আপন আলোয় জেগে থাকুক সিলেট

সঞ্জয় কুমার নাথ


মে ১৬, ২০২২
১২:৩১ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মে ১৬, ২০২২
০১:০২ পূর্বাহ্ন



আপন আলোয় জেগে থাকুক সিলেট
-আনজীর লিটন

আনজীর লিটন শিশুসাহিত্যিক ও ছড়াকার। তিনি বাংলাদেশ শিশু একাডেমির পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। শিশুসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ২০২০ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। 

আনজীর লিটন ১৯৬৫ সালের ১৭ জুন ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সম্মানসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত বইগুলো হচ্ছে : ‘খাড়া দুটো শিং’, ‘আগে গেলে বাঘে খায়’, ‘বিড়ালটি সিমকার্ড খেয়ে ফেলেছে’, ‘দুধ সাদা রঙ আলোরে’, ‘সাদা গাছের পাতা’, ‘সবুজ ঘাসের সাইকেল’, ‘গুড বয় ব্যাড বয়’, ‘ছোটদের নাটিকা’, ‘ছড়াসমগ্র-১’, ‘ভ‚তের গলির ভ‚ত’, ‘নীল ঘোড়ার খেলা’ প্রভৃতি। লিখেছেন নাটক, গল্প, কিশোর উপন্যাসও। এ ছাড়া তিনি বেতার ও টেলিভিশনে বিভিন্ন অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও গ্রন্থনা করছেন। নাট্যকার, তথ্যচিত্র নির্মাতা ও গীতিকার হিসেবেও তিনি সমাদৃত। তাঁর সিটি আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত ‘মানিকের লাল কাঁকড়া’ কিশোর উপন্যাস থেকে শিশুতোষ চলচ্চিত্র তৈরি হচ্ছে। তিনি ‘অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার’, ‘এম নুরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার’, ‘কুসুমের সেরা সাহিত্য পুরস্কার’, ‘ফুটতে দাও ফুল’ ও ‘ছড়ালোক সম্মাননা পদক’সহ বেশকিছু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভ‚ষিত হয়েছেন। গত শুক্রবার আনজীর লিটন এসেছিলেন সিলেট মিরর কার্যালয়ে। এ সময় তিনি তাঁর সাহিত্যকর্ম, দেশের সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং সিলেট নিয়ে স্মৃতি ও অনুভূতির কথা জানিয়েছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সঞ্জয় কুমার নাথ। 


সিলেট মিরর : আপনার লেখালেখির শুরু এবং কেন লেখালেখি বেছে নিলেন-এ বিষয়টি নিয়ে প্রথমেই জানতে চাচ্ছি। 

আনজীর লিটন : ১৯৮১ সাল। তখন আমি ইন্টারমিডিয়েট পড়ি ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে। আজকে যেমন সিলেটে অঝোর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে, সেদিনও ময়মনসিংহে ঝুম বৃষ্টি চলছিল। আমি জানালায় দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ কয়েকটি লাইন আমার মাথায় আসে। আমি সেগুলো কবিতার মতো লিখে নিই। প্রিয় এক ভাইকে লেখাটি দেখাই। তিনি বলেন, ‘আরে তুমি তো সুন্দর কবিতা লিখে ফেলেছো।’ আমি বলি, কবিতা হলো কী? তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, কবিতাই তো।’ আমি তখনও কবিতার ব্যাকরণ জানতাম না। এ অবস্থায় লিখে নিই বেশ কয়েকটি পদ্য। সে সময় আনন্দমোহন কলেজে আমাদের বাংলার শিক্ষক ছিলেন প্রণব চৌধুরী। চমৎকার ছড়া লিখতেন। থাকতেন আমাদের পাড়ায়। একদিন সাহস করে লেখাগুলো স্যারকে দেখালাম। স্যার ছড়া লেখায় আমায় উদ্বুদ্ধ করেন। শিখিয়ে দেন ছড়া লেখার কলাকৌশল। বলতে গেলে আমার লেখালেখির হাতে-খড়ি প্রণব স্যারের মাধ্যমেই। 

দ্বিতীয় যে বিষয়টি লেখায় তাগিদ দিয়েছে, তা আমার অন্তর। আমি তখন ময়মনসিংহ জেলা স্কুলে পড়ি। আমাদের স্কুলে ছিল বিশাল লাইব্রেরি। আমি প্রতিদিন বই নিয়ে আসতাম। বাসায়ও বইপড়ার চর্চা ছিল। এভাবেই সাহিত্য পাঠে এবং লেখায় আগ্রহ তৈরি হয়। 


সিলেট মিরর : সিলেটে তো বিভিন্ন সময় এসেছেন। সিলেট নিয়ে আপনার বিশেষ স্মৃতি কিংবা অনুভূতি শুনতে চাই। 

আনজীর লিটন : সিলেট এসেছি বেশ কয়েকবার। পাঁচ-ছয়বার তো হবেই। প্রথমবারও এসেছিলাম একটি ছড়ার অনুষ্ঠানে। এবারও এলাম ছড়ার জন্য। পুণ্যভূমি সিলেট নিয়ে আমার কিংবা আমাদের আলাদা একটি অনুভূতি রয়েছে। প্রায় এক যুগ আগে যখন প্রথম এসেছিলাম তখন আর আজকের ২০২২ সালের সিলেটের মধ্যে অবকাঠামোগত উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। এখন অভিজাত নগর জীবন। তবে মানুষের ভালোবাসা আছে সেই আগের মতোই। সিলেটের লেখক-সাহিত্যিক বিশেষ করে ছড়াকারদের সঙ্গে আমার আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। সিলেটের সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারেও দেখেছি এখানকার শিল্প-সাহিত্য অনেক সমৃদ্ধ। শিশু-কিশোররাও মেধাবী। কবি-সাহিত্যিক-গবেষকরা প্রতিশ্রুতিশীল। তাছাড়া লোকগান আর ছড়ার অঞ্চলতো সিলেটই। 


সিলেট মিরর : সিলেটের শিশুসাহিত্য বা সাহিত্যিকদের নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

আনজীর লিটন : ছড়া কিংবা শিশুসাহিত্যে সিলেটের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। বিশেষ করে আশির দশকে ছড়াসাহিত্যে সিলেটের ছিল স্বর্ণযুগ। তখন থেকেই অনেকের লেখার সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটে। এখন তো সবার সঙ্গে দেখা হচ্ছে, কথা হচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় সিলেটে এখনো সাহিত্যচর্চা হচ্ছে। অবশ্য আগে যেভাবে কোনো পত্রিকার সাহিত্যপাতাকে কেন্দ্র করে সাহিত্যচর্চা হতো, এখন সে রকম হয় কি না আমি জানি না! তবে দৈনিক পত্রিকার সঙ্গে শিশুদের জন্য একটি সাহিত্য পাতা থাকা আবশ্যক। সিলেট মিরর অনেক সমৃদ্ধ সাময়িকী প্রকাশ করে। আমার প্রত্যাশা থাকবে, তারা চমৎকার একটি শিশু পাতা রাখবে। কারণ শিশুসাহিত্য কেবল শিশুদের জন্য নয়, শিশুর মা-বাবার পড়াও জরুরি। সবচেয়ে বড় কথা শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির ঐতিহ্য নিয়ে সিলেট আপন আলোয় জেগে থাকুক। 


সিলেট মিরর : সমসাময়িক শিশুসাহিত্য নিয়ে আপনার ভাবনার কথা শুনে শেষ করব আজকের কথোপকথন। 

আনজীর লিটন : এই সময়ে শিশুদের জন্য সবচেয়ে বড় যে কাজটি হচ্ছে, সেটি হলো-দেশ, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রচুর কাজ হচ্ছে। তবে শিশুদের নিয়ে আমরা অনেক স্বপ্নের কথা বললেও সব স্বপ্ন বা প্রতিশ্রুতি পালন করতে পারি না। যেমনএকজন শিশুর জন্য দরকার খেলার মাঠ, পার্ক। শিশুর উদার মানস গঠন হবে মুক্ত পরিবেশে। শিশু হাসবে, খেলবে, পড়বে। তাই বড়দের এ বিষয়গুলো ভাবতে হবে। বর্তমান প্রযুক্তির যুগে শিশুদের বইমুখী করতে শিশুসাহিত্যিকদের বড় ভূমিকা পালন করা উচিত। শিশু সংগঠনগুলোকে নতুন নতুন উদ্যোগ নিতে হবে। তবে এখন সাহিত্যিকদের মধ্যে একটি তাড়াহুড়োভাব লক্ষ্য করা যায়। সহজ পথে সফল হওয়ার বাসনা বেশি মনে হয়। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে, ধৈর্য থাকতে হবে। সাহিত্যিকদের অন্তরে প্রথমেই দেশকে লালন করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বর্তমান সময়কে ধারণ করে শিশুর জন্য সাহিত্য রচিত হোকএটাই আমার ভাবনা। 


এএফ/০১