নাবিল হোসেন
এপ্রিল ২০, ২০২২
০৬:২৯ পূর্বাহ্ন
আপডেট : এপ্রিল ২০, ২০২২
০৬:২৯ পূর্বাহ্ন
সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অভ্যন্তরে আরও একটি মুক্তমঞ্চ তৈরি করছে সিলেট সিটি করপোরেশন। যাতে ব্যয় হচ্ছে ১৪ লাখ টাকার বেশি। কিছুদিনের মধ্যেই এই কাজ শেষ হবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা। যদিও একটি মুক্তমঞ্চ থাকার পরও একই স্থানে আরেকটি মুক্তমঞ্চ তৈরি ও মঞ্চের নকশা নিয়ে সমালোচনা করছেন অনেকেই।
সিলেট নগরের কেন্দ্রস্থলের জিন্দাবাজার-চৌহাট্টা সড়কের পাশে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। ৩৩ শতক জায়গাজুড়ে শহীদ মিনার ও শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান। ভাষাশহীদ মিনারের আদলে শহীদ মিনারটি ছিল ৮ শতক জায়গায়। এক পাশে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান। ২০১৩ সালের ২২ ফেব্রæয়ারি ‘তৌহিদী জনতার’ ব্যানারে একটি মিছিল থেকে ভাঙচুর করা হয়েছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। ২০১৪ সালে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের উদ্যোগে সিলেট সিটি করপোরেশন তিন কোটি টাকা ব্যয়ে এই শহীদ মিনার পুনর্নির্মাণ করে। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে এটি উদ্বোধন করা হয়। ২০১৯ সালে এসে এক পাশে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানকে একীভ‚ত করে দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনারের পরিসর বাড়ানোর কাজ শুরু করে সিসিক।
এদিকে, সম্প্রতি শহীদ মিনারের পেছনে থাকা উন্মুক্তস্থানে নতুন আরেকটি মুক্তমঞ্চ নির্মাণপ্রক্রিয়া চলতে দেখা যায়। সিসিক সূত্রে জানা গেছে, নগরের অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্যাকেজের সঙ্গে এই নতুন মুক্তমঞ্চের কাজ হচ্ছে। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ লাখ ৬১ হাজার ১৪৯ টাকা। ব্যয় আরও বাড়তেও পারে। এই মুক্তমঞ্চের আকার ১৮০ বর্গফুট। মুক্তমঞ্চে চারটি স্তম্ভ দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এই মুক্তমঞ্চ বানানোর কাজ শুরু হয়। রমজানের মধ্যেই এর কাজ শেষ হবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।
তবে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই মুক্তমঞ্চ নিয়ে সমালোচনা শুরু করেন। অনেকেই শহীদ মিনারে একটি মুক্তমঞ্চ থাকার পরও আরেকটি মুক্তমঞ্চ তৈরির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এ ছাড়া নকশা নিয়েও অনেকে নানা মন্তব্য করেন।
কেন এই মুক্তমঞ্চ জানতে চাইলে সিলেট সিটি করপোরেশনের স্থপতি খায়ের আহমদ শাওন সিলেট মিররকে বলেন, ‘ছোট অনুষ্ঠান আয়োজন করতেই সিসিক এই মুক্তমঞ্চ তৈরি করেছে। এছাড়া একই সময় চাইলে শহীদ মিনারে দুটি অনুষ্ঠান চলতে পারবে।’
একই কথা জানিয়ে সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত বলেন, ‘এখানে মঞ্চ হবে সে বিষয়ে আমাদের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের আলোচনা হয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ছোট ছোট অনুষ্ঠান, কবিতা পাঠের আসর অথবা ছোট কোনো অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য মুক্তমঞ্চ তৈরি করা হচ্ছে। কারণ এসব অনুষ্ঠান শহীদ মিনারের মূল বেদীতে করলে ফাঁকা মনে হয়; কারণ মূল মঞ্চ ও উন্মুক্ত স্থান অনেক বড়। তবে নকশাটা অনেকটাই শহীদ মিনারের মতো হয়ে গেছে। তাই বিষয়টি কন্ট্রাডিক্টরি মনে হচ্ছে।’
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলী দেবব্রত দাস তালুকদার সিলেট মিররকে বলেন, ‘মুক্তমঞ্চ তৈরিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ লাখ ৬১ হাজার ১৪৯ টাকা। ইতোমধ্যে কাজ ৯৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। রঙ ও অন্যান্য কাজ বাকি আছে। আশা করছি এ মাসের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।’
শহীদ মিনারের নকশার কাজ করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক শুভজিৎ চৌধুরী। বুদ্ধিজীবী কবরস্থানকে একীভ‚ত করে শহীদ মিনারের বর্তমান পুনর্বিন্যাসের নকশাও করেছেন তিনি।
নতুন মুক্তমঞ্চের বিষয়ে জানতে চাইলে শুভজিৎ বলেন, ‘আমাদের মেয়রের কাজ আমার ভালোই লাগে। তিনি দ্রæত কাজ করতে পছন্দ করেন। তবে অনেকগুলো ভালো কাজের মধ্যে এই কাজটি ভুল হয়ে গেল।’
স্থপতি শুভজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘শহীদ মিনারের নকশায় ওই স্থানে কোনো মুক্তমঞ্চ হওয়ার কথা ছিল না। সে স্থানটি উন্মক্ত প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়েছিল। যার ফলে সেখানে অনেকগুলো চিত্র প্রদর্শনীও সেখানে হয়। কিন্তু হঠাৎ করেই উন্মুক্ত প্রদর্শনীর স্থানে মুক্তমঞ্চ তৈরি করা হলো। যা দেখে আমি নিজেই আশ্চর্য হয়ে গেছি। এটি তৈরির কোনো প্রয়োজন ছিল না। কারণ এমনিতেই শহীদ মিনারে তো একটি মুক্তমঞ্চ আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্নভাবে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি মেয়র চাইছিলেন যাতে সেখানে এই মুক্তমঞ্চটা হোক। ব্যক্তিগতভাবে মেয়রকে আমি পছন্দ করি। কিন্তু ১০০টা ভালো কাজের মধ্যে তিনি এই ভুলটা করে ফেলেছেন।’
এ ব্যাপারে জানতে মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগ করেও মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে পাওয়া যায়নি।
এএফ/০২