নিজস্ব প্রতিবেদক
মে ১৩, ২০২০
০৯:১৫ অপরাহ্ন
আপডেট : মে ১৩, ২০২০
১০:৪২ অপরাহ্ন
করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দিনদিন বাড়লেও সিলেটে আতঙ্ক যেন কমছে! নগরের রাস্তাঘাটে যানবাহন ও মানুষের অবাধ চলাচল দেখলে অন্তত তাই মনে হবে। গত মার্চে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ও সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর মানুষ ঘরবন্দি হয়ে পড়েন। চিরচেনা ব্যস্ত স্থানগুলো হয়ে পড়ে কেমন নিস্তব্ধ, অচেনা। ফাঁকা হয়ে যায় রাস্তাঘাট। কিন্তু দিন যতো গড়াচ্ছে রাস্তায় যানবাহন এবং মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। প্রশাসন থেকে বারবার ঘরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হলেও মানুষ তাদের পরামর্শকে পাত্তাই দিচ্ছেন না। তারা ভয় করছেন না করোনা ভাইরাসকেও!
গত এপ্রিলে যানবাহন ও মানুষ চলাচল কিছুটা বাড়লেও সেটা ছিল হাতেগোনার মতো। তবে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহের পর সিলেট নগরের রাস্তাঘাটে মানুষ চলাচল ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। গতকাল বুধবার (১২ মে) আরও বেড়েছে। নগরের রাস্তায় অবাধে যানবাহন চলতে দেখা গেছে। ঈদকে কেন্দ্র করে খুলে দেওয়া হয়েছে হাসান মার্কেট। আশপাশের কয়েকটি মার্কেটও খোলা হয়েছে। খোলা রয়েছে আম্বরখানা ও জিন্দাবাজার এলাকার কয়েকটি মার্কেটও। এছাড়া আরও কয়েক জায়গায় খোলা হয়েছিল দোকানপাট। এসব স্থানে কেনাকাটার জন্য নামে ক্রেতাদের ঢল। সবচেয়ে বেশি ভিড় লক্ষ্য করা গেছে হাসান মার্কেটে।
গতকাল সবজি বাজারেও ছিল মানুষের ভিড়। সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি যেন বেমালুম ভুলে গেছেন তারা। চিকিৎসক ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে কাজ চলছে। কিন্তু নিজে সচেতন না হলে কাউকে জোর করে সচেতন করা যায় না বলে জানিয়েছেন তারা।
আজ বুধবার (১৩ মে) সিলেটের বন্দরবাজার এলাকায় ছিল যানবাহনের দীর্ঘ সারি। জিন্দাবাজার ও চৌহাট্টাসহ অন্যান পয়েন্টেও দেখা গেছে যানবাহন জড়ো হতে। নগরের বন্দরবাজার এলাকার হাসান মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আয়-রোজগার নেই। জমানো টাকাও শেষ হয়ে গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে যেহেতু মার্কেট খোলা রাখার নির্দেশনা আছে, তাই আমরা মার্কেট খোলা রেখেছি। তাছাড়া ক্রেতারাও আসছেন ঈদ উপলক্ষে কেনাকাটা করতে।’
হাসান মার্কেটে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন অনেকেই। জেরিন সুলতানা তাদেরই একজন। পছন্দের কাপড় কিনতে কয়েকটি দোকান ঘুরেছেন। অন্য ক্রেতাদের থেকে সামাজিক দূরত্ব রাখার ক্ষেত্রেও ছিল না কোনো খেয়াল। কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকলেও স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে বিশেষ চিন্তিত ছিলেন না তিনি।
জানতে চাইলে জেরিন সুলতানা বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে আমার জন্য ও সন্তানদের জন্য কেনাকাটা করতে এসেছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চলছি। তবে অন্যজন যদি সেটা না মানে তবে কিছু করার থাকে না।’
গতকাল নগরের চৌকিদেখি ও আম্বরখানা সবজি বাজার ঘুরে দেখা গেছে মানুষের ভিড়। ক্রেতাদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব মানার বিষয়টি খুব একটা চোখে পড়েনি। ভিড়ের মধ্যে এভাবে বাজারে জমায়েত হওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে কিনা জানতে চাইলে ক্রেতারা জানান, সকালে সবজি টাটকা থাকে। তাই সকালে বাজার করতে আসেন তারা।
বাইরে আসা নিরাপদ নয় জেনেও প্রয়োজনের তাগিদে বাধ্য হয়ে আসতে হচ্ছে জানিয়ে চৌকিদেখি এলাকার বাসিন্দা ইমতিয়াজ হোসাইন বলেন, ‘ঘরের প্রয়োজনীয় সবজি ও অন্যান্য বাজারের জন্য বাইরে যেতেই হচ্ছে। চেষ্টা করি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার। এই সামাজিক দূরত্ব মানে কী, এটা যেমন অনেকে বুঝতে পারছেন না। তেমনি এর প্রয়োজনীয়তাকে অনেকেই বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তাই বাজার করতে হচ্ছে ভিড়ের মধ্যেই।’
এদিকে, নগরের বিভিন্ন সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ডেও গাড়ির সারি লক্ষ্য করা গেছে। প্রয়োজনের তাগিদেই তারা বাইরে বের হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন যানবাহনের চালকেরা। নগরের আম্বরখানা-বিমানবন্দর রুটের সিএনজি অটোরিকশা চালক রুবেল আহমদ বলেন, ‘গাড়ি না চালালে সংসারের খরচ জোগানো অসম্ভব হয়ে পড়বে। ঘরে ছোট বাচ্চা আছে, তার জন্য দুধ কিনে নিয়ে যাওয়া, পরিবারের খাবার জোটানোর জন্য ঝুঁকি নিয়ে হলেও গাড়ি চালাতে হচ্ছে।’
এ বিষয়ে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় সিলেট মিররকে বলেন, ‘সরকার স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে। তাই বাইরে না এসে ঘরে থাকাটাই নিরাপদ। এখনও যদি আমরা সচেতন না হই তবে করোনাভাইরাস আরও প্রকট আকার ধারণ করবে।’
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আবুল কালাম সিলেট মিররকে বলেন, ‘আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মার্কেট যেগুলো খুলেছে সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কি না এ বিষয়ে নজর রাখা হচ্ছে। তাছাড়া মহানগর পুলিশকেও এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া আছে। তারাও নজর রাখছেন। তবে দিনশেষে সচেতনতাটা নিজের কাছেই। মানুষ নিজেরা সচেতন না হলে সংক্রমণের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হবে না।’
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মো. জেদান আল মুসা সিলেট মিররকে বলেন, ‘যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে সকল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। বাইরে টহলরত পুলিশ সদস্যদেরও এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া আছে। সবাই যাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলেন আমরা সেদিকে নজরে রাখছি। তবে নিজে সচেতন না হলে জোর করে কাউকে সচেতন করা যায় না। তবু আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’
আরসি-০১/বিএ-০৩