নিজস্ব প্রতিবেদক
এপ্রিল ১৩, ২০২২
০৩:৩৫ পূর্বাহ্ন
আপডেট : এপ্রিল ১৩, ২০২২
০৩:৩৫ পূর্বাহ্ন
সিলেট নগরের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে রায়হান আহমদ হত্যার আলোচিত মামলার অভিযোগ গঠন পিছিয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) অভিযোগ গঠনের নির্ধারিত দিনে আসামিপক্ষের আইনজীবীর ডিসচার্জের (অব্যাহতি) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আগামী ১৮ এপ্রিল নতুন তারিখ নির্ধারণ করেন।
জানা গেছে, অভিযোগ গঠনের দিন বেলা একটার দিকে রায়হন হত্যা মামলার মূল আসামি বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ (বরখাস্ত) উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ আসামিদের কড়া নিরাপত্তায় সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আবদুর রহিমের আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে আসামিপক্ষের আইনজীবী অব্যাহতির (ডিসচার্জ) আবেদন করলে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন পর্যালোচনার জন্য সময় চেয়ে আবেদন করে।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আগামী ১৮ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের তারিখ নির্ধারণ এবং অব্যাহতির আবেদনের শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেন।
সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) নওশাদ আহমেদ চৌধুরী এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আসামিপক্ষের আইনজীবী আসামিদের অব্যাহতির আবেদন আদালতে দাখিল করেন। এ নিয়ে আগে থেকে অবহিত না থাকায় বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ১৮ এপ্রিল শুনানির জন্য নির্ধারণ করেছেন।
রায়হান আহমদ সিলেট নগরের আখালিয়ার নেহারিপাড়া এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। ২০২০ সালের ১০ অক্টোবর মধ্যরাতে রায়হানকে নগরের কাস্টঘর এলাকা থেকে তুলে নিয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানাধীন বন্দরবাজার ফাঁড়িতে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। পরদিন সকালে তিনি মারা যান। নির্যাতনের সময় এক পুলিশের মোবাইল ফোন থেকে রায়হানের পরিবারের কাছে কল করে টাকা চাওয়া হয়। পরদিন রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা করেন।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখের তত্ত্ববাবধানে তিন সদস্যের একটি কমিটি তদন্ত করে পুলিশ হেফাজতে রায়হানের মৃত্যুর ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়। এ ঘটনায় ১২ অক্টোবর ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত এবং তিনজনকে ফাঁড়ি থেকে প্রত্যাহার করা হয়। এর পর থেকে প্রধান অভিযুক্ত এসআই আকবর পলাতক ছিলেন। পরে ওই বছরের ১৩ অক্টোবর মামলাটি পিবিআইয়ে হস্তান্তর করা হয়। এরপর ৮ নভেম্বর রাতে ভারতের দনা বস্তির খাসিয়ারা ভারতের অভ্যন্তর থেকে পলাতক আকবরকে আটক করা হয়। পরদিন ৯ নভেম্বর তাকে কানাইঘাট সীমান্তবর্তী দনা এলাকায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের হাতে তুলে দেয় খাসিয়ারা। পরে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসে। সেই থেকে আকবর কারাগারে রয়েছেন।
চলতি বছরের ৫ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক আওলাদ হোসেন আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এক হাজার ৯০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। যে ছয়জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয় তাদের পাঁচজনই পুলিশ সদস্য। তারা হলেন বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, এসআই হাসান উদ্দিন, এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস ও হারুনুর রশিদ। অভিযুক্ত আরেকজন আব্দুল্লাহ আল নোমান পালাতক রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ঘটনার পর ভিডিও ফুটেজ গায়েব করার অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি জানা গেছে, নোমান দেশ থেকে পালিয়ে ফ্রান্সে চলে গেছেন। নোমানের অনুপস্থিতিতে বিচার শুরুর বিষয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন আদালত। এরপর মামলার বিচার শুরুর নির্দেশ দেন আদালত। গতকাল মামলার অভিযোগ গঠনের কথা ছিল।
এএফ/০৪