যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে জগন্নাথপুরের পাঁচ মেয়র, কাউন্সিলর জয়ী

সিলেট মিরর ডেস্ক


জুন ০৫, ২০২৩
০৩:২৫ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুন ০৬, ২০২৩
০৬:১৯ অপরাহ্ন



যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে জগন্নাথপুরের পাঁচ মেয়র, কাউন্সিলর জয়ী


যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মেয়র, কাউন্সিলরসহ বিভিন্ন পদে জয় পেয়েছেন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের বেশ কয়েকজন প্রবাসী। মেয়র ও কাউন্সিলর পদে অন্তত জগন্নাথপুরের পাঁচজন বাসিন্দা সেখানে নির্বাচনে জয় পেয়েছেন। 

তাদের এই বিজয়ে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত জগন্নাথপুরের কমিউনিটি ও প্রবাসী অধ্যুষিত জগন্নাথপুর উপজেলায় আনন্দ-উচ্ছ্বাস বিরাজ করছে।       

প্রবাসীদের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৪ মে যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে জগন্নাথপুরের পাঁচজন বাসিন্দা মেয়র, ডেপুটি মেয়র ও কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।

যুক্তরাজ্যের উইল্টশায়ারের স্যালিসবারি সিটি কাউন্সিলে প্রথমবারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন প্রবাসী আতিকুল হক। তিনি স্যালিসবারি সিটি কাউন্সিলের প্রথম ব্রিটিশ বাংলাদেশি মেয়র। 

তার বাড়ি জগন্নাথপুর উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নের শ্রীরামসী গ্রামে। বাবা-মায়ের সঙ্গে তিনি ছোটবেলায় যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। সেখানকার বাঙালি অধ্যুষিত ইস্ট লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসের ব্রিকলেনে লেখাপড়া করে বড় হলেও তিনি উইল্টশায়ারের স্যালিসবারি এলাকায় আবাসস্থল ও ব্যবসা গড়ে তোলেন। 

২০১০ সালে আতিকুল হক মূলধারার ব্রিটিশ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ২০১৩ সাল থেকে কনজারভেটিভ পার্টির কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনিই একমাত্র বাঙালি কনজারভেটিভ-দলীয় কাউন্সিলর থেকে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।

জগন্নাথপুর উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের মল্লিক মুসাদ্দেকের স্ত্রী ড. ববলিন মল্লিক গ্রেট ব্রিটেনের ওয়েলসের কার্ডিফ সিটির লর্ড মেয়র নির্বাচিত হন। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ড. ববলিন মল্লিক কার্ডিফ সিটি কাউন্সিলের ১১৮তম দ্যা রাইট অনারেবল লর্ড মেয়র হিসেবে আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

তিনি ২০১৭ সালে প্রথম কাউন্সিলে নির্বাচিত হন এবং ২০২২ সালে পুনরায় নির্বাচিত হন এবং ২০২৩ সালে এসে কার্ডিফের লর্ড মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি স্বপরিবারে ওয়েলসে বসবাস করছেন। তিনি কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়োকেমিস্ট্রিতে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরে বায়োলজিতে পিএইচডি করেছেন।

যুক্তরাজ্যের লোওয়েস্টফ্ট টাউন থেকে ডেপুটি মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের কামারখাল গ্রামের বাসিন্দা সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত আব্দুল হাশিমের মেয়ে নাসিমা বেগম। তিনি যুক্তরাজ্যের লোওয়েস্টফ্ট টাউনে জন্মগ্রহণ করেন।

নাসিমার মামাতো ভাই মিলাদ হোসেন শুভ জানান, তিনি এর আগে টানা দুইবার ওই এলাকার কাউন্সিলর ছিলেন। এ ছাড়া নাসিমা বেগম যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।

জগন্নাথপুর উপজেলার পাটলি ইউনিয়নের মকরমপুর গ্রামের আবু মিয়া সেলিম ব্রডল্যান্ড ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলে প্রথম ব্রিটিশ বাংলাদেশি কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি লিবারেল ডেমোক্র্যাটের প্রার্থী হয়ে ব্রডল্যান্ড ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলের আইলসাম ওয়ার্ড থেকে অংশগ্রহণ করে ১ হাজার ৩৩৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। 

জগন্নাথপুর উপজেলার আশারকান্দি ইউনিয়নের নয়াবন্দর দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক শাহ আবু নাসেরের সহধর্মিণী শাহানারা নাসের লুটন কাউন্সিলের সেইন্টস ওয়ার্ড থেকে প্রথমবারের মতো বাঙালি কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তিনি লেবার পার্টি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হয়েছেন। 

এদিকে যুক্তরাজ্যে জগন্নাথপুরের বাঙালিদের জয়ে তাদের স্বজন ও বাঙালি কমিউনিটিদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে।

আশারকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ুব খান বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের একজন শিক্ষকের স্ত্রী যুক্তরাজ্যে বিজয়ী হওয়ায় আমরা ইউনিয়নবাসী আনন্দিত ও গর্বিত।’

মিরপুর ইউনিয়নের শ্রীরামসী গ্রামের বাসিন্দা স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আমাদের গ্রামের কৃতিসন্তান প্রথমবারের মতো ব্রিটেনের স্থানীয় নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তার এ সফলতায় আমরা খুশি।’

জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবুল হোসেন লালন জানান, জগন্নাথপুর উপজেলার সিংহভাগ মানুষ যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন। সেখানকার স্থানীয় সব নির্বাচনে জগন্নাথপুরের বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা জনপ্রতিনিধিত্ব করছেন। এবারের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জগন্নাথপুরের কয়েকজন নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের সফলতায় দেশ গর্বিত।  

যুক্তরাজ্যে বসবাসরত জগন্নাথপুরের বাসিন্দা সাংবাদিক আমিনুল হক ওয়েছ বলেন, ‘প্রতিবারের মতো এবারও যুক্তরাজ্যের স্থানীয় নির্বাচনে জগন্নাথপুরের অনেকেই নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের জয়ে আমরা আনন্দিত।’

এএফ/১২