২২২ বছরের ইতিহাসে প্রথমবার হজ বাতিলের শঙ্কা

সিলেট মিরর ডেস্ক


এপ্রিল ০৩, ২০২০
০৮:২৪ অপরাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ০৩, ২০২০
০৮:৩০ অপরাহ্ন



২২২ বছরের ইতিহাসে প্রথমবার হজ বাতিলের শঙ্কা
এই মুহূর্তে কোনো চুক্তি স্বাক্ষর না করার অনুরোধ

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো সৌদি আরবেও ছোবল দিয়েছে মহামারি করোনাভাইরাস। দেশটির পবিত্র দুই নগর মক্কা ও মদিনাতে ২৪ ঘণ্টা কারফিউ জারি করা হয়েছে। পুরো দেশে ঘোষণা করা হয়েছে লকডাউন। এ পরিস্থিতিতে চলতি বছর মুসলমানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় জমায়েত পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে কি-না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। শঙ্কা করা হচ্ছে, এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে ১৭৯৮ সালের পর এ প্রথম বাতিল হতে পারে হজ। যা ২২২ বছর আগের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটাবে।

এদিকে সৌদি কর্মকর্তাদের বরাতে ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা পরিস্থিতির কারণে এ বছর হজ বাতিল হতে পারে। ইসলামের ইতিহাসে অবশ্য হজ বাতিলের ঘটনা আগেও ঘটেছে। তবে আধুনিক ইতিহাসে এটা বিরল ঘটনা। সর্বশেষ ২২২ বছর আগে ১৭৯৮ সালে হজ বাতিল করা হয়েছিল।

সৌদি কর্তৃপক্ষ হজযাত্রীদের জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছে। এ থেকে অনুমান করা হচ্ছে, চলতি বছর হজ অনুষ্ঠিত নাও হতে পারে। জুলাই মাসের শেষের দিকে শুরু হওয়ার কথা এ বছরের হজের আনুষ্ঠানিকতা। তবে হজের নিবন্ধনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম এখন বন্ধ রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে মুসলিমদের হজে অংশগ্রহণের বিষয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

মক্কা ও মদিনা মুসলিমদের কাছে সবচেয়ে পবিত্র দুটি শহর, যা হজযাত্রার কেন্দ্রবিন্দু। করোনার কারণে দুটি শহরই গত এক মাস ধরে দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ রয়েছে। ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লু মহামারির সময়ও এই দুটি শহর বন্ধ করা হয়নি। সৌদি কর্মকর্তারা বিদেশের জন্য দেশের সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছে এবং আংশিকভাবে হজের আগে এই ভাইরাসটি নির্মূল করার আশায় মক্কা ও মদিনার অভ্যন্তরে চলাচলে ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ বিষয়ক মন্ত্রী মুহাম্মদ সালেহ বিন তাহের বান্তেন রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেছেন, ‘সৌদি আরব সমস্ত মুসলিম ও নাগরিকের সুরক্ষার জন্য প্রস্তুত। এ কারণেই আমরা পরিষ্কার ধারণা না পাওয়া পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে হজের বিষয়ে কোনো চুক্তি স্বাক্ষর না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিশ্বের সমস্ত মুসলিমদের কাছে এই মুহূর্তে কোনো চুক্তি স্বাক্ষর না করার জন্য অনুরোধ করেছি।’

মন্ত্রী বলেন, ‘হজের প্রস্তুতি নিয়ে এবার তাড়াহুড়ো না করতে মুসলিম দেশগুলোকে অনুরোধ করা হয়েছে। মহামারির গতিপ্রকৃতির ওপর নির্ভর করবে সিদ্ধান্ত। বেশি গুরুত্ব পাবে জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি।’

কিংস কলেজ লন্ডনের ওয়ার স্ট্যাডিজ বিভাগের প্রভাষক সিরাজ মাহের বলেন, ‘হজ বাতিল হওয়ার শঙ্কা নিয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষ মুসলিমদের মনস্তাত্ত্বিকভাবে প্রস্তুত করছে। তারা অতীত থেকে ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত তুলে ধরতে শুরু করেছে, যেখানে বিপর্যয় ও যুদ্ধসহ বিভিন্ন কারণে হজকে স্থগিত করতে হয়েছিল। আমি মনে করি, এটি মানুষকে আশ্বস্ত করার বিস্তৃত প্রয়াসের একটি অংশ। যদি হজ সত্যিই বাতিল হয় তবে সেটা কোনো নজিরবিহীন ঘটনা হবে না।’

উল্লেখ্য, ভাইরাসটি ছোঁয়াচে হওয়ায় এর সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সব ধরনের জনসমাগম এড়িয়ে চলতে পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এছাড়া জনসমাগম এড়িয়ে চলতে বিশ্বব্যাপী অনেক দেশে লকডাউন ও কারফিউ জারি করা হয়েছে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে সৌদি আরবে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৮৮৫ জন আক্রান্ত হয়েছে। আর প্রাণ গেছে ২১ জনের। 

 

এএফ/০৬