নিজস্ব প্রতিবেদক
মে ২০, ২০২৫
০৩:৫৫ অপরাহ্ন
আপডেট : মে ২০, ২০২৫
০৭:৩৫ অপরাহ্ন
ঐতিহাসিক ২০ মে। চা শ্রমিকদের ‘মুল্লুকে চলো’ দিবস আজ। ১৯২১ সালের এই দিনে ব্রিটিশদের অত্যাচার থেকে মুক্ত হতে সিলেট অঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার চা-শ্রমিক নিজেদের জন্মস্থানে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। এসময় চাঁদপুরের মেঘনাঘাটে গুলি চালিয়ে নির্বিচারে হত্যা করা হয় চা শ্রমিকদের। এরপর থেকে চা-শ্রমিকেরা ‘চা-শ্রমিক দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছেন এই দিনটিকে।
তবে বারবার দাবি জানানো এবং অনেক আন্দোলনের পরও ১০৪ বছরেও স্বীকৃতি পায়নি দিবসটি। ঘুচেনি চা শ্রমিকদের বঞ্চনা।
চা শ্রমিক দিবস নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার চানপুর চা বাগানর শ্রমিক নিপেন পাল জানান, আমরা সরকারের কাছে বার বার দাবি জানানোর পরও চা শ্রমিক দিবসটি শতবছরেও স্বীকৃতি পায়নি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদেরকে ভোটের স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। আমরা তার সুযোগ্য কণ্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে দিবসটির স্বীকৃতি চাই। এছাড়াও মজুরী বৃদ্ধি, ভূমির অধিকার, চিকিৎিসা, শিক্ষা ও আবাসানসুবিধাসহ অবহেলিত চা শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে আমরা সমাবেশ করব।
চা শিল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতাব্দীতে চীন ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোথাও চায়ের প্রচলন ছিল না। ১৮৫৪ সালে পরীক্ষামূলকভাবে সিলেটের মালিনীছড়া চা বাগানে চা চাষ শুরু করে ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানি। সে সময় বৃহত্তর সিলেটে চা বাগান তৈরির জন্য ভারতের আসাম, উড়িষ্যা, বিহার, উত্তর প্রদেশসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিকদের নিয়ে আসা হয়।
‘গাছ হিলেগা, রুপিয়া মিলেগা’ গাছ নাড়ালেই টাকা মিলবে এমন প্রলোভনে শ্রমিকরা বাংলাদেশে এলেও তাদের ভুল ভাঙ্গতে বেশি সময় লাগেনি। বিশাল পাহাড় পরিষ্কার করে চা বাগান করতে গিয়ে হিংস্র পশুর কবলে পড়ে কত শ্রমিকের জীবন গেছে তার কোনো হিসেব নেই।
এছাড়া ব্রিটিশদের অত্যাচার তো ছিলই। তাদের অব্যাহত নির্যাতনের প্রতিবাদে তৎকালীন চা শ্রমিক নেতা পন্ডিত গঙ্গাচরণ দীক্ষিত ও পন্ডিত দেওসরন ‘মুল্লুকে চল’ (দেশে চল) আন্দোলনের ডাক দেন।
১৯২১ সালের ২০ মে সিলেট অঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার চা শ্রমিক সিলেট থেকে পায়ে হেটে চাঁদপুর মেঘনা স্টিমার ঘাটে পৌঁছান। তারা জাহাজে চড়ে নিজ দেশে ফিরে যেতে চাইলে ব্রিটিশ গোর্খা সৈনিকরা গুলি চালিয়ে শত শত চা শ্রমিককে হত্যা করে মেঘনা নদীতে ভাসিয়ে দেয়। যারা পালিয়ে এসেছিলেন তাদেরকেও আন্দোলন করার অপরাধে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। চা শ্রমিকদেরকে পড়ানো হয় একটি বিশেষ ট্যাগ। পায়নি তারা ভূমির অধিকার। এরপর থেকেই প্রতি বছর ২০ মে চা শ্রমিক দিবস হিসেবে দিনটি পালন করছেন চা শ্রমিকরা।
এএফ/০৪