবার রাস্তায় চলে গেছে। তাই বেচাকেনা কম হয়।’
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নগরবাসীর অনেকেই চলতি পথে জিনিষপত্র কিনতে ভালোবাসেন, তারা এখানে আসতে চান না তাই সড়কের দিকেই মনোযোগ বেশি হকারদের। এ ছাড়া পুনর্বাসনের জায়গাটি স্থায়ী না হওয়ায় হকারদের আগ্রহ কম।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসায় সব ধরনের অফিস-আদালত-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ চলছে পুরোদমে। এ অবস্থায় এমনিতেই সড়কে যানজট লেগে থাকছে। তার ওপর হকাররা ফুটপাতের দখল নেওয়ায় পথচারীদের ভোগান্তি বেড়েছে। নগরের বন্দবাজার-চৌহাট্টা সড়কেই বেশি দেখা যায় হকারদের। কুদরত উল্লাহ মার্কেট ও জিন্দাবাজারের প্রায় প্রতিটি দোকানের সামনে অস্থায়ীভাবে পসরা সাজিয়ে বসেন হকাররা। এ ছাড়া আদালত পাড়া, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ফটক, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, বন্দরবাজার ফাঁড়ি, জেলা পরিষদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার সামনের ফুটপাতও হকারদের দখলে
সন্ধ্যার পর ফুটপাত ছেড়ে তারা চলে আসেন রাস্তায়। ঈদ যত ঘনিয়ে আসবে সড়ক আরও বেশি হকারদের দখলে চলে যাবে বলে মনে করছেন নগরবাসী।
এ বিষয়ে কথা বলতে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী সিলেট মিররকে বলেন, ‘সব হকার এখনও মাঠ ছেড়ে যাননি। তবে কিছু কিছু হকার আবারও রাস্তায় চলে গেছে। ফুটপাতে বসলে হকারদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এ ছাড়া ম্যাজিস্ট্রেটরা জরিমানাও করছেন।’
সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সল মাহমুদ সিলেট মিররকে বলেন, ‘আমরা প্রায় এক হাজার ১০০ হকারকে পুনর্বাসিত করেছিলাম। কিন্তু বেশিরভাগই আবার রাস্তায় চলে গেছে। হকাররা সেখানে বসে না বললেই চলে। এটা আমাদের একটা স্বপ্নের প্রকল্প ছিল। ভেবেছিলাম বাস্তবায়ন করতে পারলে নগরটা অনেক সুন্দর হয়ে যাবে।’
কেন তারা রাস্তায় ফিরে গেলেন জানতে চাইলে ফয়সল মাহমুদ বলেন, ‘ক্রেতারা ওই স্থানে যান না। ফলে বিক্রি কম হয়। এ ছাড়া নগরবাসী অনেকেই চলার পথে জিনিষপত্র কিনে ফেলেন। এসব কারণেই উদ্যোগটা হয়ে উঠেনি।’
আবার হকারদের লালদিঘির মাঠে নিয়ে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এককভাবে কোনো সংস্থা এই সমস্যা দূর করতে পারবে না। সবার সম্মিলিত চেষ্টা থাকলে জিনিষটা সুন্দর হয়।’
এক্ষেত্রে নগরবাসীকে এগিয়ে আসার আহŸান জানিয়ে ফয়সল মাহমুদ বলেন, ‘আমরা তো হকারদের পুনর্বাসিত করেছিলাম। এখন নগরবাসী যদি মনে করেন আমরা ফুটপাত থেকে কিছু কিনে যানজট সৃষ্টি করব না, রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করব না, তাহলে ফুটপাতের সমস্যা নিরসন সম্ভব।’
আরএম-১০