মে মাসে করোনার টিকা উৎপাদন শুরু ভারতে

সিলেট মিরর ডেস্ক


এপ্রিল ২৮, ২০২০
০৫:০৫ পূর্বাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ২৮, ২০২০
০৫:০৫ পূর্বাহ্ন



মে মাসে করোনার টিকা উৎপাদন শুরু ভারতে

এরইমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের টিকা উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল টিকা উদ্ভাবনে অনেকখানি এগিয়ে গেছেন। বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) দুইজন স্বেচ্ছাসেবীর দেহে এ টিকা প্রয়োগ করা হয়। গবেষণার অংশ হিসেবে পর্যায়ক্রমে আট শতাধিক মানুষের দেহে এ পরীক্ষা চালানো হবে। বিজ্ঞানীদের আশা, ‘চূড়ান্ত পরীক্ষা’ সফল হলে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই মিলে যাবে প্রতিষেধক। তবে মানবদেহে পরীক্ষার ফলাফল জানার আগেই ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট মে মাসেই টিকা উৎপাদন শুরু করে দিতে যাচ্ছে।  

জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের পুনেভিত্তিক সিরাম ইনস্টিটিউট সিদ্ধান্ত নিয়েছে অক্সফোর্ডের টিকা পরীক্ষা সফল হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে না। তার আগেই প্রস্তুতি সেরে ফেলবে। অক্সফোর্ডের যে কনসোর্টিয়াম টিকা উদ্ভাবন করছে তাদের সঙ্গে সিরামের চুক্তি হয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ভারতে এখন ৬টি প্রতিষ্ঠান কোভিড-১৯ ভাইরাস সংক্রমণের টিকা তৈরির জন্য কাজ করছে। এর একটি হলো সিরাম ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়া। এই কোম্পানিটি ৫৩ বছরের পুরনো, তারা প্রতি বছর দেড়শ কোটি টিকা বানায়। ভারতের পুনেতে তাদের প্রধান কারখানা, তবে ছোট আরও দুটো প্ল্যান্ট রয়েছে নেদারল্যান্ডস এবং চেক প্রজাতন্ত্রে।

সিরাম ইনস্টিটিউটের সিইও আদার পুনাওয়ালা বলেন, ‘আমরা আর অপেক্ষা করব না। আমরা মে মাস থেকে শ'খানেক রোগীর ওপর টিকা প্রয়োগ করব। পরীক্ষা সফল হলে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে ভ্যাকসিন বাজারে ছেড়ে দেওয়া হবে।’

কত সংখ্যক টিকা উৎপাদন হবে এবং দাম কত হবে তাও আগাম জানিয়েছেন পুনাওয়ালা। তিনি বলেন, ‘ভারতে টিকার দাম হবে এক হাজার রুপি। এর মধ্যে আমাদের খরচও ধরা আছে। লোকজন যাতে টিকা কিনতে পারেন, সেটিও মাথায় রাখা হয়েছে। তবে বিদেশে দাম বেশি হতে পারে। এমএমআর টিকা ভারতে যে দামে পাওয়া যায়, সে তুলনায় যুক্তরাজ্যে দাম দশগুণ বেশি।’

ধারণা করা হচ্ছে, মে মাস থেকে উৎপাদনের প্রক্রিয়া শুরু হলেও করোনাভাইরাসের টিকা বাজারে আসতে সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর হয়ে যাবে। 

পুনাওয়ালা স্পষ্টভাবে বলেন, ‘আমরা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করব না। সেপ্টেম্বরে টিকার যাবতীয় প্রয়োগ সফল হওয়ার পর উৎপাদন শুরু করলে দেরি হয়ে যাবে। আমরা নিজেদের ঝুঁকিতে ও খরচে আগে থেকেই পুরো প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি। যাতে পরীক্ষা সফল হয়ে গেলেই সেপ্টেম্বর থেকে প্রচুর পরিমাণে টিকা বাজারে ছাড়া যায়।

প্রথমে ৪০ থেকে ৫০ লাখ করে টিকা উৎপাদন করতে চায় সিরাম ইনস্টিটিউট। ছয় মাস পরে সংখ্যাটা এক কোটিতে পৌঁছে যাবে। পরীক্ষা সফল হলে বিশ্বে যাতে টিকার অভাব না হয়, তা তারা দেখবেন। পুনের কারখানাতেই টিকা তৈরি হবে। সে জন্য অন্য সব টিকার উৎপাদন থামিয়ে শুধু করোনার টিকাই তৈরি হবে। এজন্য ১৫ কোটি ডলার বিনিয়োগও করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র মিলে করোনার টিকা উদ্ভাবনের চেষ্টা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয় ও ফ্লুজেন নামে একটি সংস্থার সঙ্গে হায়দরাবাদের ভারত বায়োটেকের চুক্তি হয়েছে। পরীক্ষা সফল হলে তারা বিশ্বজুড়ে ৩০ কোটি টিকা সরবরাহ করবে।

তা ছাড়া ভারত হচ্ছে জেনেরিক ওষুধ এবং টিকা তৈরির ক্ষেত্রে পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ উৎপাদনকারী। পোলিও, মেনিনজাইটিস, নিউমোনিয়া, রোটাভাইরাস, বিসিজি, হাম, মাম্পস, রুবেলা- এরকম অনেক ছোটবড় রোগের টিকার বড় অংশ তৈরি হয় ভারতে।

অবশ্য বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, খুব শিগগিরই বাজারে করোনাভাইরাসের টিকা চলে আসবে এটা আশা করা ঠিক হবে না। তারা বলছেন, টিকা তৈরির কাজ যে সফল হবে এমন কোনও গ্যারান্টি নেই।

বিএ-১৮