ইতিহাস গড়ে আবার চীনের শীর্ষ পদে শি চিনপিং

সিলেট মিরর ডেস্ক


অক্টোবর ২৪, ২০২২
০৩:৩২ পূর্বাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ২৪, ২০২২
০৩:৩২ পূর্বাহ্ন



ইতিহাস গড়ে আবার চীনের শীর্ষ পদে শি চিনপিং

এরই মধ্যে মাও জেদংয়ের পর চীনের সবচেয়ে পরাক্রমশালী নেতা হিসেবে বিশ্লেষকদের স্বীকৃতি পেয়ে গিয়েছিলেন। কার্যত নজিরবিহীনভাবে টানা তৃতীয় দফা প্রেসিডেন্ট হওয়া নিশ্চিত করে প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং তাতে আনুষ্ঠানিকতার সিলমোহর দিলেন যেন।

প্রত্যাশামতোই চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আরো এক মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন শি চিনপিং। সিপিসির ২০তম কংগ্রেস শেষ হওয়ার পরদিন রবিবার এ শীর্ষ পদে চিনপিংকে নির্বাচিত করা হয়।

দলের শীর্ষ পদে আসার মাধ্যমে নিয়মমতো আরো এক মেয়াদে প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত হবেন তিনি।

কমিউনিস্ট পার্টির অন্য শীর্ষ নেতাদের মধ্যেও শির অনুগতদেরই বেছে নেওয়া হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, এতে ভবিষ্যতেও অনেক দিন চীনে তাঁর প্রভাব অটুট থাকবে।

রাজধানী বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব পিপলে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর শি চিনপিং বলেন, ‘আমাদের ওপর যে আস্থা রেখেছেন সে জন্য আমি পুরো দলকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই। ’

চিন পিং আরো বলেন, ‘বিশ্বের চীনকে প্রয়োজন। ৪০ বছরব্যাপী নিরবচ্ছিন্ন সংস্কার এবং উন্মুক্তকরণের প্রচেষ্টার পর আমরা দুটি অসাধারণ বিষয় অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি—একটি হলো দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং অন্যটি দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক স্থিতিশীলতা। ’

চীনা বিপ্লবের নেতা সিপিসির চেয়ারম্যান মাও জেদং ১৯৪৯ সালে সমাজতান্ত্রিক চীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার পর ১৯৭৬ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট পদে আসীন ছিলেন। এখন শি চিনপিং টানা তিন মেয়াদে দলের শীর্ষ পদে আসার মাধ্যমে মাওয়ের পর দেশের সবচেয়ে দীর্ঘকালীন শাসক হতে যাচ্ছেন।

২০১২ সালে প্রথমবার সিপিসির শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিত হন শি।

দলের শীর্ষস্থানের সুবাদে আবারও চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) বা সামরিক বাহিনীর প্রধান হিসেবে বহাল থাকবেন শি চিনপিং। এই ক্ষমতাবলে তিনি আবার দেশটির কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের প্রধান হবেন। আগামী মার্চ মাসে নিয়মতান্ত্রিক আইনসভার অধিবেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে তৃতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন শি চিনপিং।

চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ক্ষমতাকাঠামোয় মাও জেদংয়ের পর শি চিনপিংই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করেছেন। মাও জেদংয়ের স্থান দলটির বিপ্লবী আন্দোলনের মহান আদর্শের আসনে। চিনপিংও দলের মধ্যে ‘মাওবাদের’ মতো নিজের আলাদা চিন্তাধারা ছড়িয়ে দিয়েছেন। চিনপিংয়ের এই আদর্শকে বলা হয়েছে ‘নতুন যুগের চীনা ধরনের সমাজতন্ত্র’। এ ছাড়া চিনপিংয়ের চিন্তাধারা শিশুদের জন্যও পাঠ্য করা হয়েছে।


দলের নেতৃত্ব গঠনের প্রক্রিয়া

শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হওয়া কংগ্রেসের কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দলের ২০৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। তাঁদের মধ্য থেকে হয় ২৪ সদস্যবিশিষ্ট পলিটব্যুরো। এ ছাড়া হয় পলিটব্যুরোর সাত সদস্যের স্ট্যান্ডিং কমিটি, যা চীনে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কর্তৃত্বের অধিকারী।

সিপিসির অভ্যন্তরে অবস্থান দৃঢ় করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে দল ও সরকারে নিজের প্রভাব সুরক্ষিত করতে চিনপিং দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে অনুগতদের বসিয়েছেন।

সাত সদস্যের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যরা হলেন শি চিনপিং (পদাধিকারবলে), লি কিয়াং, ঝাও লেজি, ওয়াং হুনিং, কাই কি, ডিং শিয়েশিয়াং ও লি শি মিট।

দলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে এসেছেন চিনপিংয়ের অনুগত লি কিয়াং। তিনি সাংহাইয়ে দলের শীর্ষ পদে ছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্লেষকরা বলছেন, ভবিষ্যত্ চীনে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করেছেন ৬৯ বছর বয়সী শি চিনপিং। কারণ কিয়াং আগামী দিসে চীনের প্রধানমন্ত্রী পদে বসতে যাচ্ছেন।

নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী লি খোছিয়াং। সিপিসির প্রভাবশালী নেতা বলে বিবেচিত ওয়াং ইয়াংও জায়গা পাননি এতে। তাত্পর্যপূর্ণভাবে এবার ২৪ সদস্যের পলিটব্যুরোতে কোনো নারীর জায়গা হয়নি। বিগত ২৫ বছরের মধ্যে দলটির ইতিহাসে এবারই প্রথম কোনো নারীর জায়গা হলো না নীতিনির্ধারণী এই পর্যায়ে।


মিত্রসহ বিশ্বনেতাদের অভিনন্দন

শি চিনপিং নতুন করে সিপিসির শীর্ষ পদে আসীন হওয়ার পর বিশ্বের অনেক দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা অভিনন্দন জানিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন বেইজিংয়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার নেতারা।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ‘গঠনমূলক সংলাপ ও অভিন্ন উদ্দেশ্যে নিবিড় যোগাযোগের লক্ষ্যে দুই দেশের কৌশলগত সহযোগিতা শক্তিশালী করার কাজ এগিয়ে নিতে’ তিনি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।

উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থার খবরে বলা হয়, শি চিনপিংকে অভিনন্দন জানিয়ে সে দেশের নেতা কিম জং উন বলেন, ‘আপনি ও আমি একত্রে এই সময়ের চাহিদা পূরণে চীন ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে আরো সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলব। ’ সূত্র : এএফপি, বিবিসি


এসই/০৬