ডিপেনডেবল মুশফিক আইসম্যান মার্করাম

খেলা ডেস্ক


অক্টোবর ২৪, ২০২৩
১০:৫০ পূর্বাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ২৪, ২০২৩
১০:৫০ পূর্বাহ্ন



ডিপেনডেবল মুশফিক আইসম্যান মার্করাম

ছোটবেলা থেকেই পছন্দ ছিল ক্রিকেট। ব্রায়ান লারাকে মানতেন আদর্শ। ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তির পদাঙ্ক অনুসরণ করেই এ খেলায় ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্নে ছিলেন বিভোর। সেই অভিযানে কঠিন সব পথ পাড়ি দিয়ে এখন পর্যন্ত বেশ সফল মুশফিকুর রহিম। নিজেকে তুলে নিয়েছেন অন্য এক উচ্চতায়। নিঃসন্দেহে বলা যায়, বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন তিনি। দলের ব্যাটিং অর্ডারের সবচেয়ে বড় ভরসা। ‘মিস্টার ডিপেনডেবল’ তকমা পেয়ে গেছেন অনেক আগেই।

ক্রিকেটের প্রতি ঝোঁক মুশফিককে দেয় বাড়তি অনুপ্রেরণা। ফলে নিজেকে সেরাদের কাতারে সব সময়ই রাখতে চান তিনি। এর জন্য যে কঠোর পরিশ্রম, সুশৃঙ্খল জীবনযাপন প্রয়োজন; বেশ ভালো করেই জানেন ২০০৬ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালদের নেতৃত্ব দেওয়া মুশফিক। তার অভিধানে পরিশ্রম, তপস্যা, সাধনাই প্রধান শব্দ। মুশফিকের সতীর্থ ও ভায়রা ভাই মাহমুদউল্লাহ যেমন বলেন, ‘বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে সুশৃঙ্খল সে। সবচেয়ে পরিশ্রমীও। আমার জীবনে এমন পরিশ্রমী ক্রিকেটার দেখিনি।’ সত্যিই তাই। মুশফিকের পরিশ্রম, খেলাটির প্রতি নিবেদন ও তাড়না বাংলাদেশের সব ক্রিকেটারের জন্য আদর্শ হওয়া উচিত। জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের বিশ্রামের দিনও মুশফিককে দেখা গেছে অনুশীলন করতে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা নেটে ব্যাটিং করতে। আর দলের অনুশীলনের দিন তো সবার আগে হাজির থাকেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান।

আন্তর্জাতিক আঙিনায় পা রাখেন মুশফিক ২০০৫ সালে, ক্রিকেটের তীর্থভূমি লর্ডসে টেস্ট দিয়ে। পরের বছর দেশের হয়ে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতেও পথচলা শুরু হয়ে যায় তার। বিশ্বমঞ্চে অভিষেক আলাদাভাবে মনে থাকার কথা মুশফিকের, পছন্দের ক্রিকেটার লারার দেশেই যে খেলেছিলেন প্রথম ম্যাচ। ২০০৭ বিশ্বকাপে সেবার গ্রুপ পর্বে ভারতকে হারিয়ে শুভসূচনা করেছিল বাংলাদেশ, ম্যাচ জেতানো রানটি এসেছিল মুশফিকের ব্যাট থেকে। শুধু কি তা-ই, পোর্ট অব স্পেনের ওই ম্যাচে ৫৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। চলমান ভারত বিশ্বকাপটি তার পঞ্চম আসর। পাঁচ বিশ্বকাপ খেলা বাংলাদেশের দুই ক্রিকেটারের একজন তিনি, আরেকজন সাকিব আল হাসান।

ক্যারিয়ারের মধ্যগগন পেরিয়ে ৩৬ বছর বয়সী মুশফিক আছেন গোধূলি লগ্নে। এই সময়ে বেশিরভাগ ক্রিকেটারের ফর্মই থাকা পড়তির দিকে। কিন্তু কঠোর পরিশ্রমকে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার বানিয়ে এই বয়সেও বাইশ গজে ব্যাট হাতে দাপট দেখিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ভারতেও হাসছে তার ব্যাট। ৪ ম্যাচে ২ ফিফটিতে করেছেন এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ১৫৭ রান। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫১ ও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে করেন ৬৬ রান। ভারতের সঙ্গে তার ব্যাট থেকে রান আসে ৩৮। বিশ্বকাপে এখন অবধি ৩৩ ম্যাচ খেলা অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের রান ১০৩৪, সেঞ্চুরি আছে একটি, ফিফটি ৮টি। ওয়ানডের বৈশ্বিক আসরে বাংলাদেশের হয়ে তার চেয়ে বেশি রান আছে কেবল সাকিবের, ১২০১।

আজ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে লড়াই বাংলাদেশের। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক মুশফিকের কাছ থেকে দারুণ একটি ইনিংসের প্রত্যাশায় থাকবে দেশের কোটি কোটি ক্রিকেট সমর্থক। হতাশ করার কথা নয় ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানের। কারণ প্রোটিয়াদের বিপক্ষে তার পারফরম্যান্স আহামরি না হলেও আশার ছবি দেখাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১৪ ওয়ানডে খেলে এক সেঞ্চুরি ও দুই ফিফটিতে ৩১২ রান করেছেন ৩১.২০ ব্যাটিং গড়ে। আর চলতি বছরও তার সময়টা কাটছে দারুণ। ২১ ওয়ানডেতে এক সেঞ্চুরি ও ছয় ফিফটিতে করেছেন বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭৫২ রান, ব্যাটিং গড় ৪৭।

চলতি বিশ^কাপে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং যেকোনো দলের জন্য হয়ে উঠেছে ভীতির কারণ। এখন পর্যন্ত যে তিনটি ম্যাচে তারা আগে ব্যাটিং করেছে, সবগুলোতেই এসেছে তিনশোর বেশি রান। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪২৮, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ৩১১ ও ইংল্যান্ডের সঙ্গে ৩৯৯ রান, জিতেছে তিনটিতেই। নেদারল্যান্ডসের ২৪৫ রান তাড়া করে অবশ্য জিততে পারেনি। তবে তাদের আগ্রাসী ঘরানার ব্যাটিং নিয়ে চলছে আলোচনার ঝড়। এই ভয়ংকর ব্যাটিং লাইনআপের অন্যতম সেনানি এইডেন মার্করাম। বাংলাদেশের জন্যও তিনি বড় হুমকি নিঃসন্দেহে।

বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখেন মার্করাম। ওই বছরই হয়ে যায় তার ওয়ানডে অভিষেক। জাতীয় দলের হয়ে টি-টোয়েন্টি প্রথম খেলেন ২০১৯ সালে। ২০ ওভারের ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক তিনি। ওয়ানডেতে গত ম্যাচে টেম্বা বাভুমার অনুপস্থিতিতে নেতৃত্ব দেন তিনি। তার মধ্যে অধিনায়কত্ব নিয়ে সতীর্থ কেশব মহারাজ বলেন, ‘হি ইস অ্যা গ্রেট লিডার।’ ব্যাট হাতেও তিনি দুর্দান্ত। ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে গড়েন ইনিংস। সতীর্থদের কাছে তাই তার নাম ‘আইসম্যান’। সব সময় যে তিনি ঠাণ্ডা তা নয়, রাসি ফন ডার ডুসেন যেমন বললেন, ‘সে স্পেশাল একজন ক্রিকেটার। প্রয়োজনের সময় সে খুবই আগ্রাসী ব্যাটসম্যান।’

মার্করাম কতটা ভয়ংকর হতে পারেন তার প্রমাণ মিলেছে এবারের বিশ্বকাপেও। আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ৪২৮ রানের রেকর্ড পুঁজি গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। লঙ্কান বোলারদের ওপর ঝড় তুলে ওই ম্যাচে ৫৪ বলে ১০৬ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন ডানহাতি মার্করাম। ৪৯ বলে তিন অঙ্ক ছুঁয়ে গড়েন বিশ^কাপে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড। পরের ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ৪৪ বলে করেন ৫৬ রান। সবশেষ ম্যাচে ইংলিশদের বিপক্ষে তার ব্যাট থেকে আসে ৪২। ডাচদের বিপক্ষে মার্করাম করেন কেবল ১, ম্যাচও হারে দল। মহারাজ তাই তো বললেন, ‘সে যখন ছন্দে থাকে, দলও ছন্দে থাকে।’

প্রোটিয়াদের ব্যাটিং লাইনআপের স্তম্ভ বলা যায় মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান মার্করামকে। বাংলাদেশের বিপক্ষে খুব বেশি খেলার অভিজ্ঞতা নেই তার। যে তিন ওয়ানডে খেলেছেন, সেখানে ফিফটি করেছেন একটি। চলতি বছর তো উড়ছেন তিনি, ১৫ ওয়ানডেতে ষাটের বেশি গড়ে করেছেন দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৭৮২ রান। স্ট্রাইক রেটও চোখধাঁধানো, ১২৪.৭২! তিন ওয়ানডে সেঞ্চুরির তিনটিই এই সময়ে পেয়েছেন তিনি, ফিফটি এসেছে তিনটি। ভারতের কন্ডিশন সম্পর্কেও ভালো ধারণা আছে মার্করামের। তিন আসর ধরে আইপিএলে ৩৩ ম্যাচ খেলে ৪ ফিফটিতে করেছেন ৭৭৫ রান। নিয়মিত না হলেও অফ স্পিনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন তিনি। যেকোনো দলের বিপক্ষে একাই ব্যবধান গড়ে দিতে যথেষ্ট ২৯ বছর বয়সী মার্করাম।

আরসি-০৪