জাদেজার জাদু নাকি স্যান্টনারের ভেলকি

খেলা ডেস্ক


অক্টোবর ২২, ২০২৩
১১:৪১ পূর্বাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ২২, ২০২৩
১১:৪১ পূর্বাহ্ন



জাদেজার জাদু নাকি স্যান্টনারের ভেলকি

জাসপ্রিত বুমরার স্লোয়ার বলটিতে কাট শট খেললেন ক্রিজে থিতু হয়ে যাওয়া মুশফিকুর রহিম। লক্ষ্য স্পষ্ট, ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট ফিল্ডারকে ফাঁকি দিয়ে বল বাউন্ডারিতে পাঠানো। কিন্তু ওই জায়গায় যে দাঁড়িয়ে রবীন্দ্র জাদেজা, যার বাধা পেরিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। মুশফিকও পারলেন না। ডানদিকে লাফিয়ে বল মুঠোয় জমালেন জাদেজা।ধারাভাষ্যকার বলে উঠলেন, ‘সুপার্ব ক্যাচ’।

জাদেজার জন্য এমন প্রশংসা অবশ্য ‘ডাল-ভাত’। দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ের জন্য অহরহই স্তুতির জোয়ারে ভাসেন তিনি। এমনিতে তো আর তাকে সময়ের সেরা ফিল্ডারদের কাতারে রাখা হয় না! শুধু ফিল্ডিংয়েই নয়, ব্যাটে-বলেও সমান পারদর্শী জাদেজা। এককথায়, প্রকৃত অলরাউন্ডার, হালের সেরাদের একজন।

পরিবারের কথা শুনলে ক্রিকেটার হওয়া হতো না জাদেজার। ক্রিকেট বিশ্বও পেত না এমন দুর্দান্ত একজনকে। বাবার চাওয়া ছিল ছেলে হবে সেনাবাহিনীর অফিসার, কিন্তু জাদেজার মনে ছিল ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা। শেষ পর্যন্ত এই খেলাতেই ক্যারিয়ার গড়লেন তিনি। ১৬ বছর বয়সে ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলে ডাক পেয়ে শুরু তার স্বপ্নযাত্রা।

২০০৮ যুব বিশ্বকাপজয়ী ভারত দলের সহঅধিনায়ক ছিলেন এই অলরাউন্ডার। পরের বছর ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেকে ৬০ রানের ইনিংস খেলে জানান দেন তার ব্যাটিং সামর্থ্যরে। ওই বছরের ডিসেম্বরে লঙ্কানদের বিপক্ষেই বাঁহাতি স্পিনে ৩২ রানে ৪ উইকেট নিয়ে প্রথমবার হন ম্যাচ সেরা। সময়ের সঙ্গে নিজেকে চমৎকার এক অলরাউন্ডার হিসেবে গড়ে তোলেন জাদেজা। এখন ভারতের তিন সংস্করণের দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ তিনি।

চলতি বিশ্বকাপে ভারতের খেলা চার ম্যাচের একাদশেই ছিলেন জাদেজা। রান আটকাতে হবে? জুটি ভাঙতে হবে? রোহিত শর্মার বড় অস্ত্রের একটি যে তিনি। আফগানিস্তান ম্যাচ ছাড়া বাকি তিনটিতেই উইকেটের দেখা পেয়েছেন জাদেজা। আসরে এখন পর্যন্ত তার শিকার মোট ৭টি, সর্বোচ্চ তিনটি নিয়েছেন প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। দলের টপ ও মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানরা এতটাই ভালো করছেন যে একটি ম্যাচেও ব্যাটিংয়ে নামতে হয়নি ভারতের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডেতে আড়াই হাজার রান ও দুইশ উইকেট নেওয়া এই অলরাউন্ডারকে। ধর্মশালায় আজ ছন্দে থাকা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে লড়াই ভারতের। এবারের আগে দুটি ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলা জাদেজার কাছে থেকে অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের আশায় থাকবে স্বাগতিকরা।

জাদেজার ব্যাটিং নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তায় থাকার কথা ভারতের। দীর্ঘদিন ধরেই যে ছন্দে নেই ৩৪ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার। চলতি বছর ওয়ানডেতে ১২ ইনিংসে রান করেছেন মোটে ১৮৯। এই সংস্করণে তার ব্যাট থেকে সবশেষ ফিফটি এসেছে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। তবে কিউইদের সঙ্গে তার ব্যাটিং পরিসংখ্যান ভারতকে দিতে পারে স্বস্তি। ১০ ইনিংসে তাসমান সাগর পাড়ের দলটির বিপক্ষে ৪৬ গড়ে রান করেছেন ৩২২, ফিফটি চারটি। বল হাতে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ১২ ম্যাচে তার শিকার ৮ উইকেট। আর চলতি বছর ওয়ানডেতে ৯ ম্যাচে নিয়েছেন ২২ উইকেট। উড়তে থাকা নিউজিল্যান্ডকে হারাতে হলে জ্বলে উঠতে হবে ওয়ানডেতে দুইশ উইকেট নেওয়া ভারতের একমাত্র বাঁহাতি স্পিনারকে।

ভারতের যেমন আছে জাদেজা, নিউজিল্যান্ড দলে আছে মিচেল স্যান্টনার। তিনিও বাঁহাতি স্পিনার, কার্যকর ব্যাটসম্যান এবং দুর্দান্ত এক ফিল্ডার। তাই আজকের ম্যাচে দুই অলরাউন্ডারের টক্করটা উপভোগ্য হবে, আশায় থাকতেই পারেন ক্রিকেট সমর্থকরা। দলকে জয়রথে রাখতে ৩১ বছর বয়সী স্যান্টনার তো মুখিয়ে থাকবেন জাদেজার মতো তারকাকে সাক্ষী রেখে নিজের সেরাটা মেলে ধরতে। দুর্দান্ত কিছু করে হয়তো বলতে চাইবেন, ‘মাঠে কেবল জাদেজা নয়, আমিও আছি।’ জ্বলে উঠতে পারবেন কিনা কিউই অলরাউন্ডার, সেটা বলবে সময়।

২০১৫ সালে ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখা স্যান্টনার এখন নিউজিল্যান্ডের রঙিন পোশাকের দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। দেশের হয়ে দ্বিতীয় ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলছেন তিনি। আছেন দারুণ ছন্দেও, বিশেষ করে বল হাতে। বাঁহাতি স্পিনে চার ম্যাচেই নামের পাশে যোগ করেছেন ১১ উইকেট। আসরে তার সেরা পারফরম্যান্স নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। ওই লড়াইয়ে নিউ জিল্যান্ডের প্রথম বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে বিশ্বকাপে ৫ উইকেট নেন তিনি। সঙ্গে ব্যাট হাতে ১৭ বলে দুই ছক্কা ও তিন চারে খেলেন ৩৬ রানের বিস্ফোরক ইনিংস। এই পারফরম্যান্সে জিতে নেন ম্যাচ সেরার পুরস্কারও। আফগানিস্তানের বিপক্ষে তার শিকার ছিল ৩ উইকেট।

বল হাতে ছন্দে আছেন তিনি অনেকদিন ধরেই। এবছর ১১ ইনিংসে হাত ঘুরিয়ে নিয়েছেন ১৫ উইকেট। ফর্মে থাকা ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের জন্য স্যান্টনারের স্পিন বড় হুমকি হতে পারে। পরিসংখ্যান অবশ্য বলছে, তার বিপক্ষে সফল ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। ভারতের বিপক্ষে ২১ ম্যাচে যে কেবল ১৩ উইকেট নিতে পেরেছেন তিনি। এই প্রতিপক্ষের সঙ্গে ব্যাটিংয়েও খুব ভালো করতে পারেননি স্যান্টনার। ১৫ ইনিংসে রান মাত্র ২৫৩, ব্যাটিং গড় কেবল ২৩। ওয়ানডেতে তিন ফিফটি একটি ভারতের সঙ্গে করেছেন তিনি। এই সংস্করণে তার ক্যারিয়ার গড় ২৮.৭৭, রান ১২৯৫। ব্যাট হাতে ধারাবাহিক পারফর্ম করার সুযোগ অবশ্য নেই স্যান্টনারের। ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময়ই আটে নামা এই ক্রিকেটারের কাঁধে থাকে শেষ দিকে দ্রুত রান তোলার দায়িত্ব। তার শক্তির জায়গা বলা চলে বোলিংই।

পরিচিত কন্ডিশনের সুবিধা তো পাবেনই জাদেজা। ভারতের কন্ডিশন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা আছে স্যান্টনারেরও। ২০১৯ সাল থেকে আইপিএল খেলছেন কিউই এই অলরাউন্ডার। সেই সুবিধা কাজে লাগাতে পারেন তিনিও। কে কতটা জ্বলে উঠতে পারেন, নিজেকে মেলে ধরতে, সেটা তোলা থাক সময়ের হাতে।

আরসি-০৯