হাওরে নয়-ছয়ের প্রকল্প

সাইদুর রহমান আসাদ, সুনামগঞ্জ


জানুয়ারি ২৯, ২০২৪
০২:৪৪ অপরাহ্ন


আপডেট : জানুয়ারি ৩০, ২০২৪
১২:৩৭ অপরাহ্ন



হাওরে নয়-ছয়ের প্রকল্প


  • অপ্রয়োজনীয় বাঁধ নির্মাণই পাউবোর ‘আয়ের আধার’
  • এলজিইডির সড়ক করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড


সড়কটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতাধীন। রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের কাজের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এলজিইডির। তবে তাদের সড়ককে হাওররক্ষা বাঁধের আওতায় এনে পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) গঠন করে কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। 

শুধু তাই নয়, ভেকু মেশিনে অক্ষত সড়কের উপরের প্রলেপ সড়িয়ে লেভেল করা হচ্ছে। দেখে মনে হয়, সড়কের উপরে নতুন মাটি ফেলা হয়েছে। এমনই একটি বাঁধের কাজ হচ্ছে তাহিরপুরের উত্তরশ্রীপুর ইউনিয়নের তাহিরপুর-নতুন বাজার সড়কের ইসলামপুর গ্রামের সামনে। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, তাহিরপুরে এবার অপ্রয়োজনীয় কয়েকটি বাঁধ নির্মাণ হচ্ছে এবার। যেগুলো করার কোনো দরকার নেই। অপ্রয়োজনীয় জায়গায় বাঁধ নির্মাণকে পানি উন্নয়ন বোর্ড আয়ের আধার করে তুলেছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই সড়কের ইসলামপুর ও খলিশাজুরির গ্রামের সামনে ছোট দুটি ভাঙা রয়েছে। প্রতিবছর ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে এই দুটি জায়গায় সামান্য মাটি ফেলা হয়। তবে এ বছর এই দুই জায়গাসহ গোলকপুর থেকে খলিশাজুরী গ্রাম পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার সড়ক পাউবো নতুন প্রকল্প গঠন করেছে। এতে খরচ ধরা হয়েছে ২৫ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। কমিটির সভাপতি করা হয়েছে এই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলামকে। যেখানে কয়েক হাজার টাকা খরচ করেই বাঁধ দেওয়া যেত, সেখানে এত টাকা খরচ অপব্যয় হিসেবেই দেখছেন এলাকাবাসী। 


অন্য সংবাদ পড়ুন:

সময়সীমার ৩৯ দিন অতিবাহিত, ৮০ ভাগ বাঁধে শুরু হয়নি কাজ


সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এই সড়ক দিয়েই তাহিরপুর উপজেলা সদর থেকে নতুন বাজার হয়ে ট্যাকেরঘাট এলাকায় যাওয়ার রাস্তা। ইসলামপুর গ্রামের সামনের ভেকু মেশিন দিয়ে সড়কের উপরের শক্ত আস্তরণ তুলে আবারও রাখা হচ্ছে। পরে মেশিন দিয়ে চাপা দিয়ে রেখে দেওয়া হচ্ছে। শক্ত পাকাপোক্ত সড়কের উপরের আস্তরণ তোলায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে এই সড়ক দিয়ে চলাচল করা সাধারণ মানুষকে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষক বলেন, ‘প্রতিবছর এই সড়কের যেখানে ভাঙন ধরে সেখানে মাটি দেওয়া হয়। কয়েক হাজার টাকা খরচ করলেই হতো। এ বছর পুরো বস্তি রাস্তাকে ভেকু মেশিন দিয়ে উপরের আস্তরণ তুলে আবারও রাখা হচ্ছে। এতে সরকারের টাকা অপচয় হচ্ছে। সরকারি টাকা ছয়-নয় করার জন্যই এ রকম প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।’

এলাকাবাসী মনে করছেন, এই কাজের মাধ্যমে রাস্তা বড় হচ্ছে। পুরো বর্ষা মৌসুমে সড়কের কিছু কিছু অংশে পানিতে তলিয়ে যায়। এতে চলাচল করতে পারেন না তারা। পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদের চলাচল করার জন্যই এলজিইডির আওতাধীন রাস্তার কাজ করছে। 

খলিশাজুরী গ্রামের বাসিন্দা মাইদুল ইসলাম বলেন, ‘বর্ষায় সড়কের কিছু অংশে পানিতে তলিয়ে যায়। আমরা পায়ে হেঁটে বাজারে যেতে পারি না। এবার প্রথম পানি উন্নয়ন বোর্ড সড়কের কাজ করছে। ঠিকমতো কাজ হলে এবার পুরো বর্ষা পায়ে হেঁটে বাজারে যেতে পারব।’

একই গ্রামের বাসিন্দা মো. আহাদ নুর বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি এটি সড়ক, ফসলরক্ষা বাঁধ নয়। তবে আগে রাস্তা ছিল ছোট। এখন অনেক প্রশস্ত করে হচ্ছে। আমাদের এলাকাবাসীর জন্য ভালো হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমেও আমরা সড়কটি ব্যবহার করতে পারব।’

এ বিষয়ে হাওরের কৃষি ও কৃষক রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্যসচিব চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, ‘সুনামগঞ্জে ফসলরক্ষা বাঁধ অন্য বছরের মতো এ বছরও দেওয়া হচ্ছে। প্রতিবছরই অপ্রয়োজনীয় বাঁধ নিয়ে অনেক প্রতিবাদ হয়েছে। তারপরেও দেখা যাচ্ছে অপ্রয়োজনীয় বাঁধ ঠিকই আছে। তাহিরপুরে এ রকম কয়েকটি বাঁধ হচ্ছে এবার। যেগুলো করার দরকার নেই। ফসল রক্ষার জন্য এই বাঁধগুলো হচ্ছে, তা বলা যায় না বরং পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদের আয়ের আধার হিসেবে যে করছে, তা খতিয়ে দেখা দরকার।’

তাহিরপুর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ উল্লাহ বলেন, ‘সড়কটি আমাদের হলেও কাঁচা হওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড উঁচু করার কাজ করছে। আমরা যখন পাকা করব, তখন যদি উঁচু মনে হয়, নিচু করেই কাজ করব।’

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, ‘এবার গত বছরের থেকে বাঁধের সংখ্যা কমেছে। গেল বছর ছিল ১ হাজার ৬৪টি, এবার কমে ৭৩৫টি বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। তবু বিভিন্ন জায়গা থেকে অপ্রয়োজনীয় বাঁধ নির্মাণ করার অভিযোগ পাচ্ছি। এ বিষয়ে খতিয়ে দেখতে জেলা কমিটি থেকে বিভিন্ন উপজেলায় কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


এএফ/০৭