নিজস্ব প্রতিবেদক
মার্চ ১৮, ২০২৫
০৪:৩২ পূর্বাহ্ন
আপডেট : মার্চ ১৮, ২০২৫
০৪:৩২ পূর্বাহ্ন
গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ঠিক আগের দিন ৪ আগস্ট সিলেটের গোলাপগঞ্জে পুলিশ ও ছাত্রলীগের গুলিতে নিহত হন ৭ জন। তাদের একজন মাদ্রাসা শিক্ষার্থী পাবেল আহমদ কামরুল। তার পিতা অশ্রুভেজা কণ্ঠে বললেন, ‘আমার তিন ছেলের মধ্যে কামরুল কোরআনে হাফিজ হওয়ার পথে ছিল। বেঁচে থাকলে এতদিনে নিশ্চয়ই হাফিজ হয়ে যেত। হয়তো এবারের রমজানে কোনো এক মসজিদে খতমে তারাবি পড়াত। কিন্তু স্বৈরাচারের বুলেট তাকে থামিয়ে দিল। আমরা এখনো তার জন্য কান্না করি।’
শহীদ কামরুলের বাবার মতো বাকি সাত শহীদ পরিবারের সদস্যদের ও আন্দোলনে আহতদের নিয়ে সোমবার (১৭ মার্চ) সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকাদক্ষিণে ব্যতিক্রমী ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। সিলেট জেলা বিএনপি নেতা ফয়সল আহমদ চৌধুরী ব্যতিক্রমী এই ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেন।
এমন আয়োজনে নিজেদের সন্তুষ্টির কথা জানালেন অংশ নেওয়া শহীদ পরিবারের সদস্যরা। এসব শহীদদের নিয়ে স্মৃতিচারণে অন্যরকম এক ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হলো গোলাপগঞ্জে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক শহীদ মিনহাজের বাবা পশ্চিম দত্তরাইল ইউনিয়নের মো. আলাউদ্দিন অনুভূতি জানিয়ে বলেন, ‘আমার চার ছেলের মধ্যে সবচেয়ে সচেতন ছিল মিনহাজ। ওকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিল, অনেক স্বাধ-আহ্লাদ ছিল। কিন্তু স্বৈরাচারের বুলেটে সব ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল। ওর মা এখনো পুত্রশোকে মুহ্যমান। আমি সন্তান হত্যার বিচার চাই।’ দেশ ফ্যাসিস্ট মুক্ত হয়েছে এটাই শান্তনা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সন্তান হারালেও আমাদের একমাত্র শান্তনা, সন্তানের জীবনের বিনিময়ে আমরা একটা ফ্যাসিস্ট মুক্ত দেশ পেয়েছি। একাত্তরের পর আবার স্বাধীন হয়েছি।’
শহীদদের পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন করতে গিয়ে আহত হওয়াদের অনেকে যোগ দেন ইফতার ও দোয়া মাহফিলে। তাদের দুজন গোলাপগঞ্জের কানিশাইলের সফর আলী (৪৫) ও পশ্চিম দত্তরাইলের গাড়িচালক রাজিব আহমদ (২৮)। দুজনেই এখনো শরীরে স্প্রিন্টার বয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের কথায়, ‘শরীরে স্প্রিন্টার এখনো যন্ত্রণা দিচ্ছে। তবে তারচেয়ে ভয়ানক সেই সময়ের বিভীষিকাময় স্মৃতি। এখনো দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে যায়। এতদিন পরেও রক্ত আর গুলির শব্দ রাতে ঘুমাতে দেয় না।’ তারা বলেন, ‘শেষপর্যন্ত স্বৈরাচাররা দেশ ছেড়েছে এটাই গর্বের, সম্মানের।’
গোলাপঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি নোমান উদ্দিন মুরাদের সভাপতিত্বে ও সিলেট জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক আবুল কালাম খোকনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সিলেট-৬ আসনে বিএনপি থেকে মনোনীত সাবেক সংসদ সদস্য প্রার্থী ফয়সল আহমদ চৌধুরী। ব্যতিক্রমী এই্ আয়োজন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘যাদের মহান ত্যাগের কারণে বাংলাদেশ আজ ফ্যাসিস্ট মুক্ত। দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে জগলদল পাথরের মতো জাতীয় বুকে চেপে থাকা স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। আমরা আবার মুক্ত স্বাধীন দেশে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারছি। সেইসব শহীদ ও আহতদের আমাদের প্রতিমুহূর্তে স্মরণ করা উচিত বলে আমি মনে করি। সেই চিন্তা থেকে তাদের সম্মানে এই ইফতার মাহফিল আয়োজন করা হয়েছে।’
এএফ/০৩