উৎসবমুখর পরিবেশে সিলেট লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক


ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২৪
০৮:৩৬ পূর্বাহ্ন


আপডেট : ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২৪
০৬:৪৯ অপরাহ্ন



উৎসবমুখর পরিবেশে সিলেট লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত


উৎসবমুখর পরিবেশে সিলেটে সম্পন্ন হলো লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াডের প্রথম পর্ব। সিলেটের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেয়। এর মধ্যে থেকে দুই ক্যাটাগরিতে ২০ জন ঢাকায় চূড়ান্ত পর্বের জন্য মনোনীত হয়েছে। শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টায় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সিলেট নগরের সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করা হয়।

কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে মাতৃভাষা চর্চা, প্রচার ও প্রসার ঘটাতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট এ আয়োজন করেছে।

সিলেটের জেলা প্রশাসকের পক্ষে সকালে শুরুতে আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা উত্তোলন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এস এম আবুল কাসেম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াডের বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুহম্মদ আসাদুজ্জামান। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক (প্রশাসন, অর্থ ও উন্নয়ন) মো. আজহারুল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগেরপ্রধান অধ্যাপক ফারজানা সিদ্দিকা এবং লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াড সিলেট অঞ্চলের আহবায়ক ও মাউশি সিলেটের আঞ্চলিক পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল মান্নান খান।

অতিথিদের উপস্থিতিতে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াডের উদ্বোধন করা হয়। স্বাগত বক্তব্য দেন সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কবির খান। 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয় লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াডের নির্ধারিত পরীক্ষা। এতে মোট ৮০০ শিক্ষার্থী অংশ নেয়।

এর মধ্যে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি ক্যাটাগরিতে ৫৫০ জন এবং দশম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি ক্যাটাগরিতে ২৫০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে পরীক্ষা। এরপর লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াডের মূল্যায়ন ও ফলাফল ঘোষণা করা হয়।

এ পর্বে ড. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, মো. আজহারুল আমিন, আব্দুল মান্নান খান, মাউশির উপপরিচালক (কলেজ-১) অধ্যাপক ওয়াহিদুজ্জামান, আমাইয়ের উপপরিচালক মো.  আবদুল কাদের, উপপরিচালক নিগার সুলতানা, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এ এস এম আব্দুল ওয়াদুদ, সহকারি পরিচালক পুলক কুমার ধর, সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কবির খান প্রমুখ প্রশ্নোত্তরপর্ব ও উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন।

ড. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ভাষা মানুষের পরম সম্পদ। মাতৃভাষা চর্চার মধ্য দিয়েই একটি জনগোষ্টি তার মনন, মেধা ও চিন্তা প্রকাশ করে।’

তিনি লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াড আয়োজনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, ‘এর মাধ্যমে বিশ্বের প্রতিটি মাতৃভাষা চর্চাকে উৎসাহিত করা। মাতৃভাষা হারিয়ে যাওয়া মানে ওই ভাষার কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও সভ্যতা বিলিন হয়ে যাওয়া। ভাষা বিজ্ঞানীদের অনুমান আগামী ৫০-৬০ বছরের মধ্যে বিশ্বের শতকরা ৯০ শতাংশ ভাষা পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবে।’ 

অধ্যাপক ফারজানা সিদ্দিকা প্রতিযোগিদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘মাতৃভাষার শক্তি সত্য বলা। মাতৃভাষার দৌড় আজকের আয়োজনের মাধ্যমে শুধু ঢাকা পর্যন্ত পৌঁছনো নয়, পৃথিবীব্যাপী আধিপত্য বিস্তার করা। কিছু হও বা না হও পৃথিবীময় মাতৃভাষা ছড়িয়ে দাও।’

এ ছাড়া অনুষ্ঠানের সভাপতি তাঁর বক্তব্যে বলেন, “পৃথিবীতে বাংলাভাষা প্রতিনিয়ত প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। পৃথিবীর বাহিরেও বাংলা ভাষা প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। ‘নমস্কার বাংলা ভাষাকে শুভেচ্ছা’—এ আওয়াজে মহাশূন্যেও প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। ভাষা শক্তিশালী হলে সুফল পাওয়া যাবে।”

লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াডের সদস্য ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের উপপরিচালক (প্রকাশনা, প্রচার, তথ্য ও জনসংযোগ) মো. আবদুল কাদের বলেন, “আজকের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দুই ক্যাটাগরিতে ১০ জন করে মোট ২০ জন ফাইনাল রাউন্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছেন। একইভাবে সিলেটসহ পাঁচ বিভাগ—ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের দুই ক্যাটাগরিতে ২০ জন করে মোট ১০০ প্রতিযোগী চূড়ান্ড পর্বে অংশ নেবে। ‘ক’ ক্যাটাগরিতে ৫০ জন থেকে তিনজন এবং ‘খ’ ক্যাটাগরিতে ৫০ জন থেকে আরো তিনজনসহ ছয়জন প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে একুশের অনুষ্ঠানমালায় পুরস্কার গ্রহন করবেন।”

এই ছয়জন ব্রাজিলে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াডের জন্য বিবেচিত হবেন বলেও জানান আবদুল কাদের।


কালের কণ্ঠ/এএফ-০৩