তৎকালীন মেয়র, বিভাগীয় কমিশনারসহ যে ১৫ জন আশ্রয় নিয়েছিলেন সিলেট সেনানিবাসে

নিজস্ব প্রতিবেদক


মে ২৩, ২০২৫
০৪:১৭ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মে ২৩, ২০২৫
০৪:১৭ পূর্বাহ্ন



তৎকালীন মেয়র, বিভাগীয় কমিশনারসহ যে ১৫ জন আশ্রয় নিয়েছিলেন সিলেট সেনানিবাসে


ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তীসময়ে সিলেটে সেনানিবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন ১৫ জন। এর মধ্যে ছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র, সংসদ সদস্য, বিভাগীয় কমিশনার ও পুলিশ কমিশনার। গতকাল বৃহস্পতিবার আইএসপিআর প্রকাশিত তালিকা থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

সিলেট সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ১৫ জন হলেন- সিলেট সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, হবিগঞ্জ-৩ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য মো. আবু জাহির, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) তৎকালীন উপাচার্য মো. জামাল উদ্দিন ভূইয়া, সিলেটের তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমেদ সিদ্দিক, সিলেট মহানগর পুলিশের তৎকালীন কমিশনার মো. জাকির হোসাইন খান, অতিরিক্ত উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ, অতিরিক্ত উপ কমিশনার মো. জুবায়েদ হোসেন, এসএমপির ডিসি (ট্রাফিক) মাহফুজুর রহমান, সিকৃবির মো. আলাউদ্দিন আহমেদ, সিকৃবির অতিরিক্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. আব্দুল আওয়াল, সিকৃবির নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. আব্দুর রাকিব, গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম, গোয়াইনঘাট সার্কেল এএসপি সাহিদুর রহমান, এসি (ল্যান্ড) মো. সায়েদুল ইসলাম এবং গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম। এছাড়া হবিগঞ্জ-৪ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন ঢাকা সেনানিবাসে আশ্রয় নেন।

গতকাল ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তীসময়ে সেনানিবাসের ভেতরে প্রাণ রক্ষায় আশ্রয় গ্রহণকারী ব্যক্তিদের বিষয়ে অবস্থান জানিয়েছে সেনাবাহিনী। সে সময়ে শুধু মানবিক দায়বদ্ধতার কারণে আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড থেকে আশ্রয়প্রার্থীদের জীবন রক্ষা করাই মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল বলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সেনাবাহিনীর এ অবস্থান তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, পরিস্থিতি উন্নয়ন সাপেক্ষে আশ্রয় গ্রহণকারীদের বেশির ভাগই এক-দুই দিনের মধ্যে সেনানিবাস ত্যাগ করেন। এর মধ্যে পাঁচজনকে তাঁদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ বা মামলার ভিত্তিতে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে বিগত সরকারের পতনের পর কতিপয় কুচক্রী মহলের তৎপরতায় সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়। ফলে সরকারি দপ্তর, থানাসমূহে হামলা, রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উপর আক্রমণ ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, মব জাস্টিস, চুরি, ডাকাতিসহ বিবিধ বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। এ ধরনের সংবেদনশীল ও নাজুক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে দেশের নাগরিকদের মনে নিরাপত্তাহীনতার জন্ম নেয়। এমতাবস্থায়, ঢাকাসহ দেশের প্রায় সকল সেনানিবাসে প্রাণ রক্ষার্থে কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার নাগরিকগণ আশ্রয় প্রার্থনা করেন। উদ্ভূত আকস্মিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সেনানিবাসে আশ্রয়প্রার্থীদের পরিচয় যাচাই বাছাই করার চাইতে তাদের জীবন রক্ষা করা প্রাধান্য পেয়েছিল। এ প্রেক্ষিতে, ২৪ জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ৫ জন বিচারক, ১৯ জন অসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তা, ৫১৫ জন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাসহ বিবিধ ১২ জন ও ৫১ জন পরিবার পরিজন (স্ত্রী ও শিশু) সহ সর্বমোট ৬২৬ জনকে বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় প্রদান করা হয়েছিল।’

এতে বলা হয়, ‘সেসময়ে শুধু মানবিক দায়বদ্ধতার কারণে আইন বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড থেকে আশ্রয় প্রার্থীদের জীবন রক্ষা করাই ছিল মুখ্য উদ্দেশ্য। পরিস্থিতি উন্নয়ন সাপেক্ষে, আশ্রয় গ্রহণকারীদের বেশিরভাগই ১/২ দিনের মধ্যেই সেনানিবাস ত্যাগ করেন এবং এর মধ্যে ৫ জনকে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ/মামলার ভিত্তিতে, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিকট হস্তান্তর করা হয়।’

এতে আরও বলা হয়, ‘সেনানিবাসে অবস্থানকারী ও আশ্রয় প্রার্থীদের ব্যাপারে গত ১৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে আইএসপিআর আনুষ্ঠানিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় এবং একই দিনে ১৯৩ জন ব্যক্তিবর্গের একটি তালিকা (৪৩২ জন সাধারণ পুলিশ সদস্য ও ১ জন এনএসআই সদস্য ব্যতীত) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়- যা ছিল একটি মীমাংসিত বিষয়। সেনানিবাসে আশ্রয়প্রার্থী এসব ব্যক্তি ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা ও জীবন রক্ষার্থে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সাময়িক আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল।’

আইএসপিরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘তৎকালীন বিরাজমান নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে আশ্রয় প্রার্থীদের জীবন বিপন্ন হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভ্রান্তিকর সংবাদ ছড়িয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার পাশাপাশি জনগণের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে, জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সেনানিবাসের অভ্যন্তরে প্রাণ রক্ষার্থে আশ্রয় গ্রহণকারী ৬২৬ জন ব্যক্তিবর্গের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা (৪৩২ জন সাধারণ পুলিশ সদস্য ও ১ জন এনএসআই সদস্যসহ) এই প্রেস বিজ্ঞপ্তির সাথে সংযুক্ত করা হলো।’

‘এমতাবস্থায় সকলকে এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচার থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি পেশাদারিত্ব, নিষ্ঠা ও আস্থার সাথে জাতির পাশে থাকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছে।’



এএফ/০২