দোয়ারাবাজার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক শূন্যতায় স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত

মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী, দোয়ারাবাজার


এপ্রিল ২৪, ২০২৪
০৩:৩৬ অপরাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ২৫, ২০২৪
০৫:০৪ অপরাহ্ন



দোয়ারাবাজার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক শূন্যতায় স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত
# এক যুগেরও বেশি সময় ধরে অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার নেই


সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন ধরে ডাক্তার শূন্যতায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। সরকারি এ হাসপাতাল চলে এখন কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তাদের দিয়ে। অনেককে তলব করেও আনা যাচ্ছে না হাসপাতালে। হাওর অধ্যুষিত ওই উপজেলায় আড়াই লাখেরও বেশি মানুষের বাস। ৯টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত উপজেলার বেশিরভাগ মানুষ মধ্য ও নিম্নবিত্তের। যেকোনো রোগে আক্রান্ত হলে ছুটতে হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে এখানকার চিকিৎসাসেবা। 

জানা যায়, ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ৩১ শয্যাবিশিষ্ট দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জনবল সংকটের কারণে খুড়িয়ে চলছে স্বাস্থ্যসেবা। ২০২৩ সালে হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও তা এখনও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যার কারণে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে ডাক্তারের পদগুলোও শূন্য রয়েছে। নামেমাত্র ৫০ শয্যার হাসপাতালটি কার্যত এখনো ৩১ শয্যার হাসপাতালই রয়ে গেছে। 

অন্যদিকে, দীর্ঘদিন ধরে এখানে অপারেশন থিয়েটার প্রস্তুত থাকলেও কোনো গাইনি কনসালটেন্ট নেই। এ কারণে ওই হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন সম্ভব হচ্ছে না। ফলে দুর্গম ওই উপজেলার গর্ভবর্তী মহিলাদের প্রসব কার্যক্রম বিভাগীয় শহর কিংবা জেলা সদরে গিয়ে করাতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তির শেষ নেই মানুষের। চিকিৎসক না থাকায় যেকোনো রোগী আসলেই রেফার করা হয় জেলা বা বিভাগীয় শহরের হাসপাতালগুলোতে। এ ছাড়া দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার নেই। প্রয়োজনের চেয়ে অপ্রতুল ওষুধ বরাদ্দের ফলে এখানে প্রয়োজনীয় ওষুধ পাচ্ছেন না রোগীরা। 

জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে দুই শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিতে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন। এর মধ্যে ভর্তি হন ২০-২৫ জন। চিকিৎসক সংকটের পাশাপাশি হাসপাতালের কর্মচারীরও সংকট রয়েছে। বাবুর্চি পদে দীর্ঘদিন কেউ নেই। সুইপারের ৫টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র একজন। মিড ওয়াইফ ৭ জনের মধ্যে আছেন ৪ জন, অফিস সহায়ক ৭ জনের মধ্যে একজনও নেই। এ ছাড়া এক্সরে মেশিন থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে টেকনোলজিস্ট নেই, নার্স ২৫ জনের মধ্যে মাত্র ১৫ জন কর্মরত আছেন। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ডেন্টাল নেই। আল্টাসনোগ্রাফ মেশিন থাকলেও পরিচালনার জন্য কোনো ডাক্তার নেই। 

সরেজমিন দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, সাধারণ ওয়ার্ডে বেশ কয়েকজন রোগী ভর্তি রয়েছেন। নার্স থাকলেও সেখানে কোনো চিকিৎসক নেই। উপজেলার পেশকারগাঁও গ্রামের আয়েশা বেগম নামের এক রোগী জানান, প্রায় সব ওষুধই বাইরে থেকে কিনতে হয়। সব সময় ডাক্তার পাওয়া যায় না। একই মন্তব্য করেন আরও কয়েকজন রোগী ও তাদের স্বজনরা। 

সম্প্রতি আরএমওসহ একসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের ৪ জন ডাক্তার বদলি হওয়ার ফলে কার্যত ডাক্তার শূন্য হয়ে পড়েছে ওই হাসপাতাল। এতে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। 

জানতে চাইলে সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. আহমেদ হোসাইন বলেন, ‘দুর্গম উপজেলা হিসেবে দোয়ারাবাজারে জনবল সংকট প্রকট। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত না নিলে আমাদের কী করার আছে।’



এএফ/০৩