এমপির কার্যালয়ে বসে সেই অধ্যক্ষ বললেন, ‘ধাক্কাধাক্কি হয়েছে’

সিলেট মিরর ডেস্ক


জুলাই ১৪, ২০২২
০৭:০২ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ১৪, ২০২২
০৭:০২ অপরাহ্ন



এমপির কার্যালয়ে বসে সেই অধ্যক্ষ বললেন, ‘ধাক্কাধাক্কি হয়েছে’

রাজশাহীতে সংসদ সদস্যের মারধরে কলেজ অধ্যক্ষ আহত হওয়ার খবর যখন ব্যাপক আলোচনায় তখন সাংবাদিকদের সামনে হাজির হলেন কলেজ অধ্যক্ষ সেলিম রেজা।

তিনি বললেন, ‘এমপি মহোদয় তাকে মারপিটের যে কথা উঠেছে সেটা একেবারে মিথ্যা। ওই দিন কয়েকজন কলেজ অধ্যক্ষের নিজেদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে’।

সংবাদ সম্মেলনে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী ছাড়াও গোদাগাড়ীর কয়েকজন কলেজ অধ্যক্ষ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে ৭ জুলাই রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে কলেজ অধ্যক্ষকে মারধরের অভিযোগ ওঠে। বুধবার যা নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। 

এ ঘটনার ভুক্তভোগী শিক্ষককে দুদিন ধরে পাওয়া যাচ্ছিল না। তিনি ফোনে কিংবা সরাসরি কোনো বক্তব্য না দিয়ে বুধবার ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে নিজের মন্তব্য দেন।

এরপর বৃহস্পতিবার তিনি এমপি ফারুক চৌধুরীকে নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে হাজির হন।

থিম ওমর প্লাজার পাশে ওমর ফারুক চৌধুরীর নিজস্ব কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে ওমর ফারুক চৌধুরী দাবি করেন তার বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যমে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে। এতে তিনি রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়েছেন। আওয়ামী লীগের সম্মানহানি হয়েছে।

৭ জুলাইয়ের ঘটনা প্রসঙ্গে ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, ওই দিন কোনো কলেজশিক্ষককে তিনি মারধর করেননি। এটা মিথ্যা কথা। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তাকে হেয় করার জন্য এমন তথ্য প্রচার করছেন।

সংবাদ সম্মেলনে গোদাগাড়ীর রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজা বসেছিলেন অভিযুক্ত ওমর ফারুক চৌধুরীর পাশেই।

তিনি দাবি করেন, সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী তাকে মারধর করেননি।

সেলিম রেজা লিখিত বক্তব্যে বলেন, গণমাধ্যমে যেভাবে বলা হচ্ছে যে সংসদ সদস্য তাকে মারধর করেছেন তা ঠিক নয়।

তিনি বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে আমরা কয়েকজন অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ ঈদ উপলক্ষে এমপি সাহেবের অফিসে দেখা করতে গিয়েছিলাম। এ সময় আমাদের অধ্যক্ষ ফোরামের কমিটি গঠন এবং অভ্যন্তরীণ অন্যান্য বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। একপর্যায়ে এমপি মহোদয় আমাদের নিবৃত্ত করেন। এ ছাড়া আর অন্য কোনো ঘটনা ঘটেনি’।

মারধর না হলে ঘটনার রাতে চিকিৎসকের কাছে কেন গেলেন-অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে সাংবাদিকরা এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘নিজেদের মধ্যে একটু ধাক্কাধাক্কি হয়েছিল।’

‘সামান্য জখম হয়েছে’ দাবি করলে সাংবাদিকরা বলেন, ‘আমরা শুনেছি আপনার হাতে কনুইয়ের কাছে বড় জখম হয়েছে সেটি কতটা জখম একটু দেখাবেন কি?’ এর উত্তরে সেলিম রেজা তা দেখাতে অস্বীকৃতি জানান।

এমপি মারেননি তাহলে তাকে মেরেছে কে জানতে চাইলে তিনি কারো নাম না বলে দাবি করেন সামান্য ধাক্কাধাক্কি হয়েছে অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে।

এ সময় তার পাশে বসা গোদাগাড়ীর মাটিকাটা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল আউয়াল রাজু অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে ধাক্কা মারার দায় নিজের কাঁধে নেন।

রাজু বলেন, ঈদ উপলক্ষে অধ্যক্ষ ফোরামের পক্ষ থেকে সংসদ সদস্যের সঙ্গে দেখা করার জন্য তিনিই সব অধ্যক্ষকে ফোন করে ডাকেন। সেখানে ফোরামের কমিটি গঠন এবং আয়-ব্যয়ের হিসাব নিয়ে তর্কবিতর্ক হয়। একপর্যায়ে তিনি নিজেই অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে ধাক্কা দেন। এ সময় সেখানে থাকা আলমারি ও চেয়ারে ধাক্কা খেয়ে সেলিম রেজা আহত হন।

এমপি তাদের থামিয়েছেন বলে দাবি করেন রাজু। একজন সংসদ সদস্যের সামনে শিক্ষকদের এমন আচরণের জন্য তিনি ক্ষমা চান।

এর আগে বুধবার রাতে ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দিয়ে অধ্যক্ষ সেলিম রেজা দাবি করেন, তাকে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী মারপিট করেননি। 

সেখানে তিনি লেখেন, ‘১৩ জুলাই দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় আমাকে ও এমপি মহোদয়কে নিয়ে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তা আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে, তা মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং মনগড়া। এমপি সাহেবের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, একটি কুচক্রীমহল আগামী ১৫ জুলাই তানোর উপজেলায় আওয়ামী লীগের কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে, গোদাগাড়ী তানোর নির্বাচনী এলাকায় ওমর ফারুক চৌধুরীর সুনাম, উন্নয়ন ও জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মনগড়া, কাল্পনিক, ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ করেছেন’।

তিনি দাবি করেন, ‘সাংবাদিক পরিচয় গোপন করে, গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা বলে পরিচয় দিয়ে আমার বাসায় প্রবেশ করেন এবং আমাকে অভিযোগ করার জন্য বিভিন্নভাবে উসকানি দেয় ও আমার ছবি তোলার চেষ্টা করে। আমি কোনোভাবে তাদের ছবি তুলতে দিইনি। আমি কোনো প্রকার অভিযোগ বা মন্তব্য প্রকাশ করিনি তারপরও আমাকে ও এমপি মহোদয়কে নিয়ে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করেছে’।

পোস্টে কলেজ অধ্যক্ষ উল্লেখ করেন, আমরা কয়েকজন অধ্যক্ষ ঈদ উপলক্ষে এমপি সাহেবের অফিসে দেখা করতে গিয়েছিলাম, এ সময় নিজেদের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। এ ছাড়া কোনো ঘটনা ঘটেনি।

তবে ওই শিক্ষকের ফেসবুকে পোস্টটি ‘চাপ দিয়ে’ করানো বলে মনে করেন, রাজশাহী জেলা কলেজশিক্ষক সমিতির সভাপতি শফিকুর রহমান বাদশা।

বৃহস্পতিবার সকালে শিক্ষক নেতা বাদশা বলেন, ‘সে এখন হয়তো ভয়ে এসব বলছে। ওই শিক্ষক কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তাহলে তানোরের কাউন্সিল নিয়ে তার মাথা ব্যথা হওয়ার কথা নয়’।

এদিকে এ ঘটনা তদন্তে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার কমিটির সদস্যরা রাজশাহী গিয়ছেন। কমিটির প্রধান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল হোসেন জানান, আমরা কাজ শুরু করেছি। বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলছি। তদন্তকাজ শেষে আমরা আপনাদের জানাব।

বিএ-০২