রুদ্ধশ্বাস জয়ে বিশ্বকাপের বাছাইয়ে বাংলাদেশ

খেলা ডেস্ক


অক্টোবর ১৭, ২০২৩
০৮:১৫ অপরাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ১৭, ২০২৩
০৮:১৫ অপরাহ্ন



রুদ্ধশ্বাস জয়ে বিশ্বকাপের বাছাইয়ে বাংলাদেশ


এগিয়ে থাকার পরও ছিল অস্বস্তি। শেষ ৩০ মিনিট খেলতে হবে ১০ ফুটবলার নিয়ে। তবে অস্বস্তি আর বিপদ ডেকে আনেনি। ১০ ফুটবলার নিয়েই মালদ্বীপের ১১ ফুটবলারের বিপক্ষে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে উত্তীর্ণ বাংলাদেশ। ধৈর্যের অসীম পরীক্ষার পাস করে উঠে গেল ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে। 

বিশ্বকাপ বাছাইয়ে খেলতে হলে জয় ছাড়া কোনো বিকল্প খোলা ছিল না বাংলাদেশ কিংবা মালদ্বীপের সামনে। কিংস অ্যারেনায় সেই পরীক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করে গেল দুই দলই। নিজেদের মাঠ আর দর্শকের সামনে জয়টা এসেছে বাংলাদেশেরই। ২০ বছর পর ঘরের মাঠে রাকিব হোসেন ও ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের গোলে মালদ্বীপকে ২-১ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে জায়গা করে নিয়েছে হাভিয়ের কাবরেরার দল। সবশেষ ২০০৩ সাফে মালদ্বীপকে নিজেদের মাঠে হারিয়েছিল বাংলাদেশ ফুটবল দল। 

দারুণ এই জয়ে বাছাইপর্বের ‘আই’ গ্রুপে জায়গা করে নিল লাল-সবুজের দল। এই গ্রুপে অস্ট্রেলিয়া, ফিলিস্তিন ও লেবানন আগে থেকেই আছে। এবার বাছাইপর্বে সেই গ্রুপে খেলবে কাবরেরার দল। ১৬ নভেম্বর মেলবোর্নে প্রথম ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। 

মালদ্বীপ পর্বে গোল করে বাংলাদেশের বাঁচিয়ে রেখেছিলেন সাদউদ্দিন। ঘরের মাঠে তাঁকে একাদশে সুযোগ করে দেন বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। আগের ম্যাচের একাদশ থেকে সাইডবেঞ্চে ডিফেন্ডার ইসা ফয়সাল। একাদশে পরিবর্তন বলে গেলে কেবল এই। 

খেলার দ্বিতীয় মিনিটে তারিক কাজী ও শাকিল হোসেনের ভুল বোঝাবুঝিতে অল্পে রক্ষা বাংলাদেশের। প্রথম পর্বে এই দুজনের ভুলে গোল হজম করেছিল বাংলাদেশ। এবার গোল না হলেও তারিক-শাকিলের ভুল ভয় ধরিয়েছিল বাংলাদেশ সমর্থকদের মনে। 

মালদ্বীপ শুরু থেকে আক্রমণাত্মক খেলে ভয় ধরানোর চেষ্টা করলেও প্রথম চেষ্টাতেই সাফল্য বাংলাদেশের। দলীয় এক প্রচেষ্টাতে ১১ মিনিটে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের। সাদউদ্দিনের বাড়িয়ে দেওয়া বল বাইরে যাওয়ার আগেই দারুণ এক কাট ব্যাক করেন ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। চলন্ত বলে দারুণ ভলিতে বলকে জালে জড়ান রাকিব হোসেন। 

বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারত ১৫ মিনিটেই। অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার বাড়ানো বলে ফাহিমের শট ফিস্ট করে ফেরান মালদ্বীপ গোলরক্ষক হুসেইন শরীফ। 

২৯ মিনিটে রাকিব হারিয়েছেন দলকে এগিয়ে দেওয়ার আরেকটি সুযোগ। মাঝমাঠ থেকে মো. হৃদয়ের বাড়ানো বল মালদ্বীপের এক ফুটবলারের মাথায় লেগে ফাঁকায় পান রাকিব। সামনে ছিলেন মালদ্বীপ গোলরক্ষক। রাকিবের ঠান্ডা মাথার শট ফিরিয়ে দিয়ে স্বাগতিকদের এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেননি মালদ্বীপ গোলরক্ষক। 

৩৩ মিনিটে গোল প্রায় শোধ করেই ফেলেছিল মালদ্বীপ। বাংলাদেশের নড়বড়ে রক্ষণের সুযোগ নিয়ে হামজা মোহামেদ শট নিয়েছিলেন, বাংলাদেশ গোলরক্ষক মিতুল মারমা ফেরান সেই শট। 

পরের মিনিটে রাকিব আবারও হতাশ করেছেন। জামালের ক্রসে রাকিবের শট ঠেকে ক্রসবারে। 

বাংলাদেশ না পারলেও মালদ্বীপ ঠিকই গোল শোধ করেছে ৩৬ মিনিটে। হামজার কর্নার বাংলাদেশের ফাহিমের মাথায় লেগে ফাঁকায় বল পান ইব্রাহিম আইসাম। ঠান্ডা মাথায় বল জালে জড়ান মালদ্বীপ মিডফিল্ডার। 

 বিরতি থেকেই বাংলাদেশকে গোলের আনন্দে ভাসান একের পর এক সুযোগ নষ্ট করা ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। ৪৭ মিনিটে বাঁ প্রান্ত থেকে সাদউদ্দিনের শট প্রথম দফায় ফেরান মালদ্বীপ গোলরক্ষক। ফিরতি বলে সোহেল রানার পা হয়ে বল পান ফাহিম। ডান পায়ের শটে বল জালে জড়াতে এ যাত্রায় ভুল হয়নি বাংলাদেশি ফরোয়ার্ডের। জাতীয় দলের হয়ে তুলে নেন প্রথম গোল। 

ফাহিমের গোলে এগিয়ে যাওয়া ম্যাচটাকে মালদ্বীপের দিকে ঠেলে দিল মো. সোহেল রানার শিশুতোষ ভুল। ম্যাচের ৫৯ মিনিটে মালদ্বীপের অর্ধে অহেতুক ফাউল করে বসলেন সোহেল রানা। দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখিয়ে তাঁকে মাঠ ছাড়া করেন বাহরাইনের রেফারি। প্রতিবাদ করতে গিয়ে হলুদ কার্ড দেখেন রাকিব হোসেনও। 

১০ জনের দল নিয়ে ৬১ মিনিটে ব্যবধানটা বাড়াতে পারত বাংলাদেশ। রাকিব হোসেনের ক্রস থেকে বল ফাহিমের পায়ে যাওয়ার আগেই বিপদমুক্ত করেন মালদ্বীপ ডিফেন্ডার হুসেইন ইউসুফ। ৭৯ মিনিটে ফাহিমের শট ছিল পোস্টের বাইরে।  

সমতায় ফিরতে শেষ সময়ে বাংলাদেশকে কঠিন চাপে ফেলে মালদ্বীপ। এই সময়ে ক্রমেই স্বাগতিকদের অর্ধে আক্রমণ পর আক্রমণ করে গেছে মালদ্বীপ। এর মাঝেও ৮৯ মিনিটে বল জালে জড়িয়েছিলেন বিশ্বনাথ ঘোষ তবে রেফারি বাজান ফাউলের বাঁশি। শেষ দিকে মুজিবর রহমান জনিকে ফাউল করে লাল কার্ড দেখেন মালদ্বীপ ডিফেন্ডার আহনাফ রশিদ। শেষ সময় স্নায়ুর পরীক্ষায় পাস করে দর্শকদের উল্লাসে ভাসান রাকিব-বিশ্বনাথরা।


এএফ/১০