লাগামহীন দ্রব্যমূল্যে দিশেহারা অবস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক


জানুয়ারি ২৭, ২০২৪
০৫:২৭ অপরাহ্ন


আপডেট : জানুয়ারি ২৮, ২০২৪
০৮:০৬ অপরাহ্ন



লাগামহীন দ্রব্যমূল্যে দিশেহারা অবস্থা


লাগামহীন ভাবে বেড়েই চলছে নিত্য পণ্যের দাম ফলে দিশেহারা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সাধারণ মানুষ। বাজারে কোনোভাবেই পণ্যের দামে লাগাম টানা যাচ্ছে না। হু হু করে বেড়েই চলছে। 

চাল থেকে শুরু করে ব্রয়লার মুরগি, ডিম, আদা-রসুন, চিনি বাড়তি দরে কিনতে হচ্ছে। এমনকি মাছ ও গরুর মাংসের দাম ক্রেতার নাগালের বাইরে চলে গেছে। শুধু তাই নয়, দাম এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, শাক-সবজিতেও হাত দেওয়া যাচ্ছে না। বাজারে শীতকালীন সবজি থাকলেও, তারপরও আগের সেই চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের মতোই উত্তপ্ত অবস্থায় রয়েছে অধিকাংশ সবজির দাম। গতকাল শুক্রবার নগরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। 

টানা ৪র্থ বারের মতো নতুন মেয়াদে সরকার শপথ নিয়েছে। এ সরকারের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা। ক্ষমতাসীন দল তাদের নির্বাচনী ইশতেহারেও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। 

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন-মূল্য স্বাভাবিক করতে সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা কাজে আসছে না। বরং অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে বছরের ব্যবধানে প্রায় সব পণ্যের দাম দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হয়েছে। কিন্তু বছরের পর বছর অসাধু ব্যবসায়ীদের ‘সিন্ডিকেট’ সক্রিয় থাকলেও কার্যকর অর্থে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে প্রতিবছরই ক্রেতাকে জিম্মি করে নিত্যপণ্যের কৃত্রিম দাম বাড়িয়ে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ওই চক্রটি। সরকারি নির্দেশনার বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না করেই উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে কাঁচাবাজারের সব পণ্য। বাজারের এই লাগামহীন পরিস্থিতিতে হাঁপিয়ে উঠছেন ক্রেতারা। 

বেসরকারি চাকরিজীবী জামিল বলেন, যেটাই ধরি সেটির দামই আগুনের মতো। মধ্যবিত্ত দূরে থাক, নিম্নবিত্তের তো কেনার প্রশ্নই আসে না। কারণ, কোনো কিছুর দামই কম না। প্রতিদিনই দাম বাড়ছে। সরকার আজ বলে দাম কমবে। পরদিন থেকেই দাম চড়ে যায়। 

বাজারে চালসহ বেশিরভাগ খাদ্যপণ্যও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। নির্বাচনের পরে প্রতি কেজি চালের দাম ৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছিল। এখনো সে দাম স্বাভাবিক হয়নি। ভরা মৌসুমে কেজিপ্রতি ৬ থেকে ১০ টাকা বেশি দামেই কিনতে হচ্ছে চাল। 

বিক্রেতারা জানান, গত এক সপ্তাহে প্রতি কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা, এমনও চাল আছে ১৫ টাকা কেজিতে বেড়েছে। মিনিকেট গত সপ্তাহে ৬০ টাকায় বিক্রি করেছি এখন ৭০ টাকায় বিক্রি করা যায়না। কেনাই পড়েছে ৬৭ টাকা। 

অন্যদিকে, আটা-ময়দা ও ডালের দাম এক লাফে কেজিতে ৭ থেকে ১০ টাকা ও তেল বিক্রি হচ্ছে লিটারপ্রতি ৪ টাকা বাড়তি দামে। বোতলজাত ভোজ্যতেলের দাম গত সপ্তাহে প্রতি লিটারে ৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এরপর থেকে খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বাড়ছে। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা এবং পাম তেল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা। আগের সপ্তাহের তুলনায় যা ৫ টাকা বেশি। 

একই সঙ্গে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত আটা ও ময়দার দাম ১০ টাকা এবং চিনির দাম বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত। বাজারে প্রতি কেজি প্যাকেটের আটার দাম এখন ৬৫ টাকা। ময়দার দাম বেড়েছে হয়েছে কেজিপ্রতি ৮০ টাকা। 

চিনির দামেও একই ধরনের অস্থিরতা। প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনি বাজারে ১৪৮ টাকা মূল্য থাকলেও বিক্রেতারা সেটা খুলে বিক্রি করছেন ১৫০-১৬০ টাকায়। দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে রমজানের পণ্য ছোলাসহ আদা-রসুন। 

সব ধরণের ডালে কেজি প্রতি বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। মুগ ডালের আকাশছোঁয়া দাম, কেজিতে বেড়েছে ৮-১০ টাকা। মুগ ডাল ১৬৮ টাকা, বুটের ডাল ১০৮ টাকা, অ্যাংকর ডাল ৭৫ টাকা, মসুর ডাল ১৪০ টাকা, ছোলার ডাল ১০০ টাকা, খেসারির ডাল ১০০ টাকা, ডাবলি ৭২ টাকা ও মোটা ডাল ১১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। 

দোকানদাররা জানান, এক মাস আগে ছোলার দাম ছিল ৭৫-৭৫ টাকা। সেই ছোলা এখন ১০২ টাকা। রসুন ২৬০-২৮০ টাকা, আদা ২২০-২৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। 

এদিকে বাজারে নতুন আলু ও পেঁয়াজের সরবরাহ প্রচুর থাকলেও কমছে না দাম। ভরা মৌসুমেও নতুন আলু ৫০-৫৫ টাকা, দেশি পুরাতন আলু ৭০-৮০ টাকা, মুড়িকাটা নতুন পেঁয়াজ ৮০-৯০ টাকা, ভালো মানের পেঁয়াজ ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা পর্যন্ত। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২২৫ টাকা। যা গত মাসে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকার মধ্যে ছিল। সোনালি জাতের মুরগির দামও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকায়। আর গরুর মাংসের দাম ৬৫০ টাকা থেকে লাফিয়ে ৭৫০ টাকা হয়েছে। 

শীতের শুরুর দিকে যে বেগুন বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। এখন সেটি ঠেকেছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। টমেটো ৬০ থেকে ৭০ টাকা, ফুলকপি ৬০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০-৫০ টাকা, শিম ৮০-১০০ টাকা, পেঁপে ৪০-৫০ টাকা, করলা ৭০-৮০ টাকা, চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা, ঢেঁড়শ ৭০-৮০ টাকা, মান ও সাইজভেদে লাউ ৭০-১০০ টাকা, শসা ৫০-৬০, মূলা ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। 

ভোক্তারা বলছেন, ভরা মৌসুমে শীতকালীন সবজির দাম কমার কথা। কিন্তু দাম না কমে বরং বেড়ে যাওয়ার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। ভোক্তাদের অভিযোগ, বাজারে সিন্ডিকেট কাজ করছে। যা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। যে কারণে এ পরিস্থিতি। 



এএফ/০১