মৌলভীবাজারে আকস্মিক বন্যায় আড়াই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি


জুন ১৯, ২০২২
০৯:৪৪ অপরাহ্ন


আপডেট : জুন ১৯, ২০২২
০৯:৪৪ অপরাহ্ন



মৌলভীবাজারে আকস্মিক বন্যায় আড়াই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

পাহাড়ি ঢলে উজান থেকে নেমে আসা পানি ও লাগাতার বৃষ্টির কারণে মৌলভীবাজার জেলা জুড়ে আকস্মিক বন্যায় আড়াই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। যার ফলে হাওরপারের নিম্নাঞ্চলের মানুষ চরম দূর্ভোগ পড়েছেন। জেলার সবকটি উপজেলায় বাড়ছে পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা।

আজ রবিবার বিকেল পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের তথ্যানুযায়ী জেলা জুড়ে আশ্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা ৯৮টি। আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয়গ্রহণকারী মানুষের সংখ্যা ১৫ হাজার জন। এবং আশ্রয়কেন্দ্রে গবাদিপশুর সংখ্যা ১ হাজার টি।

এদিকে বড়লেখা উপজেলায় অধিকাংশ নলকূপ সমূহ পানির মধ্যে নিমজ্জিত রয়েছে। কুলাউড়া ও জুড়ী উপজেলায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ পরিস্থিতির অবিনতি হয়েছে। তবে অন্যান্য উপজেলায় স্বাভাবিক আছে। বন্যা দূর্গত এলাকায় এখন পর্যন্ত ১০ হাজার টি পানি বিশুদ্ধ করণ ট্যাবলেট সরবরাহ করা হয়েছে। এবং ৬০ টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।

জেলা প্রশাসন সূত্র আরও জানায়, এখন পর্যন্ত শুকনো খাবার ২০০০ প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে। ৭টি উপজেলায় ২১০ মেট্রিক টন চাল উপবরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। এই চাল বন্যাদুর্গত এলাকায় বিতরণ চলছে।

জানা যায়, বড়লেখা উপজেলায় অতিভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং কুশিয়ারা নদী ও হাকালুকি হাওরের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বড়লেখা পৌর এলাকা এবং ১০টি ইউনিয়নের ২০০টি গ্রাম  প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় দুর্গত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার জন। পাশাপাশি পাহাড় ধসে উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের আয়েশাবাগ চা বাগানে একজন নিহত ও সদর ইউনিয়নের কেছরিগুল গ্রামে একজন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বিদ্যুৎ এর সাব স্টেশন ইতিমধ্যেই পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। 

কুলাউড়া উপজেলায় অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। নদ-নদীসহ হাকালুকি হাওরের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সাতটি ইউনিয়ন (যথা: ভূকশিমইল, ভাটেরা, জয়চন্ডী, ব্রাহ্মণবাজার, কাদিপুর, ও কুলাউড়া সদর)  ইউনিয়নের বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।  এছাড়া কর্মধা ইউনিয়নের মহিষমারা গ্রামের ফানাই নদীর বাঁধ ভেঙ্গে মহিষমারা, বাবনিয়া, হাশিমপুর, ভাতাইয়া, পুরশাই গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে। অর্ধ শতাধিক গ্রামের প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দী  অবস্থায় নিজ নিজ বাসভবনে অবস্থান করছে। গ্রামগুলোর সাথে বিদ্যুৎ সংযোগ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। 

জুড়ী উপজেলায় গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে  সৃষ্ট বন্যায় এ উপজেলাধীন ২৮টি গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। এ সকল গ্রামের অধিকাংশ রাস্তা ঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জনসাধারণের চলাচলে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়।  এ পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ প্রায় ২৪টি পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে। এছাড়াও জায়ফরনগর ইউনিয়নের  গৌরীপুর ও সাগরনাল ইউনিয়নের কাশিনগর গোয়ালবাড়ি পশ্চিম শিলুয়া গ্রামে জুড়ী নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয়দের সহযোগীতায় বাঁধ মেরামত কাজ চলছে। 

মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল এর কারণে খলিলপুর, মনুমুখ,আখাইলকুড়া, কনকপুর, কামালপুর, চাঁদনীঘাট ইউনিয়ন আংশিক প্লাবিত হয়েছে। বন্যা দুর্গত মানুষের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৭ হাজার জন।  

রাজনগর উপজেলায় ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল এর কারণে ০৪টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। বন্যা দুর্গত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার জন। 

শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল এর কারণে ০৫টি ইউনিয়নের ১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যা দুর্গত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার জন। 

কমলগঞ্জ উপজেলায় অতি বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ধলাই নদীর পাড় ভেঙ্গে অত্র উপজেলার ০৯টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় বন্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জানান, বন্যাদূর্গতদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।  আমরা বন্যাদূর্গত এলাকা পরিদর্শন করে প্রকৃত অবস্থা জেনে কাজ করছি। অতি বৃষ্টি এবং পাহাড়ী ঢল অব্যাহৃত থাকলে আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হবার আশংকা রয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।

বিএ-১০