সিলেটে বিদ্যুতের সুষম বণ্টন নিশ্চিত জরুরি

নিজস্ব প্রতিবেদক


সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪
০২:৫০ অপরাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪
০৮:২২ অপরাহ্ন



সিলেটে বিদ্যুতের সুষম বণ্টন নিশ্চিত জরুরি
নাগরিক সমাজের অভিমত


কখনও কখনও প্রতি ঘণ্টায় অন্তত একবার লোডশেডিং হচ্ছে। দিনের তুলনায় গভীর রাতে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ আরও বেশি। ভোর রাতেও লোডশেডিং হচ্ছে। এত লোডশেডিং হওয়ায় তীব্র গরমে হাঁসফাঁস দশা সিলেটের মানুষের। ব্যবসা-বানিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। উৎপাদন কমে যাওয়ায় লোডশেডিং বাড়লেও সিলেটে যে পরিমাণ লোডশেডিং হচ্ছে তাতে সিলেটবাসী বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে মনে করছেন অনেকে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ খাতে স্বচ্ছ নীতি, মনিটরিং এবং সুষম বণ্টন নীতি হওয়া উচিত বলে মনে করছেন নাগরিক সমাজ। 

সিলেটে গত কয়েক দিন ধরে চলছে সীমাহীন লোডশেডিং। 

বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী গত সোমবার সিলেট জেলায় লোডশেডিং ছিল ৩০ শতাংশের বেশি। রবিবার ছিল ৩৫ দশমিক ৯২ শতাংশ। তার আগের দিন শনিবার লোডশেডিং ছিল ৩০ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এটি সরকারি হিসাব। বাস্তবে চাহিদা ও বরাদ্দের মধ্যে আরও বেশি ফারাক। 

সিলেটের অধিকাংশ মানুষ মনে করেন তারা বিদ্যুৎ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ন্যায্যতা পাচ্ছেন না। বরং বৈষম্য করা হচ্ছে। অনেকে সরকারের আগের সরকারগুলোর ভ্রান্ত নীতির কথাও বলছেন। তবে সবার একটি প্রত্যাশা এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে হবে। 

বর্তমান লোডশেডিং নিয়ে সিলেট মিরর সিলেটের নাগরিক সমাজের সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের কাছ থেকেই এসব ক্ষোভ এবং প্রত্যাশার কথা উঠে এসেছে। 

সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘জাতীয় গ্রিড থেকে সিলেটের জন্য বরাদ্দের ক্ষেত্রে বৈষম্য করা হচ্ছে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় সিলেটে বরাদ্দ কম দেওয়া হচ্ছে এবং লোডশেডিং বেশি হচ্ছে।’ সিলেটের প্রতি এই বৈষম্য দূর করার জন্য তিনি অন্তর্বর্তী সরকার এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘সিলেটে চাহিদার চেয়ে বেশি বিদুৎ উৎপাদন হয়। অথচ সে অনুপাতে সিলেটে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে না। এটা সিলেটবাসীর প্রতি অবিচার।’ 

সাবেক এই মেয়র বলেন, লোডশেডিং পরিস্থিতি যে পর্যায়ে পৌছেছে তাতে সিলেটের মানুষ যেকোনো সময় আন্দোলন শুরু করতে পারেন। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের এই সময়ে আমরা কোনো আন্দোলনে যেতে চাই না। কিন্তু দেয়ালে পিঠ ঠেকে আমরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি মেয়র থাকাকালে প্রথম মেয়াদেই সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপনের প্রস্তাবনা সরকারের কাছে দিয়েছিলাম। কিন্তু বারবার চেষ্টা করেও সেটি করতে পারিনি। সেটা করতে পারলে এই সময়ে এভাবে লোডশেডিংয়ের কবলে পড়তে হতো না সিলেটবাসী।’



প্রবীণ রাজনীতিবিদ অ্যাডভোকেট বেদানন্দ ভট্টাচার্য বলেন, বিদ্যুৎ খাতে লুটপাট দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। এটি নতুন কোনো বিষয় নয়। সিলেটবাসীর প্রতি বৈষম্য করা হচ্ছে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই অঞ্চলের মানুষের মনে যে এই অনুভূতি আছে সেটা যাতে না হয় সেজন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। অর্থাৎ সুষম বণ্টন নীতি হওয়া জরুরি। এবং সেটি দৃশ্যমান হতে হবে। এই অঞ্চলের মানুষ যাতে জানতে পারে এখানে কতটুকু বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় এবং কতটুকু তারা পাচ্ছে। 



ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘সিলেট সবসময়ই সবক্ষেত্রে বঞ্চিত হয়ে আসছে। বিদ্যুৎও ব্যতিক্রম নয়। সিলেটে বর্তমানে যে পরিমাণে লোডশেডিং করা হচ্ছে তা অসহনীয় এবং অনাকাক্সিক্ষত।’ তিনি বলেন, ‘আমরা মানুষের জন্য রাজনীতি করি। কিন্তু সিলেটের মানুষ বিদুৎ যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে দ্রুত এই পনিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেবেন। দ্রুত এই সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ আমরা দেখতে চাই।’



বাংলাদেশ জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সিলেট মহানগর সভাপতি জাকির আহমদ বলেন, এটা সিলেটবাসীর প্রতি বৈষম্যের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। তিনি অবিলম্বে সিলেটে বিদ্যুতের লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার আহ্বান জানান। দিনে বড়জোর দুই ঘণ্টা লোডশেডিং হতে পারে। তাও ধাপে ধাপে। নতুবা আন্দোলনে নামা ছাড়া বিকল্প থাকবে না। যদিও এই সময়ে আমরা সেটি চাচ্ছি না। 



সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সফলতার পর আমরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছি এটা কষ্টকর। সিলেটে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, তারপরও আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া বিঘ্নিত হচ্ছে। বয়স্ক এবং অসুস্থ রোগীরা গরমে বিদ্যুৎহীন অবস্থায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এ থেকে দ্রুত পরিত্রাণ দরকার। 



সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদউল্লাহ শহিদুল ইসলাম শাহিন বলেন, সিলেটে যেভাবে লোডশেডিং হচ্ছে তাতে মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। অথচ সিলেটে চাহিদার অনেক বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। কিন্তু জাতীয় গ্রিড থেকে যে বরাদ্দ দেওয়া হয় সেটা কম। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ সেক্টরে স্বচ্ছতা ও মনিটরিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করা দরকার। বিদ্যমান সমস্যা দূর করে উৎপাদন বাড়াতে হবে। তিনি আরও বলেন, ভারতের সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয় পুনর্মূল্যায়নের সিদ্ধান্তের আগে বিকল্প হিসেবে ভুটানের সঙ্গে করা চুক্তিগুলোর বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার ছিল। 



এএফ/০৪