করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ লাখ ছাড়াল

সিলেট মিরর ডেস্ক


এপ্রিল ২৮, ২০২০
০৭:২১ পূর্বাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ২৮, ২০২০
০৭:২৯ পূর্বাহ্ন



করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ লাখ ছাড়াল
মৃত্যু ২১ লাখ

 

বিশ্বে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ লাখ ছড়িয়েছে। কভিড-১৯ এর সংক্রমণ শুরুর পর প্রথম ১০ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলেন চার মাসে, তার পরের ১০ লাখ সংক্রমিত হতে সময় লাগে মাত্র দুই সপ্তাহ। আর তার পরের ১০ লাখ আক্রান্ত হয়েছেন মাত্র ১২ দিনে। 

সোমবার (২৭ মার্চ) রাতে দেওয়া জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির হালনাগাদ তথ্য বলছে, বিশ্বের ৩০ লাখের বেশি মানুষের দেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। আর এর মধ্যে মৃত্যু ঘটেছে ২১ লাখ ৮ হাজার জনের।

তবে এই ৩০ লাখই আক্রান্ত এমন ভাবতে রাজি নন বিশেষজ্ঞরা; তারা বলছেন, মৃদু সংক্রমণে লক্ষণ প্রকাশিত হয়নি, এমন অনেকেই রয়ে গেছে পরীক্ষার আড়ালে। ফলে সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা ৩০ লাখের অনেক বেশিই হবে।

এই মহামারী সামলাতে বেসামাল বিশ্ববাসীর জন্য এই দুটি হতাশার তথ্যের সঙ্গে ইতিবাচক একটি তথ্যও এসেছে। তা হল আক্রান্ত ৩০ লাখের মধ্যে ৮ লাখ ৭৮ হাজারের বেশি মানুষ ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। অর্থাৎ আক্রান্তদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সেরে উঠেছেন।

গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে নতুন ধরনের এই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মানবদেহে ধরা পড়ে; খুব দ্রুত বাড়তে থাকে আক্রান্তের সংখ্যা। নতুন ভাইরাসের নামকরণের পর এতে সৃষ্ট রোগের নাম দেওয়া হয় কোভিড-১৯।

চীনে প্রথম মৃত্যুর দুদিন পর গত ১৩ জানুয়ারি থাইল্যান্ডে প্রথম রোগী ধরা পড়ার পর জানা গেল, রাষ্ট্রীয় সীমানা পেরিয়ে গেছে এই ভাইরাস।

তারপর হু হু করে বাড়তে থাকে আক্রান্তের সংখ্যা, দেড় মাসের মধ্যে এন্টার্কটিকা বাদে সব মহাদেশেই ধরা পড়ে রোগী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তখন এই পরিস্থিতিকে মহামারী আখ্যায়িত করে।

চীন সামলে উঠতে পারলেও পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠে ইউরোপে, স্পেন ও ইতালি রোগ নিয়ন্ত্রণ ব্যর্থ হলে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। গত ২ এপ্রিল আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়ায়। 

ইউরোপ বিপর্যস্ত হওয়ার পর করোনাভাইরাস কাবু এখন যুক্তরাষ্ট্র; কয়েক দিনের ব্যবধানেই কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত কিংবা মৃত্যু দুই সংখ্যাই যুক্তরাষ্ট্রকে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের কাতারে নিয়ে যায়।

আক্রান্তের সংখ্যায় তার পরই রয়েছে স্পেন। দেশটিতে ২ লাখ ২৬ হাজার আক্রান্তের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৩ হাজার জনের।

ইতালি আক্রান্তের সংখ্যায় স্পেনের নিচে থাকলেও সেখানে মৃত্যু ঘটেছে বেশি। ইতালিতে প্রায় দুই লাখ আক্রান্তের মধ্যে মৃতের সংখ্যা ২৬ হাজার ৯৭৭ জন। ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও তুরস্কেও আক্রান্তের সংখ্যা লাখের বেশি।

ফ্রান্সে ১ লাখ ৬২ হাজার আক্রান্তের মধ্যে মারা গেছে ২২ হাজার জন। যুক্তরাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৫৪ হাজার, মারা গেছে ২০ হাজারের বেশি।

জার্মানিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৫৮ হাজার হলেও মৃত্যু তুলনামূলক কম, ৫ হাজার ৯৮৫ জন।

তুরস্কেও ১ লাখ ১০ হাজার আক্রান্ত হলেও মারা গেছে ২ হাজার ৮০০ জন।

আক্রান্তের সংখ্যায় চীনের (৮৩৯১২) উপরে আছে রাশিয়া (৮৭১৪৭) ও ইরান (৯১৪৭২)।

দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে ভারতে, এই সংখ্যা এখন ২৮ হাজারের বেশি। এর মধ্যে মারা গেছে ৮৮৬ জন।

পাকিস্তানে প্রায় ১৪ হাজার আক্রান্তের মধ্যে মারা গেছে ২৯২ জন।

বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছেছে, মারা গেছে ১৫২ জন।

প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিস্তার রোধে বিভিন্ন দেশ লকডাউনে যাওয়ায় ঘরবন্দি হয়ে পড়ে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ।

তবে পরিস্থিতির উন্নতির আভাসও দেখা দেওয়ায় স্পেন, জার্মানিসহ বেশ কয়েকটি দেশ বিধিনিষেধ শিথিল করেছে। ইতালিও সেই পথে যাচ্ছে।

তবে যুক্তরাজ্য এখনই লকডাউন তুলছে না জানিয়েছেন কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।

এই পর্যন্ত যে পৌনে ৯ লাখ রোগী করোনাভাইরাস মুক্ত হয়েছেন, তার মধ্যে স্পেনেই সবচেয়ে বেশি। দেশটির ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি রোগী ইতোমধ্যে সেরে উঠেছেন।

আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হলেও সুস্থ হওয়ার দিক থেকে নাটকীয় সাফল্য দেখিয়েছে জার্মানি। দেশটিকে করোনাভাইরাস মুক্তের সংখ্যা ১ লাখ ১৪ হাজার ৫০০।

সবচেয়ে বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্রে ১ লাখ ৭ হাজার রোগী ইতোমধ্যে সেরে উঠেছেন। চীনে সেরে ওঠা রোগীর সংখ্যা ৭৮ হাজার ৩০৬ জন।

ইরানে ৭০ হাজার রোগী করোনাভাইরাসমুক্ত হয়েছেন। ইতালিতে সেরে ওঠা রোগীর সংখ্যা ৬৬ হাজার, ফ্রান্সে ৪৫ হাজার।

আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে বেলজিয়ামে। দেশটিতে আক্রান্ত ৪৬ হাজারের মধ্যে ৭ হাজারেরই মৃত্যু ঘটেছে। মৃত্যুর হার ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ।

মৃত্যুর হারে তার পরে রয়েছে ফ্রান্স (১৪.১), ইতালি (১৩.৫), যুক্তরাজ্য (১৩.৫)।

আক্রান্ত ও মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে শীর্ষে রইলেও মৃত্যুর হার সেখানে তুলনামূলক কম, ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি ১০০ আক্রান্তের মধ্যে প্রায় ৬ জনের মৃত্যু ঘটেছে সেখানে।

বিএ-০১